নভেম্বর বিপ্লব স্মরণে চারণের ‘শতবর্ষে ঐকতান’
নভেম্বর বিপ্লব সভ্যতার শুরু থেকে এযাবত মানুষের ওপর মানুষের সকল প্রকার শোষণ-নিপীড়ন থেকে রুশ দেশের মানুষকে মুক্ত করেছিল। অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রাকে উন্নত করেছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কাজের নিশ্চয়তাসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করেছিল সংবিধানের মাধ্যমে। শুধু বস্তুগত ক্ষেত্রেই নয়, ব্যক্তিস্বার্থমুক্ত উন্নত মূল্যবোধের আধারে মানুষের চরিত্রকে বিকশিত করার অভিপ্রায়ে সাংস্কৃতিক জগতেও সোভিয়েত ইউনিয়ন বিপ্লব ঘটিয়েছিল। সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, সঙ্গীত অর্থাৎ শিল্পের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মৌলিক অবদান রেখেছিল সোভিয়েত দেশের শিল্পীরা। আজ আমাদের দেশে যখন শিল্প-সাহিত্যের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব বিরাজ করছে তখন সোভিয়েতের দিকে তাকাতে হবে কী করে সেদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা সৃষ্টির এই বিপুল সম্ভার তৈরি করেছিল।
সেই প্রেরণা নিয়ে এদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে মহান নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষে ঐকতান’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্ত্বরে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাসদ (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ইনচার্জ ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য সোমা ও সঞ্চালনা করেন সংগঠক সুস্মিতা রায় সুপ্তি। অনুষ্ঠানের শুরুতে ও শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গান, নাটক, আবৃত্তি, নাচ ইত্যাদি পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা ও খুলনা জেলা শাখা।
ঠাকুরগাঁয়ে অটো শ্রমিকদের ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি পেশ
বাংলাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অটো শ্রমিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এখন প্রায় ১১ লক্ষেরও বেশি অটো (ইজিবাইক ) রাস্তায় চলছে। চালক, মালিক, মেকানিক মিলে ২০ লক্ষ এবং তাদের পরিবার পরিজন মিলে প্রায় ১ কোটি মানুষ এই জীবিকার উপর নির্ভর করছে। কিন্তু সরকারের নানা অযৌক্তিক নিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত এই শ্রমিকভাইদের নানা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সরকার একদিকে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে ইজিবাইক আমদানি করছে, পার্টস আমদানি করছে, ব্যাংক লোন দিচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন সময় এই গাড়িগুলোকেই অবৈধ বলে আটক করছে। এছাড়া রয়েছে সরকারদলীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি, পুলিশের হয়রানি ইত্যাদি। এমন নানা হয়রানির ঘটনা প্রত্যহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটছে।
ঠাকুরগাঁয়ে অটো শ্রমিকদের সাথে এমন ঘটনা ঘটার প্রতিবাদে ‘অটো শ্রমিক অধিকার আন্দোলন’র ডাকে ৫ দফা দাবিতে জেলার ৩২টি স্ট্যান্ড কমিটির অংশগ্রহণে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক বরাবর দশ হাজার গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সমাবেশে ‘অটো শ্রমিক অধিকার আন্দোলন’র উপদেষ্টা মাহাবুব আলম রুবেলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পঞ্চগড় জেলার বাসদ (মার্কসবাদী)র সমন্বয়ক তরিকুল আলম, অটো শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ফরিদ আহামেদ, বেলাল হোসেন, লাবু, খালেক, শাহাজাহান ও বিভিন্ন স্ট্যান্ড কমিটির নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে অটো শ্রমিকদের উপর সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা, শ্রমিক ইউনিয়ন করবার অধিকার প্রদান করতে সরকারের যথাযথ উদ্যোগের আহ্বান জানান।
শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন
‘পাঠাগার হোক মানুষ গড়ার হাতিয়ার’ এই স্লোগান সামনে রেখে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় উদযাপিত হল ঢাকার কড়াইলে অবস্থিত ‘শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগার’-র ৩য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। গত পহেলা অক্টোবর’১৭ বনানীতে অবস্থিত টি এন্ড টি বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকাল ১১ টায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হালিমা বেগম অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘পাঠাগার মানুষের মননশীলতা নির্মাণ করতে সহযোগিতা করে। ঢাকার মধ্যে আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ একদিকে নিম্ন আয়ের অন্যদিকে অবহেলিত। আমাদের বিদ্যালয়ে বছরের শুরুতে প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই দেখি তারা নানা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। এমন একটা জায়গায় পাঠাগার করে শিশুদের সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার জন্য সবাইকে অভিনন্দন জানাই।”
এছাড়া আলোচনা করেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডাঃ জয়দীপ ভট্টাচার্য। ঢাকা নগর শাখার শিশু কিশোর মেলা ও পাঠাগার সংগঠক ছায়েদুল হক নিশানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ রুমী স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক রাফসানুল এহসান সাজ্জাদ। আলোচনা সভা শেষে পাঠাগারের সদস্যদের অংশগ্রহণে গান, নাচ, আবৃত্তিসহ এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এর পর মাসব্যাপী পরিচালিত বিভিন্ন খেলায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে সারা দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে বর্ধিত হোল্ডিং ট্যাক্স বিরোধী আন্দোলন
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নতুন আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নগর জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক মেয়রদের আমলে স্থাপনার আয়তনের ভিত্তিতে গৃহকর আদায় করা হতো। নতুন আইন অনুযায়ী স্থাপনা পরিবর্তে ভাড়ার ভিত্তিতে ১৭% গৃহকর আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে গত বছর যে কর দিতে হত এই বছর সেই কর বেড়ে ১০/১৫ গুণ হয়েছে। একদিকে চালের মূল্য, বিদ্যুতের মূল্য, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে অসহনীয় এই হোল্ডিং ট্যাক্স মরার উপর খাড়ার ঘা। বাড়িয়ালা ভাড়াটিয়া সবাইকে এই করের বোঝা বইতে হবে। কারণ এরই সাথে ঘরভাড়া বাড়বে কযেকগুণ হারে।
৩৬ নং ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেছেন, ‘গতবছর যে বাড়ির উপর ১৫ হাজার ট্যাক্স নির্ধারণ হয়েছে এই বছর সেটা বেড়ে ৩ লক্ষ টাকায় দাড়িয়েছে। ছোট্ট কাচা ঘরের ভাড়া পায় ১ হাজার ,বছরে আয় ১২ হাজার। সেই ঘরের উপর কর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ হাজার! এমনি হাস্যকর সব এসেসম্যান্ট। যে বাড়ির ট্যাক্স দেয়া হয়েছে ১ লক্ষ টাকা গত বছর, এই বছর ট্যাক্স এসেছে ১০ লক্ষ টাকা।’ সামান্য বৃষ্টিতে, জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম বেশিরভাগ অঞ্চল ডুবে থাকে। বহদ্দার হাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত বিরাট অংশের রাস্তা ভাঙ্গাচোরা বেহাল অবস্থা। সরকারের কথিত উন্নয়নের জোয়ার জনগণ দেখছে না, দেখছে দুইবেলা মহেশখালীর জোয়ার। জোয়ারের পানির জন্য স্কুল কলেজের পড়াশুনা, ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাঘাত ঘটছে।
এই অবস্থায় হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবিতে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ‘ এর উদ্যোগে আন্দোলন শুরু হয়েছে। গত এগারো মাস ধরে এই আন্দোলন চলছে। যদিও চসিক মেয়র এখনও তার সিদ্ধান্তে অনড়। গত ৮ই অক্টোবর ১০ টি ওয়ার্ডে একযোগে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। আগ্রাবাদ বাদামতলীর মোড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।