Sunday, November 24, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদমোশরেফা মিশুর মুক্তি চাই, বন্ধ কারখানা খুলে দাও

মোশরেফা মিশুর মুক্তি চাই, বন্ধ কারখানা খুলে দাও

img_7282

শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুসহ গ্রেফতারকৃত শ্রমিক নেতাদের মুক্তি, হামলা-মামলা, ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন।

জোটের সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম পথিকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের ফখরুদ্দীন আতিক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার লিমা,  বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, ও.এস.কে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের ইয়াসিন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এএএম ফয়েজ হোসেন, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক, গার্মেন্টস শ্রমিক সভার শামছুল আলম। সংহতি বক্তব্য রাখেন জলি তালুকদার ও খালেকুজ্জামান লিপন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার পুলিশ দিয়ে শ্রমিক নেতাদের হয়রানি করছে। শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুকে গ্রেফতার করেছে, গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন পন্ড করেছে। অবিলম্বে মোশরেফা শিশুসহ গ্রেফতারকৃত সকল শ্রমিককে মুক্তি দিতে হবে।

নেতৃবৃন্দ সকল বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন গ্রেফতার বা মামলা দিয়ে এই আন্দোলন থামানো যাবে না। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনায় বসুন। আলোচনার মধ্য দিয়েই সমাধান সম্ভব।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে মজুরী বোর্ড গঠন করে নতুন মজুরী কাঠামো নির্ধারণের দাবি জানান।

পুলিশী বাধায় সংবাদ সম্মেলন পন্ড ও  মোশরেফা মিশু আটকের নিন্দা

অবিলম্বে আশুলিয়ার সকল কারখানা খুলে দেয়া, গ্রেফতার ও মামলা প্রত্যাহার,  কারখানা ভিত্তিক দাবি দাওয়া মানা, মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যুনতম মজুরি ১০,০০০ এবং মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকা করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি

২২ ডিসেম্বর ২০১৬ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আশুলিয়ার শ্রমিক আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতিতে দাবি কর্মসূচি ঘোষণার সংবাদ সম্মেলন ২২/৩ তোপখানা রোডে নির্মলসেন মিলনায়তনে শুরু হবার আগেই পুলিশী বাধায় পন্ড হয় । পুলিশ জোটের সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম পথিকের কাছ থেকে সকাল সাড়ে ১০ টায় ব্যানার কেড়ে নেয়। পোনে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের স্থানে জোটের অন্যতম সদস্য গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু উপস্থিত হলে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে জোটের বাকী নেতৃত্বের মধ্যে তাসলিমা আখতার, মো. ইয়াসীন, ফখরুদ্দীন কবীর আতিক, মীর মোফজ্জল হোসেন মোস্তাক, শহীদুল ইসলাম সবুজ, শবনম হাফিজ, তৌহিদসহ  অন্যান্য নেতৃত্ব সংবাদ সম্মেলন স্থলে উপস্থিত হলে পুলিশ বাধা দেয় এবং সম্মেলন কক্ষে তালা দিয়ে সম্মেলন পন্ড করে গ্রেফতার এর হুমকী দেয়। উপস্থিত নেতৃবৃন্দ পুলিশীর এই তৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অবিলম্বে মোশরেফা মিশুসহ আটককৃত আশুলিয়ার ৭ নেতাকে মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

আজ বিকাল ৪টায় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রয়া হিসাবে প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার প্রেস ক্লাবে।
আগামীকাল সকাল ১১টায় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য নীচে সংযুক্ত করা হলো।

সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য

অবিলম্বে আশুলিয়ার সকল কারখানা খুলে দেয়া, গ্রেফতার ও মামলা প্রত্যাহার,  কারখানা ভিত্তিক দাবি দাওয়া মানা, মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যুনতম মজুরি ১০,০০০ এবং মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকা করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি

২২ ডিসেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
নির্মলসেন মিলনায়তন, ২৩/২ তোপখানা রোড, ঢাকা

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন, গত প্রায় ১০ দিন ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি এবং কারখানা ভিত্তিক দাবিতে ও শ্রমিক ছাঁটাই-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া শ্রমিকাঞ্চল আন্দোলনে উত্তপ্ত। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ শ্রমিকদের উপর পুলিশ টিয়ারসেল, রাবার বুলেট ছুড়ে ১০ জনকে আহত করে এবং একই দিনে ৫৫টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিজিএমইএ। গতকাল ২১ ডিসেম্বর পুলিশ র‌্যাবের পাশাপাশি ১৫ প্লাটুন বিজেবি মোতায়েন করে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া  গতকাল উইন্ডি, ফাউন্টেন এবং হামীমগ্রুপের কতৃপক্ষ প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের বিরূদ্ধে কারখানা ভাঙচুর ও লুটপাটের মিথ্যা মামলা করা হয়। উইন্ডি কারখানার ১২১ জন শ্রমিককে বরখাস্ত এবং ২ জন শ্রমিক ও ৭ শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে আশুলিয়া শ্রমিকাঞ্চলের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের বক্তব্য, দাবি ও দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরার জন্য আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। এই আয়োজনে উপস্থিত হবার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করি আপনাদের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য শ্রমিক, সরকার, মালিক এবং জনগণেল কাছে পৌছাতে পারবে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
আমরা মনে করি, শ্রমিকদের বিরূদ্ধে এই রকম মিথ্যা মামলা- গ্রেফতার, শ্রমিকাঞ্চলে দমন পীড়ন ও ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি কিংবা ১৩(১) ধারায় মালিকপক্ষের ৫৫টি কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত সমস্যা সমাধানের কোন পথ সৃষ্টি করবে না। কারখানা শ্রমিকদের রুটি রুজির জায়গা , সেই জায়গা অচল করতে শ্রমিকরা চান না। শ্রমিকরা কাজ করতে চায়, কারখানায় যেতে চায়, উৎপাদনের গতি চলমান রাখতে চায় । তার জন্য প্রয়োজন প্রত্যক কারখানায় গণতান্ত্রিক কর্ম পরিবেশ।
আপনারা জানেন অনেকদিন থেকেই শ্রমিক স্বার্থের পক্ষের সংগঠনগুলো মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে আসছিলো।  তার সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্ধ্বগতি, পানি-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা শ্রমিকদের দাবির যৌক্তিকতাকে সামনে  এনেছে। ফলে আমরা মনে করি অবিলম্বে কারখানা খুলে দেয়া, শ্রমিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, কারখানা ভিত্তিক দাবি দাওয়া পূরণ এবং  শ্রমিকদের মূল মজুরি ১০,০০০ টাকা, মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকার দাবি পূরণে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের  উদ্যোগ পারে সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি করতে। শ্রমিকদের সাথে গণতান্ত্রিক উপায়ে দাবিদাওয়া পুরণ নিয়ে আলোচনার পথে না গিয়ে গেফতার ও মিথ্যা মামলা করা পরিস্থিতিকে আরো জটিল রূপ দিচ্ছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন শ্রমিকদের বার্ষিক ছুটির টাকা ঠিক মতো পরিশোধ করা, যখন তখন অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও কথায় কথায় ছাঁটাই নির্যাতান বন্ধ করা, টিফিন বিল-নাইট বিল ঠিকমতো পরিশোধ করাসহ অন্যান্য দাবিতে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আগে থেকেই বিক্ষুব্ধ ছিলো; তার সাথে যুক্ত হয় মজুরি বৃদ্ধির ন্যায্য দাবি। মুল মজুরি ১০,০০০ টাকা এবং মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকায় বৃদ্ধির যোক্তিক দাবিটি প্রধান হয়ে ছড়িয়ে পড়ে কয়েকটি কারখানায়। প্রথমে উইন্ডি গার্মেন্ট, সেতারা গার্মেন্ট, দি রোজ কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে। আন্দোলনে কারখানা ভিত্তিক দাবিদাওয়ার সাথে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে শ্রমিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শ্রমিকদের নানারকম হুমকী ধামকি প্রদান করা হয়। একপর্যায়ে মালিকপক্ষ তাদের ভাড়াটে মাস্তানদের দিয়ে দি রোজ কারখানার শ্রমিকদের বেধড়ক মারপিট করে বলে পর পরই আন্দোলন আরো ছড়িয়ে যায় বলে শ্রমিকরা দাবি করেন। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ডেকো গ্রুপ, হামীম, শারমিন, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, পলমল গ্রুপ, ডি কে গ্রুপ, এনভয়, বান্দু ডিজাইন, পাইওনিয়ার, আইডিয়াসসহ বিভিন্ন কারখানায়। এই সময়ে প্রায় প্রতিদিনই শ্রমিকরা কারখানার ভেতর অবস্থান করে এবং মালিকপক্ষ দুপুরের মধ্যে কারখানা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে গতকাল ২০ ডিসেম্বর শ্রমিকদের ওপর পুলিশী হামলা নির্যাতন, ১০ জনের আহত হবার ঘটনার পর পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আশা করেছিলাম সরকার এবং মালিকপক্ষ গণতান্ত্রিক উপায়ে কারখানা ভিত্তিক দাবি দাওয়া মেনে নিবেন এবং নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কিন্তু আমরা দুঃখের এবং পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করলাম মালিকপক্ষ তাঁদের আস্থাভাজন শ্রমিক নেতৃত্বের সাথে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করলেন। যেই চুক্তির কোন কার্যকারিতা শ্রমিকাঞ্চলে হলো না এবং শ্রমিকদের কোন দাবি দাওয়ার প্রতি কর্ণপাতও করা হলো না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের নামে উল্টো নেমে আসলো মিথ্যা মামলা- হামলা, গ্রেফতার, বরখাস্ত এবং কারখানা বন্ধের ঘোষণা।

অন্যদিকে মালিকপক্ষ বিজিএমইএ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, নৌপ্রতিমন্ত্রী এবং খোদ প্রধানমন্ত্রী দফায় দফায় বৈঠক ও সংবাদ সম্মেলনে এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা অস্বীকার করেন। আমরা মনে করি এই পরিস্থিতিতে মজুরি বৃদ্ধির শ্রমিকদের দাবির যৌক্তিকতাও তুলে ধরা প্রয়োজন।
১. সরকার এবং মালিকপক্ষ বারবার বলছেন শ্রম আইনানুযাী ৫ বছর এর মেয়াদকাল। এই বিষয়ে আমরা বলতে চাই শ্রম আইনের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা সরকার ও মালিকের দেয়া উচিত। শ্রম আইনে যেমন ৫ বছরের কথা উল্লেখ আছে তেমনি এও উল্লেখ আছে প্রয়োজনে ৩ বছরে পর্যালোচনা করা যাবে। সাধারণত ৫ বছর পর পর মজুরি বোর্ড গঠনের বিধান থাকলেও ১৪০ ধারার (ক) এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে
‘‘সরকারের বিশেষ ক্ষমতা  —
৯১[ ১৪০ক। এই আইনের ধারা ১৩৯, ১৪০ ও ১৪২ এ যে বিধানই থাকুক না কেন, বিশেষ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় সরকার কোন শিল্প সেক্টরের জন্য ঘোষিত নিম্নতম মজুরী কাঠামো বাস্তবায়নের যে কোন পর্যায়ে নূতনভাবে নিম্নতম মজুরী কাঠামো ঘোষণার জন্য নিম্নতম মজুরী বোর্ড পুনঃগঠন এবং প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন সাপেক্ষে পুনরায় নিম্নতম মজুরী হার ঘোষণা করিতে পারিবে”।এই আইনের আওতায় বর্তমান পরিস্থিতিতে মজুরি বৃদ্ধির জন্য মজুরি বোর্ড জরুরি মনে করি আমরা।
২. মজুরি বৃদ্ধির যৌক্তিকতাও সরকার মালিকপক্ষ বারবার অস্বীকার করেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই ২০১৩ সালে মজুরি বৃদ্ধির পর ৩ বছর পার হয়ে গেছে । বর্তমানে উন্নয়নের জোয়ারে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে চারপাশে মেলা হাক ডাক। সম্প্রতি দেশ নি¤œ থেকে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে বিশ্বব্যাংকের দেয়া ‘সুনাম’ ও কুড়িয়েছে। ১০৪৬ থেকে ৪১২৫ মার্কিন ডলার বার্ষিক আয় হলেই নি¤œ মধ্য আয়ের সীমারেখা পৌঁছা যায়। আমাদের জনগণের গড় বার্ষিক আয় এখন ১৩১৪ মার্কিন ডলার (১০২৪৯২ টাকা), সেই অনুযায়ী মাসিক আয় হবার কথা ৮ হাজার টাকার ওপরে। মন্ত্রী-মিনিস্টার, থেকে শুরু করে আমলা, মোক্তার, সরাকারি চাকুরে এমনকি সরকার বাহাদুর এদের সবার আয় বেড়েছে। সরকারি কর্মকর্তার আয় সর্বনি¤œ বেসিক ৮২৫০ টাকা (সবমিলিয়ে ১৭৩৬২ টাকা) সর্বোচ্চ বেসিক ৮০ হাজার টাকা । ‘উন্নয়নের’ এই হিসাবের সাথে দেশের বেশীরভাগ শ্রমজীবী মানুষের আয়ের ফারাক যোজন যোজন। রপ্তানী আয়ের শীর্ষে অবস্থানকারী পোশাক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও এ ক্ষেত্রে বিশেষ নাজুক। বর্তমানে পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি ৩০০০ টাকা সব মিলিয়ে ৫৩০০ টাকা টাকা ( ৩০০০ মূল+ ১২০০ বাসা ভাড়া+ চিকিৎসা ২৫০+ যাতায়াত ২০০+ খাদ্যভাতা ৬৫০= ৫৩০০)। এ টাকায় শ্রমিকের বেঁচে থাকা কতটা কঠিন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কটা টাকা বেশী পাবার জন্য ওভার টাইম আর নাইট করা তরুণ শ্রমিকের ক্লান্ত জীর্ণ পুষ্টিহীন চেহারাই তার স্বাক্ষী।
বর্তমান বাজার দরের উর্ধ্বগতির সাথে সঙ্গতি রেখে জীবন চলা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকদের। একদিকে বাজারে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি তার ওপর রয়েছে বাসা ভাড়া বৃদ্ধির চাপ।  যে কোন মুহুর্তে আসতে পারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা। বর্তামানে বাজারে শ্রমিকরা যে চাল খান (মিনিকেট হাফভয়েল) তার দাম কেজি প্রতি ৪২ টাকা, ধামরাই ৪২-৪৫ টাকা, ২৯ চাল- ৪২ টাকা । ডালের দাম ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। তেলের দাম ৯০- ১২০ টাকা। এই বাজারে ৩০০০ ক্যালোরির খাদ্য চাহিদা পুরণ করা কঠিন। যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাবার সুযোগ ২৫০ টাকায় পাওয়া সম্ভব না। ৫ টাকার নীচে কোন বাস ভাড়া নেই। শ্রমিকরা কোন রকম রেশনিং এর সুযোগ পান না, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ পান না । এমনকি অর্থাভাবের কারণে বেশীর ভাগ শ্রমিক নিজের সন্তানদের নিজের কাছেও রাখতে পারেন না।

বাসা ভাড়ার অবস্থাও করুণ । বর্তমানে আশুলিয়ায় একটি পকেট রুম বা বারন্দা রুমের ভাড়া ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকা। সাধারণ মাঝারি রুমের ভাড়া ২৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি বছরই বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। এই বছরেও মালিকরা ঘোষণা দিয়েছিলো বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে। নৌ পরিবহন মন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী এবং বিজিএমইএ কতৃপক্ষ জানিয়েছেন আগামী ৩ বছর আশুলিয়ায় বাসা ভাড়া বাড়বে না । কিন্তু তারা  পরিষ্কার করেননি কি প্রক্রিয়ায় বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আশুলিয়া ছাড়া ঢাকা, সাভার, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শ্রমিকাঞ্চলে বাড়ী ভাড়া, গ্যাসের মূল্য কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। শ্রমিকদের নাগালের বাইরে এ ধরনের পরিস্থিতি ন্যুনতম মজুরি বোর্ড গঠন জরুরি দাবি বলে আমারা মনে করি। আর তাই নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের করে মূল মজুরি ১০,০০০ টাকা এবং মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকা করার আহবান জানান মালিক ও সরকার পক্ষের কাছে ।
৩.শ্রম প্রতিমন্ত্রী এবং বিজিএমইএর নেতৃত্বের কেউ কেউ বলেছেন, কোন শ্রমিক বা শ্রমিক সংগঠন নাকি মজুরিবৃদ্ধির দাবি জানাননি। অথচ ১২ আমরা ১২ সংগঠনের জোট গার্মেন্ট শ্রমিক অধিকার আন্দোলন এর পক্ষ থেকে চলতি বছর মে এবং জুন মাসে মজুরি বোর্ড, বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ তে আনুষ্ঠানিকভাবেই মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য দাবি পেশ করি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি, গ্রেফতার-হামলা-মামলার পথ পরিহার করে অবিলম্বে কারখানা খুলে দেয়া দরকার। কারখানা ভিত্তিক দাবিদাওয়া পুরণে মালিকপক্ষের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। একইসাথে মজুরি বৃদ্ধির ন্যায়সঙ্গত দাবির ন্যায্যতা স্বীকার করে মজুরি বোর্ড গঠন এবং মজুরি বৃদ্ধির সরকার এবং মালিকপক্ষের উদ্যোগ এই মহুর্তে জরুরি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দাবিগুলো নীচে উল্লেখ করা হলো:

১. শিল্প ও শ্রমিক বাঁচাতে অবিলম্বে সকল কারখানা খুলে উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখতে হবে।
২. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত শ্রমিক এবং শ্রমিক নেতৃত্বকে মুক্তি দিতে হবে। সকল শ্রমিকদের বিরূদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৩. আশুলিয়ায় বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের কারখানা ভিত্তিক দাবি দাওয়া বিবেচনা করে দাবি মেনে নিতে হবে। বার্ষিক ছুটির টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করা, শ্রমিকদের টিফিন বিল, নাইটবিল, ওভার টাইম যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে।
৪. অবিলম্বে নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের ঘোষণার দিতে হবে।  ন্যুনতম মূল মজুরি ১০,০০০ এবং মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকা করতে হবে। ১০%  বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট দিতে হবে। নতুন মজুরির আগ পর্যন্ত  ৫০% মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে।
শ্রমিকদের জন্য কলোনি/ডরমেটরি গড়ে তুলতে হবে। তাদের সন্তানদের শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সোয়েটার শ্রমিকদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে পিস রেট নির্ধারণ করতে হবে।
৬. কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সকল কারখানায় নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর ও গণতান্ত্রিক কর্ম পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তাজরীন, রানা প্লাজা ও ট্যাম্পাকো কারখানায় শ্রমিক হত্যার জন্য দোষীমালিকসহ সকল দায়ীদের বিচার করতে হবে। ক্ষতিপুরণের আইন বদল করে যথাযথ ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
৭. অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৮. মজুরি বোর্ড গঠন বিষয়ক শ্রম আইন পরিবর্তন করে যগোপুযগী করতে হবে।
৯. কথায় কথায় শ্রমিক ছাঁটাই ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শ্রমিকদের অকথ্য গালাগাল, চড় থাপ্পড়, নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ভাড়াটে মাস্তানদের দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা-মামলা করা চলবে না। নারী শ্রমিকদের ওপর যৌন হয়রানিসহ সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ৬ মাস স্ববেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে। ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করতে হবে।
১০.  ৬ মাস স্ববেতনে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে। সব কারখানানায় ডে-কেয়ার থাকতে হবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমাদের দাবিসমূহ আপনাদের মাধ্যমে শ্রমিক, মালিক ও সরকারপক্ষ এবং জনগণের কাছে পৌছানোর জন্যই আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হবার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments