১২ এপ্রিল ২০১৩, সকাল ১০•৩০টা
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভিআইপি মিলনায়তন
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
শুরুতেই আপনাদের জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জাতীয় পরিস্থিতির এক সংকটকালে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। দেশে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভূত বুর্জোয়া দলগুলোর প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার রাজনীতিতে জনগণ অসহায়। সংঘাত ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে সরকার তার হারিয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কাজে লাগাতে চাইছে। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেশের মধ্যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা বহির্ভূত বুর্জোয়া শক্তি ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে চাইছে। নীতি-আদর্শহীন বুর্জোয়া রাজনীতির প্রশ্রয়ে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরপত্তাহীনতায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে দাবি দীর্ঘদিন ধরে জনগণের মধ্যে ছিল, ক্ষমতার রাজনীতিতে আজ তাকেই দু’দল দু’ভাবে কাজে লাগাবার চেষ্টা করছে। এর সাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, নৈতিক অবক্ষয়সহ পুঁজিবাদী শাসন-শোষণের সাধারণ সংকটগুলো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, সাধারণ মানুষের শিক্ষা-চিকিৎসার অধিকারহীনতা ইত্যাদি বহুবিধ সংকটে আমরা জর্জরিত। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামী ইসলাম রক্ষার নামে যে সকল দাবি উত্থাপন করেছে তা দেশের গণতন্ত্রমনা অসাম্প্রদায়িক মানুষের জন্য অশনিসংকেত। এরই সাথে বাংলাদেশকে ঘিরে মার্কিন-ভারত সাম্রাজ্যবাদী বলয়সহ পরাশক্তিগুলোর নানাবিধ তৎপরতায় দেশপ্রেমিক মানুষ উদ্বিগ্ন। জনগণের মনে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে – এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ কি? এরকম একটি সময়ে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জনগণের সামনে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তি সুসংগঠিতভাবে উপস্থিত থাকলে জনগণ হয়ত পথ পেত, লড়াইয়ে নামত। কিন্তু তা এখনও সম্্ভবপর হয়ে ওঠেনি।
বন্ধুগণ,
এদেশের মানুষ স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে শোষণ-বৈষম্য-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বারেবারে লড়াই করলেও বহু প্রত্যাশিত ও আকাঙ্ক্ষিত মুক্তি আসেনি। গণআন্দোলনে সঠিক আদর্শ ও সর্বহারা শ্রেণীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারাই এর মূল কারণ। এদেশের বামপন্থীরা প্রতিটি গণসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, গরীব মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে আত্মত্যাগের বহু নজির সৃষ্টি করেছে। কিন্তু নানাবিধ ভাবাদর্শগত সংকটে বাম আন্দোলন বর্তমানে দুর্বল অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। আদর্শগত বিভ্রান্তি, সংশোধনবাদী চিন্তার প্রভাব, সুবিধাবাদ ও হঠকারী বিচ্যুতি, বুর্জোয়াদের লেজুড়বৃত্তির প্রবণতা, পেটিবুর্জোয়া সংকীর্ণতা ও ব্যক্তিবাদী চিন্তার প্রভাব – ইত্যাদি কারণ এর জন্য দায়ী।
বিশ্ব পরিসরে সমাজতান্ত্রিক শিবিরে সংশোধনবাদ যখন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে, যখন এদেশের বাম আন্দোলন ক্ষয়িষ্ণু দশার দিকে যাচ্ছে, ঠিক সে সময় ১৯৮০ সালের ৭ নভেম্বর বাসদ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিছুকাল পরেই বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয় ঘটে, বাংলাদেশের বামপন্থীরাও পথ হারিয়ে হতচকিত হয়ে পড়ে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বাসদ ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে এবং নীতিনিষ্ঠ সংগ্রামের জন্য বাম মহলে বিশিষ্টতা অর্জন করে। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে দলের এই আদর্শগত ও সাংগঠনিক বিকাশ স্থবিরতার মধ্যে পড়ে। যার কারণ ঘোষিত নীতিমালা থেকে প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের ক্রমাগত বিচ্যুতি।
বাসদ প্রতিষ্ঠালগ্নে সর্বহারা শ্রেণীর সঠিক বিপ্লবী দল গড়ে তোলার সংগ্রামের কিছু নীতি ঘোষণা করেছিল। জাসদ থেকে বাসদ গঠিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘সর্বহারাশ্রেণীর দল গঠনের সমস্যা প্রসঙ্গে’ পুস্তিকায় যা উল্লেখিত আছে। আমরা বলেছিলাম – শুধু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রব্যাপী মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা করতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা সেই সংগ্রামের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। এর প্রাথমিক শর্ত হিসেবে তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি দলের কাছে সমর্পণ করতে হবে এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক পারিবারিক জীবনের স্থলে দলের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে যৌথজীবন গড়ে তুলতে হবে। কমিউনিজম যেহেতু যৌথ মালিকানা ও যৌথ স্বার্থের সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, তাই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও ব্যক্তিবাদমুক্ত কমিউনিস্ট চরিত্র অর্জনের তীব্র সংগ্রাম ব্যতীত চূড়ান্ত ব্যক্তিস্বার্থপরতার এই যুগে কমিউনিস্ট আন্দোলন বেশিদূর এগোতে পারবে না। এ লক্ষ্যে আমরা কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে পার্টি হাউজ-পার্টি মেসকেন্দ্রিক যৌথজীবনের চর্চা শুরু করেছিলাম। আমরা বলেছি – জনগণের মধ্যে কাজ ও গণআন্দোলনের পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, চিন্তার দ্বন্দ্ব-সমন্বয়ের মাধ্যমে জগত ও জীবনের প্রতিটি প্রশ্ন সম্পর্কে সঠিক মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি-বিচার-বিশ্লেষণ পদ্ধতি আয়ত্ত্ব করতে আদর্শগত সংগ্রাম দলের অভ্যন্তরে জারি রাখতে হবে। এর মধ্য দিয়ে দলের মধ্যে একই পদ্ধতিতে চিন্তা, চিন্তার ঐক্য, উদ্দেশ্যের ঐক্য, দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্য গড়ে উঠবে এবং যৌথ সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় যৌথ জ্ঞানের জন্ম হবে। এই জ্ঞানের ভিত্তিতে ও সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে। দলের নেতাদের মধ্যে যিনি দলের সকল সদস্যের সম্মিলিত জ্ঞান-অভিজ্ঞতা সর্বোত্তমরূপে ধারণ করার কারণে সকলের নেতারূপে আবির্ভূত হবেন এবং আদর্শ কমিউনিস্ট চরিত্রের মূর্ত প্রতীক হিসেবে সমগ্র দলের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবেন, তার মাধ্যমে যৌথ নেতৃত্বের বিশেষীকৃত মূর্ত প্রকাশ ঘটবে এবং তিনি হবেন দলের সর্বোচ্চ নেতা। আমরা বলেছিলাম – দল পরিচালিত হবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতিমালার ভিত্তিতে এবং দলের নেতৃবৃন্দ হবেন পেশাদার বিপ্লবী (Professional revolutionary), যারা ‘দলই জীবন বিপ্লবই জীবন’ এই নীতির ভিত্তিতে সামাজিক স্বার্থের সাথে ব্যক্তিস্বার্থকে একাত্ম করার সংগ্রাম করবেন। আজকের দিনে বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার সংগ্রামের এই সকল নীতিমালা আমরা গ্রহণ করেছি এ যুগের অগ্রগণ্য মার্কসবাদী চিন্তানায়ক ও নেতা, ভারতের সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া (কমিউনিস্ট) সংক্ষেপে এসইউসিআই(সি) পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে। শুধু তাই নয়, রাশিয়া ও চীনসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় যে কারণে ঘটলো সেই আধুনিক সংশোধনবাদের উৎস ও তার বিরুদ্ধে যথার্থ সংগ্রামের দিকনির্দেশনা আমরা তাঁর চিন্তা থেকে গ্রহণ করেছি। তিনি বর্তমান কালের প্রয়োজনের নিরিখে মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে যুগোপযোগী করে ব্যাখ্যা করেছেন এবং মার্কসবাদী জ্ঞানভাণ্ডারকে বহু দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন যা আমরা সঠিক বলে গ্রহণ করেছি। ফলে আমাদের দল গড়ে উঠেছে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে এবং মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্ট্যালিন
মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা থেকে দল গড়ে তোলার সংগ্রামের মূলনীতিসমূহ আমরা গ্রহণ করেছিলাম। একে ভিত্তি করে সংগ্রামের ফলেই বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় এবং দেশের অভ্যন্তরে বাম আন্দোলনে প্রবল বিভ্রান্তি সত্ত্বেও আমাদের দল বিকশিত হয়েছে। এদেশের বামপন্থী দলসমূহের মধ্যে বিশিষ্টতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে দলের এই সাংগঠনিক ও আদর্শগত বিকাশ স্থবির হয়ে পড়ে এবং দলের মধ্যে নানাধরণের সংকট দেখা দিতে শুরু করে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে মার্কসবাদের চর্চার মাধ্যমে ব্যক্তিসম্পত্তি ও সম্পত্তিজাত মানসিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার সংগ্রাম, যৌথতা ও যৌথ জীবনের চর্চা, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ভিত্তিতে দল পরিচালনা, যৌথ নেতৃত্ব ও তার বিশেষীকৃত রূপ জন্ম দেয়ার সংগ্রাম ইত্যাদি দল গড়ে তোলার ঘোষিত নীতিমালা সঠিকভাবে অনুশীলনের ঘাটতিই এর মূল কারণ। এরই প্রকাশ ঘটেছে যৌথ জীবনের অনুশীলন না করে ব্যক্তিগত পছন্দ বা ইচ্ছার ভিত্তিতে জীবনযাপন, একক ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ঘাটতি, সমালোচনা-আত্মসমালোচনার নীতি অনুসরণ না করা, পার্টির সম্পদ ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় যৌথতার নিয়ম লঙ্ঘন ইত্যাদির মাধ্যমে। বেশ কিছুদিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের এ সকল ঘাটতি নিয়েই দল চলছে, কিন্তু বারংবার তাগিদ সত্ত্বেও দলের বিপ্লবী সত্ত্বা পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে কমরেডদের জড়িয়ে সর্বাত্মক ও কষ্টসাধ্য সংগ্রামের পথ অনুসরণ করা হয়নি।
সাংবাদিক বন্ধুগণ,
দলীয় সংগ্রাম থেকে বিচ্যুতির প্রভাব যেমন কেন্দ্রীয় সর্বোচ্চ নেতৃবৃন্দের একাংশের জীবনাচরণ ও কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে, তেমনি পার্টির রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও এতদিনকার অনুসৃত লাইন থেকে ভিন্নতা দেখা দিচ্ছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর বাসদ-সিপিবি আহুত হরতালে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা’কে প্রধান ইস্যু নির্ধারণ ও এতে সরকারের সমর্থন দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাসদ-এর ধারাবাহিক নীতিনিষ্ঠ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ, তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন শ্রমিক হত্যার নিষ্ঠুরতম ঘটনার প্রতিবাদে সরকার ও মালিকশ্রেণীর বিরুদ্ধে আমরা হরতাল ডাকতে পারিনি সাংগঠনিক সীমাবদ্ধতার কথা বলে। মূল্যবৃদ্ধিসহ জনজীবনের সংকট নিয়ে প্রতিক্রিয়াধর্মী কর্মসূচির বাইরে ধারাবাহিক গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি এবং মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার উত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলন অবশ্যই বর্তমান সময়ে বামপন্থীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো নিয়ে ধারাবাহিক ও জঙ্গী গণআন্দোলন, শ্রমিক-কৃষকের দাবিতে সংগ্রাম গড়ে তোলার মূল কর্তব্যের সাথে সমন্বিত করে মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ভাবাদর্শগত-সাংস্ড়্গৃতিক আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে। এক্ষেত্রে আক্রমণের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সমগ্র বুর্জোয়া শ্রেণী ও তার প্রতিনিধিত্বকারী শাসকগোষ্ঠী, মৌলবাদী শক্তি এদেরই অনুষঙ্গ মাত্র। অন্যদিকে, বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে বামপন্থীদের সাথে লিবারেল ডেমোক্র্যাট শক্তির যুগপৎ পদক্ষেপের ওপর কিছুদিন ধরে পার্টি প্রকাশনায় অতিরিক্ত গুরুত্বারোপ করা হচ্ছিল যা বাস্তবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। লিবারেল ডেমোক্র্যাট হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে তারা লিবারেল ডেমোক্র্যাট কিনা তাও প্রশ্নবিদ্ধ। আবার দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে এদের ভূমিকাই খুঁজে পাওয়া যায় না।
সম্প্রতি, দল কোন চিন্তার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এবং আগামী দিনে কোন চিন্তার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে – তা নিয়েই দলের অভ্যন্তরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এতদিন ধরে নেতৃত্বের বক্তব্যে এবং দলীয় প্রকাশনায় কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এখন বলা হচ্ছে তা ছিল অজ্ঞতাপ্রসূত। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর কাছে এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। অন্য কথায়, বিপ্লবী দল গড়ে তোলার নীতিগত-পদ্ধতিগত সংগ্রাম এবং বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের সংকটগুলোকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই গত কিছু দিন ধরে দুটি ভিন্নমতে দল বিভক্ত হয়ে পড়েছে যা দলের অভ্যন্তরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা সম্্ভব হয়নি।
দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ দল গড়ে তোলার আদর্শগত ভিত্তিকে সংস্ড়্গার ও সংশোধন করছেন যা পার্টির মূল চিন্তা থেকে বিচ্যুতিরই নামান্তর। বাহ্যত তারা ঐক্যের কথা বলছেন যদিও কার্যত মূল আদর্শের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আমরা দলের আদর্শ, প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণাকে ধারণ করে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। এই সংগ্রামে দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষসহ সকল দেশপ্রেমিক, বাম-গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
প্রিয় বন্ধুগণ,
আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, পুঁজিবাদী শাসন-শোষণের ফলে জনজীবনে ক্রমবর্ধমান সংকট, শিল্প-কৃষি-শিক্ষা ও জাতীয় সম্পদের উপর সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপ ও ধর্মান্ধ মৌলবাদী শক্তির বিপদজনক উত্থানের বর্তমান পটভূমিতে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরের বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ গণ-সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্যে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করব।
ধন্যবাদসহ
মুবিনুল হায়দার চৌধুরী
আহ্বায়ক
কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ