সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে উচ্চশিক্ষায় ৫ গুণ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবনা বাতিল, শিক্ষা গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, পিপিপি-হেক্যাপ প্রকল্প বাতিল, ডাকসুসহ সকল প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ইউজিসির ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র বাতিলের দাবিতে ১৮ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় কনভেনশন উদ্বোধন করেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টুর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুজ্জামান সাকন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ। উদ্বোধনের পর বেলা ১২ টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল অপরাজেয় বাংলা থেকে শুরু করে বাণিজ্য অনুষদ, মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, টিএসসি, কাজী মোতাহার হোসেন ভবন, কার্জন হল হয়ে জিমনেসিয়াম মাঠে এসে শেষ হয়। এরপর বেলা ৩টায় টিএসসি অডিটোরিয়ামে কনভেনশনের কার্যক্রম শুরু হয়। কনভেনশনে আলোচনা করেন দৈনিক নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর, স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আ ক ম জহিরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা, সাপ্তাহিক ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা, ব্যরিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন , ‘সরকার যখনই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী এদেশে যেকোনো ক্ষেত্রে সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে সেখানেই চূড়ান্ত সর্বনাশ হয়েছে। আমরা দেখেছি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে পাটশিল্পকে ঢেলে সাজানোর কথা বলে আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়েছে। গত বছর দশেক আগে একইভাবে উচ্চশিক্ষার সংস্কারের কথা বলে ইউজিসির ২০বছর মেয়াদী কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। যার ফল স্বরূপ আজ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকগুণ বেতন ফি বেড়েছে। কৌশলপত্রে সরকার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়কে তার অভ্যন্তরীণ আয় দিয়ে চলতে হবে। সরকারের এই বক্তব্য উচ্চশিক্ষার তথা সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার পরিপন্থী। এই সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে এদেশের শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রী যে উচ্চশিক্ষায় ৫গুণ বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবনা করেছেন সেটা সাধারণ মানুষকে উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করবে। তাই সময় থাকতে ছাত্র-শিক্ষক সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
টিএসসি অডিটোরিয়ামের আলোচনা সভায় বক্তারা আরও বলেন, গত ১০ বছরে ইউজিসির কৌশলপত্রের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকগুণ ফি বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ আয়ের লক্ষমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বেতন ফি বাড়ছে কিন্তু কমছে শিক্ষার্থীদের অধিকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক নাইটকোর্স খোলা হয়েছে। যা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একশ্রেণীর শিক্ষকরাও অর্থের লোভে এসব কোর্সে টাকার বিনিময়ে পড়াচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর বাণিজ্যিক ব্যবহার বেড়েছে। হেক্যাপ প্রকল্পের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল করে তোলা হচ্ছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধারণা বিশ্ববিদ্যালয় চলছে আজ তার বিপরীত দিকে। জনগণের শ্রমে ঘামে গড়ে উঠা এসব পাবলিক প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকীকরণের অক্টোপাসের করাল থাবায় আক্রান্ত। এই থাবা থেকে উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বক্তাগণ এই আন্দেলন গড়ে তোলার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।