Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - নভেম্বর ২০১৬ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে রোডমার্চ

ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে রোডমার্চ

 

pic_1-copy

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহার, বাংলাদেশ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং ভারতের আগ্রাসী পানি নীতির বিরুদ্ধে ২-৫ অক্টোবর ঢাকা-কুড়িগ্রাম রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২ অক্টোবর সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক, দৈনিক সমকালের সহ-সম্পাদক এবং নদী রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক শেখ রোকন, ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মজহারুল ইসলাম বাবলা, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুজ্জামান সাকন।

কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদী দিয়ে গঠিত। ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রকৃতি এবং তার সাথে যুক্ত দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নদী প্রবাহের উপর। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকার নদী নিয়ে, দেশের পানি সম্পদ নিয়ে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের আগ্রাসী পানি নীতি বহাল রেখেছে স্বাধীনতা পূর্ব এবং তার পরবর্তীতে। ভারত থেকে আসা সবগুলো নদীতেই তারা বাঁধ দিয়েছে। এর আগে পরীক্ষামূলক চালুর কথা বলে ফারাক্কা নদীতে তারা বাঁধ দিয়েছিল। ফারাক্কা নদীতে দেয়া বাঁধের কুফল আজও বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করছে। এ বছরে উত্তরবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে এই সর্বনাশা বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে। এবার ভারত সরকার তাদের দেশের পুঁজিপতিদের স্বার্থে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পানির যোগানদাতা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা যদি তারা সম্পন্ন করতে পারে তবে তা আমাদের দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। উত্তরবঙ্গ ক্রমাগত মরুকরণের দিকে যাবে। আমাদের কৃষিজমি-প্রকৃতি-প্রাণ ধ্বংস হয়ে যাবে। বন্ধুত্বের কথা বলে ভারত অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সমস্ত ক্ষেত্রগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অথচ পানিসম্পদের ন্যায্য অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সরকার ন্যূনতম দায়িত্ববোধেরও পরিচয় দিতে পারেনি। যেখানে খোদ ভারতেরই বড় বড় পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছে অথচ বাংলাদেশের সরকার নীরব ও নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে মহাজোট সরকার ভারতের সাথে যুক্তিসঙ্গত পানি বন্টন নীতিমালার ভিত্তিতে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারছে না। তাই দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে এই সর্বনাশা পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

14480508_10207348795701432_5476826639917974003_o

ম. ইনামুল হক বলেন, ‘ভারত যে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করেছে তা বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থবিরোধী। একইসাথে এটি ভারতেরও ৯৯ শতাংশ মানুষের স্বার্থকে ক্ষুণœ করবে। নদীকে এভাবে শাসন করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। কেননা প্রকৃতিও প্রতিশোধ নেয়।’

শেখ রোকন বলেন, ‘নদী নিয়ে ভারতের আগ্রাসী নীতি এবং বাংলাদেশ সরকারের অবহেলার প্রতিবাদে যে আন্দোলন এই রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তা আগামী দিনে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ঘটাতে পারে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ভারত সরকার কেবল পরিকল্পনাই করেনি, তা সম্পাদনের প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে। এই প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয় তবে তা বাংলাদেশের জন্য ডেকে আনবে ভয়াবহ পরিণতি। সময় থাকতেই এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ করা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। এই আন্দোলন হলো সর্বব্যাপক, তাই দেশপ্রেমিক-প্রগতিশীল সকল মানুষ ও সংগঠনকে এই লড়াইয়ে শামিল হতে হবে।’

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান পর্যন্ত যাবার পরিকল্পনা থাকলেও প্রতিকূল প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে হাইকোর্টের সামনে কদম ফোয়ারার এসে শেষ হয়। এরপর রোডমার্চের নেতা-কর্মীরা বাসযোগে যাত্রা শুরু করেন। পরে বিকেলে বগুড়ার শেরপুরে পথসভা শেষ করে বগুড়ার সাতমাথায় সমাবেশে মিলিত হয়। জেলা সমন্বয়ক শামসুল আলম দুলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য রঞ্জন দে’র পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ওবায়দুল্লাহ মুসা, আ.ক.ম জহিরুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান সাকন।

পরদিন সকাল ১০টায় রোডমার্চ গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পথে মহাস্থানগড়, মোকামতলা, গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়িতে পথসভা শেষে সন্ধ্যায় গাইবান্ধা পৌর শহীদমিনার চত্বরে বিকেল ৫টায় জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন বাসদ (মাকর্সবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, মানস নন্দী, ওবায়দুল্লাহ মুসা, মনজুর আলম মিঠু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা প্রমুখ।

14589746_10207390623747107_749405178648418728_o-copy

গাইবান্ধায় রাত্রিযাপন শেষে পরদিন সকালে আবার রোডমার্চ যাত্রা শুরু করে। দাড়িয়াপুর, ধর্মপুর,  শোভাগঞ্জ ও সুন্দরগঞ্জে পথসভা করে রংপুর পায়রা চত্বরে বিকেল ৫টায় জনসভায় মিলিত হয়। এখানে দলের জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, মানস নন্দী, ওবায়দুল্লাহ মুসা, ফখ্রুদ্দিন কবির আতিক, আ.ক.ম জহিরুল ইসলাম, আহসানুল হাবীব সাঈদ প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের রংপুর জেলা কমিটির সদস্য পলাশ কান্তি নাগ।

৫ অক্টোবর রোডমার্চের সমাপনী দিন। এদিন সকাল ১০টায় রোডমার্চ তার গন্তব্যস্থল কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। সাতমাথা, কাউনিয়া, তিস্তা, সিংগের ডাবরি ও রাজারহাটে পথসভা শেষ করে রোডমার্চ কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে। শহরের কলেজ মোড় থেকে শুরু করে শহীদ মিনার হয়ে জিয়া বাজার, দাদামোড় ঘুুরে পুনরায় শহীদ মিনার এসে বিকাল সাড়ে ৪টায় সমাপনী সমাবেশে মিলিত হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) কুড়িগ্রাম জেলা শাখার নেতা মহিরউদ্দিন মহিরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, মানস নন্দী, সাইফুজ্জামান সাকন, গাইবান্ধা জেলা শাখার সমন্বয়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা। সমাবেশ পরিচালনা করেন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার নেতা আব্দুর রাজ্জাক।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এদেশের মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী তাদের সেই দায়িত্বে অবহেলা করে আসছে। বর্তমান সরকার ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে জিগির তুলছে অথচ এদেশের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে না। বরং সা¤্রাজ্যবাদী ভারত রাষ্ট্রের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তাই দেশের স্বার্থ এবং মানুষকে রক্ষার জন্য জনগণেরই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উল্লেখ্য, রোডমার্চটি গত ২ অক্টোবর ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৫ অক্টোবর কুড়িগ্রামে এসে সমাপ্ত হয়। রোডমার্চে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের গাইবান্ধা জেলার একটি গানের দল আন্তঃনদী সংযোগ নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করে পথে পথে উপস্থিত জনতাকে উদ্দীপ্ত করে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এদেশের মানুষকে রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী তাদের সেই দায়িত্বে অবহেলা করে আসছে। বর্তমান সরকার ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে জিগির তুলছে অথচ এদেশের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে না। বরং সাম্রাজ্যবাদী ভারত রাষ্ট্রের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। তাই দেশের স্বার্থ এবং মানুষকে রক্ষার জন্য জনগণেরই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উল্লেখ্য, রোডমার্চটি গত ২ অক্টোবর ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ৫ অক্টোবর কুড়িগ্রামে এসে সমাপ্ত হয়।  রোডমার্চে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের গাইবান্ধা জেলার একটি গানের দল আন্তঃনদী সংযোগ নিয়ে রচিত গান পরিবেশন করে পথে পথে উপস্থিত জনতাকে উদ্দীপ্ত করে।

14567456_10205825846645580_1348380215640762829_o

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments