সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা এবং সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু এক যুক্ত বিবৃতিতে সুন্দরবনের অদূরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে এবং বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতির আধার সুন্দরবন রক্ষার চলমান আন্দোলনে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বাধা প্রদানে নিন্দা জানিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, “সুন্দরবন নিয়ে সারাদেশের বেশিরভাগ মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে সরকার সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এর ফলাফলে কেবল সুন্দরবন ধ্বংসই হবে না, বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সরকার যেখানে জনমত উপেক্ষা করছে সেখানে আমাদের সংগঠন সারাদেশে প্রতীকী গণভোট আয়োজন করে হাজার হাজার মানুষের মতামত সংগ্রহ করে এই আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করছে। সরকার একদিকে সকল যুক্তি-বিশ্লেষণকে-বৈজ্ঞানিক সত্যকে পাশ কাটিয়ে ‘উন্নয়ন’র কথা বলে প্রকল্পের কাজ অগ্রসর করছে, আর তাদের অনুগত সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দিয়ে প্রতিবাদকারীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন-হামলা চালাচ্ছে, বাধা প্রদান করছে।
সারাদেশে আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে একযোগে যশোর, খুলনা, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সুন্দরবন না রামপাল’ এই শিরোনামে গণভোট আয়োজিত হচ্ছে। এরমধ্যে গত ৯ ও ১০ জানুয়ারি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, খুলনা বিএল কলেজে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভোটগ্রহণে বাধা দিয়েছে, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহুল আমিন, খুলনার খান জাহান আলী থানার আহ্বায়ক সুজয় সাম্য এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক তানভীর আহম্মেদ খান ও সদস্য অতনু চক্রবর্ত্তীকে হুমকি ও বাধা দিয়েছে। আজ ১১ জানুয়ারিতে যশোর জেলার আহ্বায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাসকে ডেকে নিয়ে হুমকি দেয়। যশোর জেলায় কোনো গণভোট আয়োজন করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। দিনাজপুর সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ-কলেজ প্রশাসন গত ৯ জানুয়ারি থেকে ভোট গ্রহণে বাধা দেয়। আজ ১১ জানুয়ারি সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের বাধার পর পুলিশ এসে গণভোট বন্ধ করতে বলে। তাদের সকলেরই বক্তব্য- সরকারবিরোধী কোনো তৎপরতা সরকারি কলেজে করা যাবে না। এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে ভোট গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে চাইছে প্রশাসন এবং সরকার দলীয় সংগঠন।
সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে দমন-পীড়ন চালিয়ে প্রতিবাদের শক্তিকে দুর্বল করতে চায় সরকার। কিন্তু যতই নির্যাতন নেমে আসছে, ততই আন্দোলনে সাধারণের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন বাড়ছে। প্রতীকী গণভোটে হাজার হাজার মানুষের সমর্থনই তার প্রমাণ। এই সমর্থন গণআন্দোলনে রূপ নিলে সরকারের কোনো শক্তিই তাকে দমাতে পারবে না।
আমরা সারাদেশে প্রতীকী গণভোট আয়োজনে সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসাথে এই আন্দোলনে আরও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য সারাদেশের ছাত্রসমাজ তথা জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।”