“ফিলিস্তিনে আবারও শুরু হয়েছে বর্বর হত্যাযজ্ঞ। জেরুজালামে মার্কিন দূতাবাস স্থাপনকে কেন্দ্র করে সংগঠিত বিক্ষোভে ইসরায়েলী সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মম হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক, শিশু মৃত্যুবরণ করেছে। সারা পৃথিবীর গণতন্ত্রমনা মানুষ যখন এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার তখন বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আর ফিলিস্তিনিদের রক্তের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিআমিন নেতানিয়াহু এই ঘটনাকে ‘গৌরবোজ্জ্বল’ বলে উল্লাস প্রকাশ করছেন। আমরা এই রক্তপিপাসু, বিশ্ব সন্ত্রাসী, অস্ত্রকারবারি, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হরণকারী ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানাই। সাথে সাথে আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে দাবি জানাই অবিলম্বে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুসহ অন্যান্যদের বিচার করুন। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীলমনা নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাই – ইসরায়েলের সাথে সমস্ত রকম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার বিরোধিতা করুন, এই গণহত্যার বিরুদ্ধে সর্বাত্মকভাবে অবস্থান নিন।”
ফিলিস্তিনে ইসরায়েল পরিচালিত হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক, বাসদ (মার্কসবাদী)র কেন্দ্রীয় সদস্য এবং সমাবেশের সভাপতি কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী তাঁর বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
১৬ মে ’১৮ বিকেল সাড়ে চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসান রুবেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মীর মোস্তাক প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণ স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। এই দীর্ঘ সময়ে কত রক্তপাত, কত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কিন্তু মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদ, ইসরায়েলকে অর্থ-অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার কারণে আজও ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূ-খন্ডের অধিকার ফিরে পাইনি। যুক্তরাষ্ট্র পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিজেদের কর্তৃত্ব জারি রাখার স্বার্থেই যুগের পর যুগ ইসলায়েলকে সহযোগিতা করেছে এবং ফিলিস্তিনের রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে। আজ ইজরায়েল আরও শক্তিশালী। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের মিত্র। মধ্যপ্রাচ্যের আরেক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র সৌদি আরবের সাথেও ইসরায়েলের রয়েছে অর্থনৈতিক-সামরিক সম্পর্ক। এই সমস্ত যুদ্ধবাজ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের বীর জনগণ যে অভূতপূর্ব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তা বিশ্বের প্রতিটি নিপীড়িত-শোষিত জাতির জন্য এক অনুপ্রেরণা।
ফিলিস্তিনে নির্মম গণহত্যা চললেও আমাদের দেশের সরকার নামমাত্র ও লোক দেখানো প্রতিবাদ করেছে। তাদের এই ভূমিকার কারণ তারাও, ফিলিস্তিনে যে জোট প্রধানত ইসরায়েলকে সহায়তা করছে, সেই মার্কিন-সৌদি জোটের সাথে সম্পর্কিত। গত কিছুদিন আগে সৌদি আরবের সামরিক মহড়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেছিলেন। ফলে এই সরকারের কোনো নৈতিক অবস্থান নেই ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানোর। আর যে কায়দায় এই সরকার দেশের জনগণের উপর নিপীড়ন করছে তাদের পক্ষে নিপীড়িতদের পক্ষে অবস্থান করা অসম্ভব।”
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ফিলিস্তিনে মার্কিন মদদে ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধের দাবি জানান এবং এজন্য বিশ্বের সকল মেহনতি-গণতন্ত্রমনা মানুষকে প্রতিবাদে সোচ্চার হবার আহ্বান জানান।