বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ২য় দফা ক্ষমতারোহন করে সরকার গত ৩ বছরে জনগণের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করেছে। পুরনো বছরের গ্লানি পেছনে ফেলে নতুন বছর (২০১৭) নিয়ে মানুষের আশাবাদ মূহুর্তেই মিলিয়ে গেছে গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা থাকা সত্বেও এবং রাষ্ট্রীয় সব গ্যাস কোম্পানীসমূহ লাভজনক অবস্থায় থাকার পরও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রশ্নে সরকার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। অথচ তীব্র গ্যাস সংকটে নিত্যদিন নাকাল হচ্ছে মানুষ। সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের জীবনে মূল্যবৃদ্ধির এ খড়গ নেমে আসবে কয়েকগুন হারে। এমনিতেই গত বছরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬.৪৭ শতাংশ। বাড়ীভাড়া-গাড়ীভাড়া সবই বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ শ্রমজীবী মানুষের মজুরী বাড়েনি। বাঁচার মত ন্যূনতম মজুরীর দাবিকে স্বৈরাচারী কায়দায় কারখানা বন্ধ করে, গ্রেফতার-নির্যাতন করে দমন করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব ও প্রশাসনিক সহযোগিতা নিয়ে মালিকদেরই পাশে দাঁড়ানো, স্পষ্টভাবে এ সত্যই তুলে ধরেছে, জনগণের কথা মুখে জপলেও কার্যত এ সরকার পুঁজিপতি মালিকদেরই স্বার্থ রক্ষাকারী। ফসলের মূল্য না পেয়ে উৎপাদনে উৎসাহ হারানো কৃষকরা যেমন সর্বস্বান্ত হচ্ছে, আবার ভোক্তা নাগরিকদের পকেট কাটা যাচ্ছে আর মধ্যসত্বভোগী ফরিয়ারা সরকারি আনুকূল্যে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে।’
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হল- অর্থনৈতিক সংকটে মানুষ গত বছরে সবচেয়ে বেশী বিপর্যস্ত হয়েছে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে। প্রতিদিনই ১০-১১ জন মানুষ খুন হয়েছে। নারী নির্যাতন ও হত্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক মাত্রায়। তনু হত্যাসহ বেশিরভাগ হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি। আইনের শাসনের মুখরোচক বুলি আউরে ক্রস-ফায়ার-গুমকে স্বাভাবিক কার্যে পরিণত করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে ফ্লাইওভার ও সেতুর মেগাপ্রকল্প সমূহ থেকে লুটপাট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর দূর্নীতির কথা বলাই বাহুল্য। ৭৬ হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর দেশ থেকে পাচার হলেও পাচারকারীদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। জনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা সরকারের তথাকথিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার নিকৃষ্ট উদাহরণ।’
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবচে বেশী আক্রমণ পরিচালিত করছে এ সরকার। শিক্ষাকে চূড়ান্তভাবে বাজারের পণ্য বানিয়েছে। দলীয়করণ ও দূর্নীতির প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার নৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়ার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। এমতাবস্থায় শুভবোধসম্পন্ন বিবেকবান মানুষের নিস্ক্রিয়তা সরকারের অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী শাসনকে আরো দীর্ঘস্থায়ী করবে।’ বিবৃতিতে তিনি বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিসহ দেশের বিবেকবান মানুষকে সরকারের ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।