বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে শিক্ষার্থী হত্যার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনে উত্থাপিতযৌক্তিক দাবিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ছাত্র হত্যার বিচারেরদাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এ আন্দোলন থেকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা এবং পরিবহন খাতে আইনের শাসন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনারদাবি উঠেছে। শুধু আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়, কারণ আশ্বাস বরাবরই প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে সরকার ব্যবহার করেছে। সড়ক পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের পেছনে সরকারের দায় স্বীকার করেদ্রুত দাবি পূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।”
তিনি আরো বলেন, “সরকারি গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাবে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন খাত মুনাফালোভী বাসমালিক, চাঁদাবাজ শ্রমিক নেতা নামধারী মাফিয়া-সরকারদলীয় নেতা এবং ঘুষখোরপুলিশ-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সি-িকেটের হাতে জিম্মি। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অমান্য করে সিটিং গাড়ির নামে এরা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে দুর্নীতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল, একই রুটে বহু কোম্পানির বাস, সড়কে ত্রুটি, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব, বেপরোয়া গাড়িচালনারজন্য চালক ও মালিকদের পর্যাপ্ত শাস্তির বিধান ও তার প্রয়োগ না থাকার কারণে সড়কে মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। এর সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – ট্রিপ সিস্টেমে গাড়ি চালানোয় চালকদেরওপর অতিরিক্ত গাড়ি চালানোর চাপ। মুনাফা বাড়াতে বাস মালিকরা ড্রাইভারদের নিয়োগপত্র ও মাসিক বেতনের ভিত্তিতে স্থায়ী নিয়োগ দেন না। কত বেশি ট্রিপ চালানো যাবে ও কত বেশি যাত্রী পাওয়াযাবে তার ওপর পরিবহন শ্রমিকদের পাওনা নির্ভর করে। ফলে আয় বাড়াতে বেশি ট্রিপ চালানোর জন্য চালকরা নিয়মভঙ্গ করেন। বিভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কে কত বেশি যাত্রীতুলতে পারে। গাড়ি চালাতে না পারলে তাদের কোন আয় হয় না। ফলে, পরিবহন শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজের চাপ ও বেপরোয়া গাড়ি চালনার জন্য মালিকরা বহুলাংশে দায়ী। আর লাইসেন্সবিহীনবা অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো ও ফিটনেসবিহীন যান চলাচলের দায় সরাসরি মালিকের। অথচ পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা বিরোধে লিপ্ত হয়, মালিকরা নিরাপদে মুনাফা লোটে। ফলে পরিবহনখাত থেকে লাভবান হওয়া সি-িকেটের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া সড়কে আইনের শাসন ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ দায়িত্ব সরকারের, যা তারা পালন করছেন না শুধুনয়, পরিবহন খাতের মাফিয়া গডফাদাররা সরকারের সাথেই যুক্ত। এ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার দাবি জানাচ্ছি।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আরো বলেন, “শিক্ষার্থীরা অভূতপূর্ব এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে অবহেলা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এই আন্দোলনসহমর্মিতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ, সাহসিকতা ও পরিবর্তনের জন্য সংগ্রামের যে মানসিকতা প্রদর্শন করেছে আমরা তাকে অভিনন্দন জানাই। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ, তারা যে সংগ্রাম করছে তাসারাদেশের মানুষের জন্য শিক্ষণীয়। একইসাথে আমরা এই ন্যায্য আন্দোলনকে বেগবান করতে শিক্ষার্থীদের পাশে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।”