বাণিজ্যিক সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে সম্প্রতি কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিবৃতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইভা মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক সালমান সিদ্দিকী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ও আমাদের সংগঠনসহ প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনসমূহ দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিরুদ্ধে তাদের সুদৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছে। সম্প্রতি সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বাজেট বক্তৃতায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.কামাল উদ্দীন বলেছেন, নাইটকোর্স চালু করে একশ্রেণীর শিক্ষক অনৈতিক উপায়ে অর্থ আয় করছেন। যার মধ্যে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী। তিনি এ শ্রেণীর শিক্ষকদের ‘শিক্ষক-দোকানদার’ হিসেবে অভিহিত করেন। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রির প্রতিষ্ঠান নয়, শিক্ষা কোনো পণ্য নয়। এক শ্রেণীর কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শিক্ষাবিস্তারের কথা মুখে বললেও অতিরিক্ত অর্থ আয়ের জন্য সান্ধ্যকোর্স চালু করেছে। এর মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন শিক্ষাকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয় অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের মনোযোগ কমে যায়। ব্যাহত হয় শিক্ষা কার্যক্রম ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক। গত কয়েকবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালু হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়েও সমাজবিজ্ঞান, আইন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালুর তৎপরতা চলছে। কোষাধ্যক্ষ যখন সান্ধ্যকোর্স নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন তখন বুঝতে অসুবিধা হয়না যে, এ কোর্সের ভয়াবহতা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কত ব্যাপক। এ রকম সময়ে এ বিভাগসমূহে সান্ধ্যকোর্স চালু সংকটকে আরো গভীর করবে। আমরা নতুন যেকোনো বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালুর বিরোধীতা করি। এবং কোষাধ্যক্ষ তিন বছর কোনো বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালু না করার সুপারিশ করেছেন। আমরা এ বক্তব্যকে প্রত্যাখান করি। আমরা মনে করি প্রচলিত সকল বাণিজ্যিক কোর্স অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং ভবিষ্যতেও কোন বিভাগ যেন এ ধরনের কোর্স চালু করতে না পারে সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ৬৬৪ কোটি ৩৭লক্ষ টাকার বাজেটে ১১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা ঘাটতি বাজেট। অভ্যন্তরীণ আয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৪১ কোটি টাকা । এ বছরে ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা বাড়িয়ে ৪২ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। ফলে ছাত্র বেতন বৃদ্ধি হবে, নাইটকোর্স চালুসহ শিক্ষার দর্শন ও ছাত্র স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বৃদ্ধি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ২ ভাগ। যা দিয়ে মানসম্মত গবেষণা সম্ভব নয়। বাজেট পাশ হয়ে যায় কিন্তু ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মতামত নেয়া হয় না। নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চেতনা প্রতিষ্ঠায় অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবী জানান। এবং এ বাজেট বাতিল করে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় বরাদ্দে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বাজেট প্রণয়ণের জোর দাবি জানান।