“রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ‘মাদক বিরোধী অভিযান’ একটি আই-ওয়াশ মাত্র। সরকরের মদদে ও সহযোগিতাতেই সারা দেশে মাদক ব্যবসা পরিচালিত হয় এবং হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে নানা সময়ে এ সমস্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি পুলিশের থানাতেও মাদকব্যবসা করার অভিযোগ আছে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার না করে মাদক নির্মূলের নামে বাস্তবে মানুষ হত্যা চলছে। গত কয়েকদিনে প্রায় দেড়শ মানুষকে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুন করেছে। প্রতিবারই ‘ক্রসফায়ার’ নামক একই গল্পের পুনরাবৃত্তি ঘটলেও এবারের টেকনাফের কাউন্সিলর একরামুল হকের হত্যাকাণ্ড সরকারি বাহিনীর মিথ্যাচার উন্মোচন করেছে। এগুলো যে পরিকল্পিত ব্যাপার, কোনো তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ নয়, তা প্রকাশিত অডিও রেকর্ডে বোঝা যাচ্ছে। একইসাথে এ কথাও বলতে হয় – কেউ যদি সত্যি সত্যি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতও থাকে, তাকে বিনাবিচারে হত্যা করার কোনো অধিকার সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেই। এসব কর্মকাণ্ড স্পষ্টত সংবিধান, আইনের শাসনের পরিপন্থী।”
৩ জুন, ২০১৮ রবিবার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সাম্প্রতি ঘটে চলা মাদক নির্মূলের নামে রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভার সভাপতি, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু এ কথাগুলো বলেন। আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইভা মজুমদার ও সদস্য মাসুদ রেজা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ”আমাদের আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে সরকার তার বিরোধী ও প্রতিবাদের শক্তিকে দমন ও নিয়ন্ত্রনের জন্য এই অমানবিক পথ বেছে নিয়েছে। তারা নিরাপরাধ, খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যা করে বাস্তবে একটি ভীত- সন্ত্রস্ত পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে। ‘ক্রসফায়ার’ কোনো সভ্য-গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। বিনা বিচারে মানুষ হত্যা রাষ্ট্রীয় বর্বরতারই একটি নমুনা। এ অপতৎপরতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
আজ দেশে এত বড় অন্যায়-অবিচার চলছে কিন্তু তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ নিশ্চুপ। তারা বরং চাটুকারিতা প্রদর্শন করে সরকার প্রধানকে ‘এই অভিযানে মানুষের সমর্থন আছে’ বলে মিথ্যাচার করছে। একটা ফ্যাসিবাদী শাসন যে কীভাবে মনুষ্যত্ব-মানবিকতাকে ধ্বংস করে, ক্ষমতার পদলেহী বানায় – বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে তা খুব ভালো করে বোঝা যায়। এ অবস্থায় দেশের প্রতিটি বিবেকবান-গণতন্ত্রমনা মানুষকে বুঝতে হবে – তাদের পক্ষে বলার জন্য এই চেতনা ব্যবসায়ীরা কখনই দাঁড়াবে না। দাঁড়াতে হবে নিজেদেরই। নিজেদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি, প্রতিবাদের শক্তিই কেবল এমন দমবন্ধ করা অবস্থা থেকে বাঁচবার পথ তৈরি করতে পারে। এ লক্ষে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী সকলকে এক কাতারে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ে অংশ নিতে হবে।”
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল প্রেসক্লাব চত্ত্বর প্রদক্ষিণ করে।