রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ
“সুন্দরবনের ক্ষতি নিয়ে সকল উদ্বেগ ও প্রতিবাদকে অবজ্ঞা করে যেকোন মূল্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর আকাঙ্খার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনকে বিতর্কিত ও কালিমালিপ্ত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেকেই খেলো করেছেন। তিনি একপেশে তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাঁর বক্তব্য মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। জনগণের সমর্থনে গড়ে ওঠা ন্যায্য ও যৌক্তিক এই আন্দোলন আগামীতে আরো জোরদার হবে এবং সকল জবরদস্তি-অপপ্রচার-ক্ষমতার দম্ভকে চূর্ণ করে সুন্দরবনধ্বংসী রামপাল প্রকল্প বাতিলে সরকারকে বাধ্য করবে।” রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এক বিক্ষোভ সমাবেশে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। মোর্চার পক্ষ থেকে ৩১ আগস্ট বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মোর্চার নেতৃবৃন্দ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হেসেন নান্নু, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাসদ(মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় নেতা মহিনউদ্দিন লিটন প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হননি, হলি আর্টিজানের খুনী জঙ্গীদের সাথে উদ্দেশ্যের মিল খুঁজে পেয়েছেন। এভাবে তিনি এই আন্দোলনের মধ্যে জনস্বার্থের প্রশ্নটিকে আড়াল করার অপপ্রয়াস করেছেন। প্রশ্ন হলো — যে বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে, তা কি উন্নয়ন কর্মকান্ড, না কি প্রকৃতি ধ্বংসের প্রকল্প? ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে শেখ হাসিনা যখন ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলেন, তখন কি তিনি উন্নয়নের বিরোধিতা করেছিলেন? অথবা ১৯৮৮ সালে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ সরকার যখন হরিপুর তেলক্ষেত্র ভুয়া সিমিটার কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার চুক্তি করেছিল, তখন শেখ হাসিনাসহ এর বিরোধীরা কি তেল উত্তোলনের বিরোধিতা করেছিলেন, না কি উন্নয়নের নামে লুন্ঠনের প্রতিবাদ করেছিলেন?”
তাঁরা আরো বলেন, পৃথিবীর যেকোন বন আর সুন্দরবন এক নয়। সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। সবাই জানেন, জোয়ার-ভাটার লোনা ও মিঠা পানির ওপর নির্ভরশীল এ ম্যানগ্রোভ বন অত্যন্ত সংবেদনশীল। আর একথা বিজ্ঞানীমহলে স্বীকৃত — যত উন্নত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হোক্ তা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে সৃষ্ট বায়ু, পানি ও মাটি দূষণকে পুরোপুরি রোধ করতে পারে না। এজন্যই আমেরিকার মত উন্নত প্রযুক্তির দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপরই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, “আন্দোলনকারীদের অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য সম্ভবতঃ তাঁর নিজের দল পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে উৎসারিত। ন্যায়সঙ্গত লড়াইতে যখন মানুষ নামে, তখন টাকার লোভে সে চলে না, বিবেকের তাগদেই মানুষ আসে, দায়িত্ব নেয়।”। বামপন্থীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, বামপন্থীদের শক্তি সীমিত হতে পারে, কিন্তু তাদের গড়ে তোলা এ আন্দোলন যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবিকে প্রতিফলিত করছে — তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। না হলে প্রধানমন্ত্রীর এ সংবাদ সম্মেলন করার প্রয়োজন হতো না। ক্ষুদ্র শক্তি হলেও বামপন্থীদের অবস্থান জনস্বার্থের পক্ষে, আর বিরাট শক্তি ও ঐতিহ্য নিয়েও আওয়ামী লীগের অবস্থান আজ জনগণের আকাঙ্খার বিরুদ্ধে। ফলে, কেবল সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে ন্যায্যতা নির্ধারিত হয় না।
সমাবেশ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায়ের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলা হয়, দেশে কতটা অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে তা এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়। উল্লেখ্য রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসকে ভিত্তি করে গত ২৭ আগস্ট দীলিপ রায়কে ক্যাম্পাস থেকে গ্রেফতার করা হয়।