সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকা ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টু এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, গত ২৩ জানুয়ারি ‘নিপীড়ণবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ এর ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভিসি কার্য্যালয় অবরোধের সময় ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট আজ সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডাকে। ঢাকা, খুলনা, দিনাজপুরে ছাত্রলীগ ধর্মঘট পালনে বাধা দেয়। চট্টগ্রামে নগরীর রাস্তায় ছাত্রজোট যখন মিছিল করছিল, তখন ছাত্রফ্রন্ট পাঁচলাইশ থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুশফিক উদ্দিন একটি প্ল্যাকার্ড নেয়ার জন্য মিছিলের একটু পেছনে পড়ে গিয়েছিলেন। তাকে তখন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা টেনে হিচড়ে মিউনিসিপ্যাল স্কুলের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধোর করে। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের জন্য ছাত্রজোট নেতৃবৃন্দ সেখানে যান। তারা মুশফিককে উদ্ধার করে স্কুলের প্রিন্সিপালকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে আসতে গেলে তিনি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ডাকান। তারা সেসময় এই স্কুলেই উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকদের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ জোটের নেতাকর্মীদের উপর পুনর্বার ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমাবেশের দিকে যায় এবং সেখানেও হামলা চালায়। দফায় দফায় ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রফ্রন্ট নগর শাখার সহ-সভাপতি মুক্তা ভট্টাচার্য, সাংগঠনিক সম্পাদক দীপা মজুমদার, দপ্তর সম্পাদক মোঃ সায়েম, পাঠাগার সম্পাদক রাজেশ্বর দাশগুপ্ত, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যানি সেন, ডবলমুরিং শাখার সাধারন সম্পাদক রাফিসহ প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে ছাত্রজোটের সমাবেশের সময় শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা মুশফিকুর রহিম জিয়া ও যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত পালের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিলের উপর হামলা চালায় এবং ছাত্রফ্রন্ট কর্মী জয়দীপ দাসের মাথা ফাটিয়ে দেয়। আহত হন শাবিপ্রবি ছাত্রফ্রন্টের আহবায়ক প্রসেনজিৎ রুদ্র, সাধারণ সম্পাদক নাজিরুল আযম বিশ্বাস, তৌহিদুজ্জামান জুয়েল, এমকে মুনিম, আব্দুল্লাহেল কাফি, নাঈম আশরাফ আদিবসহ ১০ জন নেতাকর্মী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের হামলায় জোটের নেতাকর্মীরা আহত হন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রলীগ যেভাবে ক্যাম্পাসসমূহে দখলদারিত্ব কায়েম করছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও যৌন নিপীড়ণের মতো ঘটনা ঘটিয়েও প্রকাশ্যে বেপরোয়া চলাফেরা করছে, কতিপয় শিক্ষক যেভাবে পেশাগত সম্ভ্রম ও মর্যাদাবোধ জলাঞ্জলী দিয়ে সরকারি চাটুকারে পরিণত হয়েছেন — তাতে এ বিষয় স্পষ্ট যে এই অবস্থা মেনে নিয়ে কোন নৈতিক ও মর্যাদাবোধসম্পন্ন মানুষ এসকল প্রতিষ্ঠান থেকে বের হতে পারে না। একমাত্র এর বিরুদ্ধে লড়াই করেই ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের নৈতিকতা রক্ষা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা এই যথার্থ কাজটিই করেছেন। আজও তারা শত বাধা ও হুমকি উপেক্ষা করে ধর্মঘট পালন করেছেন। সেজন্য ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ সারাদেশে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানান ও অবিলম্বে এর বিচার দাবি করেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ ও ২৩ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলা ও যৌন নিপীড়ণের ঘটনার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানান।