সকল শ্রমিকের আট ঘন্টা কর্মদিবস, ১৬ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন চাই
মহান মে দিবসের ১৩২তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের উদ্যোগে ১ মে ২০১৮ সকাল সাড়ে দশটায় লাল পতাকাশোভিত মিছিল ও পরবর্তীতে তোপখানা রোডস্থ শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবন চত্বরে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমরেড আ ক ম জহিরুল ইসলাম ও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মানস নন্দী, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন, রাজু আহমেদ, মো. ইদ্রিস, আনোয়ার হোসেন, মানিক হোসেন, মামুন মিয়া প্রমুখ। সমাবেশে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “মে দিবস নিছক আনন্দ-উদযাপন করার দিন নয়। সকল ধরণের শোষণ-জুলুম-বৈষম্য থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন। শ্রমিকদের লড়াই এবং জীবনদানের বিনিময়েই মালিকেরা স্বীকার করে নিয়েছিল শ্রমিকেরাও মানুষ, তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম-বিনোদনের অধিকার আছে। কিন্তু আজকে যেন গোটা বিশ্ব আবারও উনিশ শতকে ফিরে যাচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় এবং শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দেশে দেশে মালিকশ্রেণী আবারও উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। লাগামহীন শোষণ ও লুটপাটের স্বার্থে তারা শ্রমিকশ্রেণীর সমস্ত অধিকারকে পায়ে মাড়াচ্ছে।”
তাঁরা বলেন, “বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের বর্তমান অবস্থার সাথে দেড়শ বছর পূর্বেকার অবস্থার বড় কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ শুধু শ্রমিকরা নন, যারা বহু বেতনের কর্পোরেট কাজ করেন তারাও ৮ ঘন্টা কাজের নিয়ম মানতে পারেন না। পুঁজিবাদ শ্রমিকের জীবন থেকে স্বাভাবিক বিশ্রাম-বিনোদন কেড়ে নিয়েছে। এদেশে এখনো অধিকাংশ শ্রমিক নিয়োগপত্র, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, ওভারটাইম, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, প্রোডাকশন বোনাস কিছুই পায় না। না আছে কারখানায় বা কর্মস্থলে থাকার মতো ব্যারাক-কলোনি, না আছে চিকিৎসা সুবিধা, না পায় রেশন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল বৃদ্ধি, শিক্ষা-চিকিৎসার বাড়তি খরচের চাপে সীমিত আয়ের শ্রমিক-কর্মচারীরা দিশেহারা। শ্রমিকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নেই। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজাতে হাজারো শ্রমিক মরেছিল, কিন্তু আজও কোনো আধুনিক ক্ষতিপূরণ আইন সরকার করেনি।”
তাঁরা আরো বলেন, “শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, জাতীয় উৎপাদন বাড়ছে, মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ছে, কিন্তু শ্রমিকের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ড গঠিত হয়েছে। এদেশে মজুরির হার বিশ্বে সর্বনিম্ন, ফলে শ্রমিক নিজেই বাধ্য হয় ওভারটাইম করতে। তাই, আমাদের সংগঠন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন দাবি তুলেছে – বর্তমান বাজারে মানুষের মত বাঁচতে হলে নিম্নতম মোট মজুরি ১৬,০০০ টাকা (বেসিক মজুরি ১০০০০ টাকা, ৪০% বাড়িভাড়া ৪০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫৭০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৭৮০ টাকা, টিফিন ভাতা ৬৫০ টাকা) দিতে হবে। এ দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ, ২০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় পে-স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১৫,২৫০ টাকা। শ্রমিকরা এর চাইতে কম পেতে পারে না।”
নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান, “১৬ হাজার টাকা নিম্নতম জাতীয় মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন। পাশাপাশি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই বেগবান করুন। এই লক্ষ্যে মালিকশ্রেণীর দালাল সুবিধাবাদী ও আপোষকামী নেতৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে আদর্শবাদী বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করুন।”