দেশের প্রধান চারটি সিটি কর্পোরেশন ও নবগঠিত কালীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল বিজয়ের ঘটনাকে দেশের চলমান রাজনীতিতে নতুন মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে অনেকে মনে করছেন। তাই, দেশের রাজনীতি নিয়ে হিসাব-নিকাশও নতুন করে শুরম্ন হয়েছে। এ পরিসি’তির পটভূমি সম্পর্কে কিছু কথা বলা দরকার।
প্রধান দুই বুর্জোয়া দলের ড়্গমতাকেন্দ্রীক সংঘাতে দেশের রাজনীতিতে একটা অসি’রতা বিরাজ করছিল। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে জামাতের সহিংস তা-ব, এবং তারই ধারাবাহিকতায় হেফাজতের উত্থান। এমনই একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হল সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। খুব স্বাভাবিক কারণেই এ নির্বাচনকে ঘিরে সকলের মনযোগ নিবদ্ধ হয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফল পুরোপুরি আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বিরম্নদ্ধে গিয়েছে। বিএনপি-পন’ীরা বলতে চাইছেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ গত সাড়ে চার বছরের দুর্নীতি-দুঃশাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর আওয়ামী লীগ দেখাতে চাইছে, তাদের অধীনেও সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন সম্ভব। ফলে তত্ত্বাবাধায়ক সরকারের কোনও দরকার নেই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পুরনো একটি কথা নতুন করে বলতে শুরম্ন করেছেন; সেটি হল – তত্ত্বাবধায়ক সরকার ড়্গমতায় এলে তারা আর ড়্গমতা ছাড়তে চাইবে না, এমনকি কেয়ামত পর্যনত্ম তারা ড়্গমতায় থাকবে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক বিশেস্নষকদের ভাষ্যে আরো একটি বিষয় উঠে এসেছে। সেটি হল, এ নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একটি বড় ফ্যাক্টর বা উপাদান হিসাবে কাজ করেছে। ইসলামী ধর্মভিত্তিক রাজনীতির এই প্রভাব, এদেশের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ এবং অন্যান্য ধর্মীয় সমপ্রদায়ের মানুষের মনে খানিটকা ভীতির সঞ্চারও করেছে।
এটা সকলেরই জানা যে, বর্তমান সরকার ড়্গমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস’া বাতিলের কথা জোরেশোরে বলা শুরম্ন করে। সরকারের এ মনোভাব
বিএনপি ও তার সহযোগিদের মনঃপূত হয়নি, হওয়ার কথাও নয়। তারা এর বিরম্নদ্ধে অবস’ান নেয়। প্রথম দিকে যা ছিল কথার পাল্টাপাল্টি সেটাই ক্রমে সংঘাত-সহিংসতায় রূপ নেয়। আওয়ামী লীগ চেয়েছে আদালতের রায়কে কাজে লাগিয়ে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে নিজেদের অবস’ানকে দৃঢ় করতে। বিপরীতক্রমে বিএনপি ও ১৮ দল হরতাল-অবরোধ দিয়ে সরকারের সিদ্ধানেত্মর বিরম্নদ্ধাচরণ করে এসেছে।
বিএনপি ও তার সহযোগিরা শুরম্ন থেকেই এ কথা বলে আসছিল যে দলীয় সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। কারণ, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেড়্গ হতে পারে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলতে চেয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস’া যেহেতু অনির্বাচিত ব্যবস’া, তাই এটি সংবিধান-সম্মত নয়। আর তাছাড়া তত্ত্বাবাধয়ক সরকারের নামে যারা ড়্গমতায় আসবে তারা ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা বাসত্মবায়ন করবে, তারা আর ড়্গমতা ছাড়বে না। ফলে আওয়ামী লীগ কিছুতেই তত্ত্বাবাধয়ক সরকার ব্যবস’া মেনে নেবে না। পরিবর্তে অন্য কোনো পদ্ধতি হতে পারে। এই নিয়েই চলছিল রাজনীতির টাগ-অফ-ওয়ার। এর সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, খালেদা-তারেক-কোকোর মামলা ইত্যাদি ছিল সম্পূরক ইস্যু। এ অবস’া চলতে চলতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি একসময় প্রধান বিষয় হিসাবে সামনে চলে আসে। তখন আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং এর বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে জামাত সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং জামাতের তা-ব দেশবাসীকে শঙ্কিত করে তোলে।
জামাতের সশস্ত্র তা-বের পাশাপাশি, জামাতের সাথে সরকারের নানামুখী আঁতাত-আপসের লড়্গণ যা প্রকাশিত হচ্ছিল তাতে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বিচলিত এবং বিড়্গুব্ধ হয়ে উঠেছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শাহবাগের গণজাগরণ আন্দোলনে। তরম্নণ প্রজন্মের নেতৃত্বে সংঘটিত এ আন্দোলন নানা দিক থেকেই ছিল অভূতপূর্ব। কিন’ তরম্নণ প্রজন্মের বন্ধুদের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার কারণে এবং বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর সুস্পষ্ট অবস’ান নিতে না পারায় গণজাগরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত সরকারবিরোধী মনোভাব এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ চাপা পড়ে যায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে সরকার তার হারিয়ে যাওয়া ভাবমূর্তি পুনরম্নদ্ধারের কাজে লাগাতে চাইছে, এটাই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। গণজাগরণ মঞ্চ একটা বিরাট সম্ভাবনা তৈরি করতে পেরেছিল। কিন’ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং গণআন্দোলন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির বিভ্রানিত্মর কারণে কত সহজেই তা সিত্মমিত হয়ে গেল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুকে হাতিয়ার করে সরকার নিজেদের সকল অপকর্ম, দুর্নীতি-দুঃশাসন-দুষ্কৃতি আড়াল করে হারানো জনপ্রিয়তা পুনরম্নদ্ধার করে ফেলছে, এ চিনত্মা বিএনপিকে অস্বসিত্মতে ফেলে দেয়। অন্যদিকে জামাত-সহ স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন শক্তি তো নিজেদের অসিত্মত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই এর বিরম্নদ্ধে অবস’ান নিয়েছিল। এর সাথে যুক্ত হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির পরিকল্পনা। এসব কিছুর সম্মিলনের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে হেফাজতে ইসলামের। বিএনপি-র সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা এতে শক্তি যোগায়। আমরা দেখেছি, গণজাগরণের আন্দোলনকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রানত্ম করে দেশের মধ্যে সহিংস পরিসি’তি তৈরি করা হয়েছিল। হেফাজতের উত্থানের ড়্গেত্রে, শুরম্নর দিকে, সরকারও পরোড়্গে মদদ দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মানুষদের ভোট টানা আর হেফাজমের মাধ্যমে ধর্মভিত্তিক ভোট কব্জা করা – এই উভয়মুখী নীতি আওয়ামী লীগ অনুসরণ করেছে। হেফাজতের দাবি মেনে বস্নগারদের গ্রেফতার করা, গণজাগরণমঞ্চ বন্ধ করে দেয়া ইত্যাদি ঘটনা সবাই জানেন। এমনকি এক পর্যায়ে সারাদেশে ১ মাস মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কথাও সরকারের পড়্গ থেকে বলা হয়েছে। কিন’ যাই হোক, গাছেরটাও খাওয়া আর তলারটাও কুড়ানো শেষ পর্যনত্ম হয়ে উঠেনি। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল, সেই ইঙ্গিতই রেখে গেছে।
কারো কারো মনে হতে পারে, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ব্যবস’া না হলে জনগণের আপেড়্গিক স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকার চর্চার পরিবেশ বজায় থাকবে না। এ আশঙ্ক্ষার বাসত্মব ভিত্তি অবশ্যই আছে। কিন’ আপেড়্গিক স্বাধীনভাবে ও নিরাপদে ভোট প্রদানকেই (যদিও অর্থ-পেশী শক্তি ও প্রচার মাধ্যম জনমতকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে) যখন সমসত্ম কিছুর ঊর্ধ্বে তুলে ধরে জনগণের অপরাপর সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে চাপা দেয়ার আয়োজন করা হয় তখন পরোড়্গে গণতন্ত্রের কবর দিয়ে ফ্যাসিবাদী ব্যবস’া কায়েমের পথ সুগম করা হয় মাত্র। বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোট সে কাজটিই করছে। আওয়ামী লীগ চাইছে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আরেকদফা ড়্গমতায় থাকতে, আর বিএনপি চাইছে বর্তমান সরকারের অপকীর্তিকে দেখিয়ে নিজেদের বাক্সে ভোট টানতে। তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্দলীয় সরকারের বিতর্কের ভরকেন্দ্র এখানেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নিজেদের নেতানেত্রীদের নামে মামলা নিয়ে বিএনপি গত ৪ বছরে যত কথা বলেছে, যত হরতাল দিয়েছে তার প্রায় সিকিভাগ শক্তিও সে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রড়্গায় ব্যয় করেনি। এ চার বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেল-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, সাধারণ মানুষের শিড়্গা-চিকিৎসার অধিকারহীনতা ইত্যাদি বহুবিধ যে সংকটে দেশের মানুষ জর্জরিত, এর কোনোটি নিয়েই বিএনপি ও তার জোট গণআন্দোলন গড়ে তোলার পথে যায় নি। তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকা- শে্রমিক হত্যা, রানা পস্নাজা ধসে ১২শত শ্রমিক গণহত্যার ঘটনাসহ গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবি নিয়েও তারা সরকারকে দোষারোপ করার বাইরে কোনো আন্দোলন গড়ে তোলার পথে যায় নি। আমাদের জাতীয় সম্পদ গ্যাস-কয়লা রড়্গার আন্দোলনেও ১৮ দলীয় জোটের অংশগ্রহণ নেই। একইভাবে মার্কিন স্বার্থে টিকফা এবং ভারতের স্বার্থে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও বিএনপি নিরবতাই পালন করছে। র্যাব এবং ক্রসফায়ার নিয়ে এ দল দুটি ড়্গমতায় থেকে এক ধরনের বক্তব্য এবং ড়্গমতার বাইরে থেকে বিপরীত বক্তব্য প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চয়ই আমাদের মনে আছে।
জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ড়্গমতায় যেতে চায়, কিন’ জনগণের অধিকারের দাবি নিয়ে সে লড়ছে না কেন? কারণ, বুর্জোয়ারা এটা খুব ভালো করেই জানে যে আজকের দিনে জনগণের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন শেষপর্যনত্ম বুর্জোয়া ব্যবস’ার বিরম্নদ্ধেই পরিচালিত হবে। ফলে গণআন্দোলনকে দমন করতে, বিপথে পরিচালিত করতে, পেছন থেকে ছুরি মারতে তারা সব সময়ই সচেষ্ট থাকে। বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।
জঙ্গীগোষ্ঠীর সহিংসতা রোধে দেশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার একটা কথা শোনা গিয়েছিল। এ ঘোষণাকে অবলম্বন করেই সরকার ঢাকায় বাসদ, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বাধা দিয়েছে, কোথাও কোথাও গ্রেফতার পর্যনত্ম করেছে। বাধা দেয়া হয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রতিবাদ বিড়্গোভে। এর পাশাপাশি সমপ্রতি সন্ত্রাস দমন আইনে এমন কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে যা স্বাধীন মতপ্রকাশের ড়্গেত্রে চূড়ানত্ম বাধা হিসাবে কাজ করবে। একই কথা প্রযোজ্য শ্রম আইনের সংশোধনীর ড়্গেত্রেও। শ্রমিকদের যে-অধিকারগুলো এতদিন কাগজে-কলমে স্বীকৃত ছিল এ-সংশোধনীর মাধ্যমে তাও কেড়ে নেয়ার আয়োজন করা হচ্ছে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের দিক থেকে দেখলে, এটা অত্যনত্ম বিপজ্জনক প্রবণতা। এগুলো সরকারের ফ্যাসিস্ট মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। কিন’ এ শুধু আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারেরই নয়, এটা আমাদের দেশের শাসকদের সাধারণ প্রবণতা, এবং দিন দিন এ প্রবণতা বাড়ছে। বিএনপি নিজেদের উপর সরকারের আক্রমণের প্রতিবাদ যতটা করছে, সে অনুযায়ী জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, প্রতিবাদ করার অধিকার রড়্গার জন্য কোনো আন্দোলনে এগিয়ে আসেনি। কারণ, ভবিষ্যতে ড়্গমতায় গিয়ে জনগণকে দমন করার জন্য এ সমসত্ম হাতিয়ার তারাও ব্যবহার করবে।
ড়্গমতার পালাবদল কেমন করে হবে, এ বিতর্কের নিশ্চয়ই ফয়সালা হবে। কিন’ জনগণের সামনে আরও বড় প্রশ্ন অপেড়্গা করছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, ড়্গমতার পালাবদল যে প্রক্রিয়াতেই হোক না কেন, তাতে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার বাসত্মবায়নের কোনো সম্ভবনা নেই। মানুষ আড়্গেপ করে বলে, যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ। মানুষ আরো খারাপ দিনের জন্য অপেড়্গা করছে। ফলে নির্বাচন যেভাবেই হোক, তাতে পরিণতি পাল্টাচ্ছে না।
বাংলাদেশে বুর্জোয়াশ্রেণী কি ভয়াবহ দুঃশাসন চালাচ্ছে, রানা পস্নাজা ধসে ১২শত শ্রমিকের মর্মানিত্মক মৃত্যুর ঘটনা তারই নজির। বুর্জোয়াদের এই দুর্নীতি-দুঃশাসন থেকে মানুষ রেহাই চায়। সে কারণেই দ্বি-দলীয় দুঃশাসনের চক্র থেকে বেরিয়ে আসার একটা আকাঙ্ক্ষা দেশের রাজনীতিতে, প্রধানত শিড়্গিক মধ্যবিত্ত মহলে শুনতে পাওয়া যায়। অনেক সময় সাধারণ মানুষও এ আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি করেন। সেখান থেকেই বিকল্প শক্তির কথাটা শোনা যায়। একটা সংগঠিত বুর্জোয়া ব্যবস’া, যার পেছনে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির প্রত্যড়্গ-পরোড়্গ সহযোগিতা আছে, তাকে নিছক আকাঙ্ক্ষার জোরে পরিবর্তন করা যায় না। মনে রাখতে হবে, পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা বা বিকল্পের আকাঙ্ক্ষা শ্রেণীগতভাবে বুর্জোয়া পরিধির মধ্যেই জন্মেছে। বুর্জোয়ারা মিডিয়া এবং অন্যান্য শক্তির মাধ্যমে বিকল্পে এ আকাঙ্ক্ষাকে বুর্জোয়া রাজনীতির গ-িতে, নির্বাচনী রাজনীতির গ-িতে আটকে রাখতে চায়। বিকল্প শক্তি বলতে সাধারণ মানুষ, এমনকি অনেক শিড়্গিত মানুষও বুর্জোয়া পার্লামেন্টারি রাজনীতির বিকল্প, নির্বাচনী বিকল্পের কথা ভাবছে এবং বলছে।
বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা বামপন’ীরাও বলছেন। কিন’ তার সাথে বুর্জোয়া পার্লামেন্টারি রাজনীতির বিকল্পের ধারণার সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য স্পষ্ট করে তোলাও বামপন’ীদের দায়িত্ব। দুটো শর্ত মেনেই আমাদের সে পার্থক্য সুস্পষ্ট করতে হবে। প্রথমত, জনজীবনের জ্বলনত্ম সমস্যাগুলি নিয়ে ধারাবাহিক, দীর্ঘমেয়াদী, কষ্টকর গণআন্দোলন গড়ে তোলা, আন্দোলনকারী জনগণের শক্তি গড়ে তোলা এবং দ্বিতীয়ত, এই গণআন্দোলনের সামনে যথার্থ বিপস্নবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মাধ্যমেই আমরা মানুষের মনে এ বুর্জোয়া ব্যবস’ার অসারতা এবং সমাজতন্ত্রের যথার্থতা তুলে ধরতে সড়্গম হবো, বুর্জোয়া পার্লামেন্টারি রাজনীতির বিকল্প হিসাবে জনগণের আন্দোলনকারী বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে পারব।
আমাদের দল এককভাবে, এমনকী বামপন’ীরা সম্মিলিতভাবেও এ মুহূর্তে বিরাট-ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তোলার মতো শক্তি রাখে না। এটি সত্য। সে কারণেই আমরা সকল বামপন’ী শক্তির প্রতি আহ্বান জানাই, প্রত্যেকেই স্ব স্ব অবস’ান থেকে জনজীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে এগিয়ে আসুন। এ আন্দোলন গড়ে তোলার পথেই একটা যথার্থ কার্যকরী বাম ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় বামপন’ীদের যে ঐক্য গড়ে উঠবে, সেটাই আবার ভবিষ্যতে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের ভিত্তি রচনা করবে। আমরা আনত্মরিকভাবেই এ আহ্বান দেশের বাম শক্তিগুলির সামনে রাখছি। বামপন’ীদের নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলন গড়ে তোলার পথেই শাসকশ্রেণীর ফ্যাসিবাদী প্রবণতাকে প্রতিরোধ করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরড়্গা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।