বিপ্লবী সংগ্রাম বিকশিত করতে না পারলে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বর্তমান ভয়াবহ আক্রমণ মোকাবেলা করা যাবে না -কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে নির্ধারিত সদস্যদের নিয়ে ‘রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির’ গত ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২৯ নভেম্বর রাত ৮টায় সমাপ্ত হয়। রাজনৈতিক শিক্ষাশিবির পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, আলমগীর হোসেন দুলাল, মানস নন্দী প্রমুখ।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের তীব্র শোষণে দেশে দেশে শোষিত মেহনতী মানুষ অসহায়, দিশেহারা। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ যে গভীর সংকটে নিপতিত, তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিশ্বের দেশে দেশে যুদ্ধ রক্তের স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে মানুষকে বিভক্ত করার যে রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক, সামরিক আক্রমণ পরিচালিত হচ্ছে, যাতে শোষিত মানুষ বিভক্ত থাকে, তাদের মধ্যে যাতে ঐক্য গড়ে উঠতে না পারে।
বাংলাদেশের অবস্থাও এর চেয়ে ভিন্ন নয়। গায়ের জোরে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে ২য় দফা ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী মহাজোট (গত ৩ বছর যাবৎ) ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। জনস্বার্থ ও মতের তোয়াক্কা না করে একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া লুটপাট ও দখলের যে উন্মত্ততা তারই সর্বশেষ নজির নাসিরনগরে সরকারি এমপি-মন্ত্রী-স্থানীয় দখলদারদের ছত্রছায়ায় হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়ী-মন্দিরে ভাঙ্গচুর-লুটপাট। গাইবান্ধায় আধিবাসীদের উচ্ছেদের জন্য নারকীয় নির্যাতন চালিয়ে ৪জনকে হত্যা করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে আড়াই হাজার ঘর-বাড়ি। সরকারি স্থানীয় কায়েমী স্বার্থবাদী লোকেরা এর সঙ্গে যুক্ত। নিন্দা-ক্ষোভ-প্রতিবাদ সত্ত্বেও বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। প্রশাসন চলছে ক্ষমতাবানদের অঙ্গুলি হেলনে। এরকম চরম অগণতান্ত্রিক পরিবেশে অত্যাচারিত জনগণের দুঃখকে ভাষা দিতে পারে এমন কোন রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতি জনগণের ওপর আক্রমণকে আরো তীব্র করছে।
মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আরো বলেন, জনগণের জীবনে আজ যে দুঃখ দুর্দশা তার কারণ পুঁজিবাদ। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ থেকে মুক্তির ২য় কোন পথ নেই। কিন্তু আকাঙ্খা দিয়ে, যে কোন ভাবে লড়াই করলেই সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা বিপ্লব হবে না। এর জন্য চাই সঠিক বিপ্লবী দল যা একটা দেশের সমাজ বাস্তবতাকে যথার্থ রুপে বিশ্লেষণ করে গড়ে উঠতে হয়। এ লক্ষ্যে এ দেশের মাটিতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তা নায়ক শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারাকে হাতিয়ার করে বাসদ (মার্কসবাদী) দলে যে সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে তাকে শক্তিশালী করতে হবে। গণআন্দোলনের ধারায় সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে।’