সকল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি লঙ্ঘন করে উজানে একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তাকে শুকিয়ে মারছে। গত ৬ বছর ৩ জেলার ১২ উপজেলার কৃষক ক্ষেতমজুর ও কৃষিজমি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। হাজার হাজার মৎস্যজীবী ও মাঝি পরিবার বেকার। কৃষক জনতার মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হাহাকার।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, তিস্তা দিয়ে একসময় শুষ্ক মৌসুমে ১৪ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হত। কিন্তু ভারত গজলডোবা ব্যারেজের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করার পর বাংলাদেশে এই পানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার কিউসেক। খড়া মৌসুমে তা ২৫০-৩০০ কিউসেকে নেমে আসে। বৃহত্তম রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি ও বগুড়া জেলার সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয়। সেচ প্রকল্প চালু থাকলে চাষীরা ২০০-২৫০ টাকায় প্রতি বিঘা জমিতে পুরো মৌসুম জুড়ে পানি দিতে পারে। কিন্তু সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকলে সেই জমিতে সেচ খরচ পড়ে ২০০০-২৫০০ টাকা। এছাড়া কৃত্রিমভাবে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচ দেবার ফলে পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে মরুকরণের সম্ভাবনার পাশাপাশি পানিতে আর্সেনিক বিষ মিশ্রিত হয়ে ব্যাপক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
আমাদের দেশের ১১৭ কিলোমিটার তিস্তা নদী শুকিয়ে গেছে। ভারত সরকার একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘জলপ্রবাহ কনভেনশন’ এ পানি প্রবাহের ক্ষেত্রে যুক্তি ও ন্যায়পরায়নতার নীতিমালা গ্রহণ করে। এর মূল কথা হলো উজানের কোনো দেশ ভাটির কোনো দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে একক সিদ্ধান্তে পানি আটকাতে পারে না। অথচ ভারত এই কাজটি করেছে। আইনে বলা আছে, ‘ কোনো রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের গৃহীত পানি নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’ হেলসিংকি নীতিমালাতেও বলা আছে, প্রতিটি নদী তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানা, পানি সম্পদের ব্যবহার ভোগ করবে ‘যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার’ ভিত্তিতে। তাও তারা মানছে না। তারা আমাদের সাথে বৃহৎ রাষ্ট্রসুলভ আচরণ করছে, সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। এই অবস্থা শুধু তিস্তার ক্ষেত্রেই নয়, ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর পানি প্রবাহ তারা একইভাবে নিয়ন্ত্রণ কিংবা অন্যায়ভাবে প্রত্যাহার করছে।
এই অবস্থায় বাসদ (মার্কসবাদী) গত ৬ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনের অংশ হিসাবে প্রচার মিছিল, সমাবেশ, রোড মার্চ, ঘেরাও কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। ‘তিস্তা ও কৃষি বাঁচাও আন্দোলন’ নামক গণকমিটির মাধ্যমে এই আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছে। ভারতের পানি আগ্রাসন এবং সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে আরও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া জনগণের সামনে অন্য কোনো বিকল্প পথ নেই।