আন্তঃনদী সংযোগ মহাপরিকল্পনা অনুসারে ভারতের ছোট-বড় ৩৮টি নদীকে ৩০টি সংযোগকারী খালের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। এর আওতায় আন্তর্জাতিক নদী ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা থেকে পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে খরাপ্রবণ এলাকা গুজরাট, হরিয়ানা, রাজস্থান, তামিলনাড়ুতে। মানস ও সংকোশ হচ্ছে ব্রহ্মপুত্রের দুটি উপনদী; যার পানি সরিযে নেওয়ার অর্থ হবে ব্রহ্মপুত্রে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া। বাংলাদেশে মোট পানি প্রবাহের ৬৫-৬৭ ভাগ প্রবাহিত হয় ব্রহ্মপুত্র দিয়ে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহ কমে গেলে কৃষি বিপর্যস্থ হবে। নদী সমূহের নাব্যতা হ্রাস পাবে, বন্যার প্রকোপ বাড়বে। সমুদ্রের পানি উপরের দিকে উঠে লবণাক্ততা বাড়াবে। এর ফলে হ্রাস পাবে জমির উর্বরতা, আর্সেনিক ঝুঁকিও আরও বাড়বে। সার্বিকভাবে ধ্বংস হবে জীব বৈচিত্র্য, পরিবেশ হয়ে পড়বে ক্রমশ ভারসাম্যহীণ।
ভারত কর্তৃক আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাংলাদেশকে মরুভূমি করার চক্রান্তের প্রতিবাদে বাসদ (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে ২- ৫ অক্টোবর ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডমার্চের ৩য় দিনে রংপুরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
৪ অক্টোবর বিকেল ৫ টায় বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলা শাখার আয়োজনে স্থানীয় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, মানস নন্দী, ওবায়দুল্ল্যা মুসা, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, বর্ধিত ফোরামের সদস্য আ.ক.ম জহিরুল ইসলাম, আহসানুল হাবীব সাঈদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য পলাশ কান্তি নাগ।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশের অধিকাংশ নদী আজ মৃত প্রায়। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা ও পদ্মা অববাহিকায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। বন্ধুত্বের কথা বলে ভারত অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করেছে। দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অর্থনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্ত ক্ষেত্রগুলোতে ভারত আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। অথচ পানির ন্যায্য অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সরকার যথার্থ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারেনি। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে দেশ মহাবিপর্যয়ের দিকে অগ্রসর হলেও নির্বিকার।
নেতৃবৃন্দ, ভারত কৃর্তক নদীর পানি প্রত্যাহার ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। ২ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু হওয়া রোডমার্চ ৩য় দিনে গাইবান্ধার দাড়িয়াপুর, ধর্মপুর, শোভাগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ হয়ে রংপুরে এই সমাবেশে মিলিত হয়। আজ ৫ অক্টোবর সকাল ১০ টায় রোডমার্চ রংপুর থেকে কুড়িগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করবে। রোডমার্চ রংপুর নগরীতে প্রবেশ করলে রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষ অভিনন্দন জানায়।