সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত শ্রম (সংশোধনী) আইনকে সরকারের দাবি অনুযায়ী ‘শ্রমিকবান্ধব’ তো নয়ই, বরং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এবং শ্রমিকদের সাথে প্রতারণামূলক বলে অভিহিত করেছে বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জহিরুল ইসলাম ও উজ্জ্বল রায় গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “বিদ্যমান শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাগুলো বাতিল করে একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছে। অথচ সরকার সে দাবি অনুসারে অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো বাতিল তো করেইনি, বরং নতুন সংশোধনীকে কৌশলপূর্ণ চাতুর্যের সাথে ‘অধিক শ্রমিকবান্ধব’ হিসেবে দেখিয়ে তার আড়ালে শ্রমিক অধিকার হরণের সমস্ত আয়োজন ও বিধিবিধান অক্ষুন্ন রেখেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “পূর্বের ৩০% শ্রমিকের স্থলে বর্তমানে ২০% শ্রমিকের সম্মতিতে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে – এ সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে আরো সহজ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অথচ এ ধরণের শর্ত আরোপ সরকার স্বীকৃত আইএলও সনদের ৮৭ ও ৯৮ ধারার (সংঘবদ্ধ হওয়া,স্বাধীনভাবে সংগঠন করা ও নেতানির্বাচনের অধিকার) পরিপন্থী। আই এলও কনভেনশনে আছে, ১০ জন শ্রমিকও ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে তাদের অনুমতি দিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৭ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যায়। শ্রম আইনের ২৩, ২৬, ১৮০ ধারা বহাল রেখে কার্যত ট্রেড ইউনিয়ন গঠন অসম্ভব করা হয়েছে। ২৩, ২৬ ধারা ব্যবহার করে মালিক শ্রমিককে ইচ্ছেমতো ছাঁটাই করতে পারে। ১৭৯, ১৮০এর মতো কালো ধারাও বহাল আছে, যাতে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের মৃত্যুতে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারের প্রতি চরম উপহাসের সামিল। এ প্রস্তাব আইএলও কনভেনশনের ১২১ ধারার আজীবন আয়ের সমানক্ষতিপূরণের বিধান এবং রানা প্লাজা ধ্বসের পর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটির ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাসের প্রস্তাব বৈষম্যমূলক। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত/সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস চালু আছে। পূর্বে শ্রমিক সরাসরি শ্রম আদালতে মামলা করতে পারতো। এখন শ্রম আইনের সংশোধনীতে মামলা করার জন্য কলকারখানা পরিদর্শক অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এঅনুমতি নিতে গিয়ে শ্রমিক দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হবে। এছাড়া, ‘খাবার এবং বিশ্রাম ছাড়া টানা ১০ ঘন্টার বেশি কাজকরানো যাবে না’ — এ কথা বলে শ্রমিকের কর্মদিবস ১০ ঘন্টা নির্ধারণ করে রক্তস্নাত ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। ফলে শ্রম আইন (সংশোধনী) ২০১৮ এর মাধ্যমে সরকার মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী হিসেবে তার অতীতের বিশ্বস্ত ভূমিকাই পালন করেছে।”
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে এ অগণতান্ত্রিক শ্রম (সংশোধনী) আইন অবিলম্বে বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নেরজোর দাবি জানান এবং এ লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তুলতে শ্রমিক শ্রেণীর প্রতি আহ্বান জানান।