ঢাকায় কলেজ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বর্বরোচিত পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ২১ জুলাই ২০১৭ সন্ধ্যা ৬.০০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি টিএসসি চত্বর থেকে শুরু হয়ে কলাভবন, শাহবাগ হয়ে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদা মনিকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা ও অর্থ সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী।
সমাবেশে সভাপতি নাঈমা খালেদা মনিকা বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম ও প্রতিবাদ একটি স্বাধীন দেশে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। ৭টি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের সংকট নিরসনের দাবিতে ঢাকার রাজপথে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সরকার তাদের প্রতিবাদটুকু সহ্য না করে পুলিশ বাহিনী দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্ট কায়দায় শিক্ষার্থীদের শরীর বরাবর টিয়ারশেল-রাবার বুলেট মেরে লাঠিচার্জ করে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করতে রাজপথ রক্তাক্ত করছে। দীর্ঘদিন ধরে এসকল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার সংকট নিরসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। কলেজসমূহ পরিচলনা করার কোনো নীতিমালা ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি কলেজের অন্তর্ভূক্তি বিদ্যমান সংকটকে আরো বৃদ্ধি করেছে। কলেজগুলোর সেশনজট, আবাসন, পরিবহন, গবেষণা, সেমিনার ও ক্লাসরুমের সংকট বিদ্যমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্তির ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও চলমান সংকটসমূহ নিরসনের কোনো নীতিমালা ছাত্রসমাজের সামনে হাজির করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা তাদের সংকটসমূহ নিরসনে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে শাহবাগে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচী ঘোষণা করে। পূর্বঘোষিত শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশ বারবার বাধা দেয়। পরবর্তীতে বিনা উস্কানিতে শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন পুলিশ সদস্য সামান্য দূরত্বে অবস্থানরত শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের মুখ বরাবর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে সিদ্দিকুরের দুটি চোখই মারাতœকভাবে আহত হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন আঘাতের তীব্রতার কারণে দুচোখ ফেটে গেছে এবং সিদ্দিকুর রহমান আর দেখতে পাবে না। সিদ্দিকুরসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর এধরনের বর্বর আক্রমণ ও অজ্ঞাতনামা ১২০০ জন শিক্ষার্থীর ওপর মামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে আরেকবার উন্মোচিত করলো। এ ঘটনার দায় সরকার কোনোভাবে এড়াতে পারে না। কোনো ধরনের ন্যায়সংগত আন্দোলন যেন দানা বাঁধতে না পারে এজন্য সরকার দমন-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। সাম্প্রতিক সুন্দরবন আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের বর্বরোচিত হামলা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে শরীর লক্ষ্য করে টিয়ারশেল-রাবার বুলেট নিক্ষেপ, গ্রেফতার, হয়রানিমূলকমূলক মামলা রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী নীতিরই প্রতিফলন।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ১২০০ শিক্ষার্থীর মামলা প্রত্যাহার করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জনান এবং ৭টি কলেজের সংকট নিরসনের দাবিতে সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।