বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে গ্যাসের দাম কমানোর দাবিতে ১৫ মার্চ ২০১৭ জ্বালানী মন্ত্রণালয় ঘেরাও মিছিলে পুলিশি হামলা ও নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গ্যাসের বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও সিপিবি-বাসদ আহুত জ্বালানী মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পুলিশের টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, জলকামান, রায়ট কার আর লাঠিপেটার বর্বর হামলায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। গুরুতর আহত হয়ে বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর সংগঠক মাসুদ রানা, অনিমেষ রায়, শরীফুল ইসলাম, সজীব চৌহান ও খোকন মোহন্ত সহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের আরো এগারো জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন। ’
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ‘সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে জনগণের অধিকার আদায়ের পক্ষের শক্তিকে দমন করতে চায়। এই মনোভাব সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবেরই বহি:প্রকাশ। কিন্তু দমন করবার পরিণতি ভালো হবে না। জনগণের সংগঠিত শক্তি সরকারের এই জুলুমনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেই। সরকারি নিপীড়ণ, হামলা-মামলা-নির্যাতন মোকাবেলা করেই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে প্রতিহত করতে হবে।
তিনি হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল ১৬ মার্চ ২০১৭ বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আজ ১৫ মার্চ গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা এবং সিপিবি-বাসদের জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ঘেরাও পূর্ববর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক।
সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে কদম ফোয়ারা ও পল্টন মোড় ঘুরে জ্বালানি মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা করলে পুলিশ প্রথমে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে, পরে লাটিচার্জ, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পুলিশের লাঠিচার্জে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য আবু বকর রিপন, ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আশরাফুল হক ইশতিয়াক, ঢাকা মহানগেরর নেতা আল মুস্তাকিম, নাইম খান, নুসরাত হক, মোহাম্মদ হাসিব, নারায়নগঞ্জ জেলা শাখার জাহিদুল আলম আল জাহিদ, রিয়া আকতার, রায়হান জামান, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শামীম ইমাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নগর কমিটির সভাপতি মাসুদ, সদস্য সজীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য খোকন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অনিমেষ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির আজাদ ও অভি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জোনায়েদ হোসেন ও শামসুল আলম পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মাঝে কয়েকজন লাঠিচার্জ, লাথি ও মারপিটে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, অন্যান নেতাকর্মীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এছাড়া সিপিবি বাসদেরও বহু সংখ্যক নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর রায়ট কারও তুলে দেয়ার চেষ্টা করে।
পুলিশের হামলা সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুনরায় সমবেত হন। তারা এই হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল দেশব্যাপী বিক্ষোভকর্মসূচির ঘোষণা দেন, এছাড়া আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত গণসংযোগ ও ১৫ মার্চ গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরপর গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও সিপিবি বাসদ এর একটি যৌথ মিছিল পল্টন মোড়ে গিয়ে সমাপ্ত হয়, সেখানে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক ফিরোজ আহমেদ।
নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বলেন, আওয়ামী সরকারের লুণ্ঠনের তহবিল জোগাতে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সকল কিছুর দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর প্রভাবে শুধু মানুষের জীবনই দুর্বিষহ হবে না, বাংলাদেশের শিল্প-কলকারখানাও ভারত ও চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় বিপন্ন হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ভবিষ্যতে যে কোন দাম বৃদ্ধির তৎপরতা হরতাল সহ উচ্চতর কর্মসূচি ঘোষণা করে জনগণকে সাথে নিয়ে প্রতিহত করা হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু এক যৌথ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা-টিয়ারশেল নিক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘সরকার জনগণের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এলপিজি ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে। এর প্রতিবাদেএদেশের বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেমেছে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাও ধারাবাহিকভাবে সরকারের এই স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে। তার অংশ হিসেবেই আজ জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পুলিশ হামলা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ হামলায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সম্পাদক খোকন মোহন্ত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য অনিমেষ রায়, সদস্য শরিফুল ইসলাম, বাংলা কলেজের আহ্বায়ক সজীব চৌহানসহ বিভিন্ন বামপন্থী দলের ১৬ জন নেতা-কর্মী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে গণতান্ত্রিক এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের বহিঃপ্রকাশ। সরকার একদিকে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করছে। আর অন্যদিকে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, প্রতিবাদ করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার কেড়ে নিচ্ছে । এই হল অনির্বাচিত সরকারের গণতন্ত্রের নমুনা! গণতন্ত্র মানে মানুষের অধিকার হরণ নয়, অধিকার পূরণ।কিন্তু বর্তমান আওয়ামী মহাজোট সরকার একের পর এক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করেছে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পায়ঁতারা করছে। এর ফলে সাধারণ নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। এই অবস্থায় অধিকার রক্ষায় মানুষের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।