অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আজ ঢাকায় নির্বাচন কমিশন ঘেরাও ও জেলা পর্যায়ে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক। বক্তব্য রাখেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক। সভা পরিচালনা করেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন। কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে সমাপনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও সিপিবি’র সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে তা বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন আওয়ামী লীগের অধীনে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই। তারা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের পেশকৃত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচনের কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। তারা নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা ও প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের অগণতান্ত্রিক শর্ত বাতিল, প্রার্থীর জামানত ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচনী ব্যয় ৩ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে কঠোরভাবে তা মেনে চলতে বাধ্য করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১% ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিধান বাতিল, অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান চালু, প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক টিআইএন ও বাধ্যতামূলক সিডি ক্রয় প্রত্যাহার করা, ভোটারের ইচ্ছায় জনপ্রতিনিধি (সংসদ সদস্য) প্রত্যাহার করা ও ‘না’ ভোটের বিধান চালু করার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করে বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করার দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ ডিজিটাল কারচুপির লক্ষ্যে ইভিএম চালুর অপচেষ্টা বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ঘেরাও মিছিলে পুলিশী হামলা
সমাবেশ শেষে ঘেরাও মিছিল মৎস্য ভবন, শাহবাগ হয়ে কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে পৌঁছলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক, বাসদ কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নুসহ আরো আহত হন সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, লুনা নূর, নিমাই গাঙ্গুলী, শরিফুজ্জামান শরীফ, মঞ্জুর মঈন, হাবীব ইমন, শাখারভ হোসেন সেবক, আনোয়ার বাস্তবপন্থী, মিমো, আশরাফুল আলম, রতন কুমার দাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরউদ্দীন পাপ্পু, মিজানুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ, শেখ মো. শিমুল, নাজমুল হাসান, ইমরান হোসেন, রোকসানা আক্তার, নাসিরউদ্দিন, আল আমিন, মো. উজ্জ্বল, গার্মেন্ট শ্রমিকনেতা জয়নাল আবেদীন, মাহমুদুল হাসান হৃদয়, রফিক, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জহর লাল রায়, কাওসার আহমেদ রিপন, মেহেদী, তামহিদ শুভ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ফেডারেশন নেতা জাসেন আলম, রাবেয়া রফিক রিমি, ইমরান হোসেন, সোহাগ, ইরফান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্রফ্রন্টের নেতা মুক্তা বাড়ৈ, সঞ্জীব ম-ল, রুবেল মিয়া, রাতুল, মীম, শোভন রহমান, ডালিম আল মামুন, অনিক দাস, নাজমুন্নাহার আঁখিসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
পুলিশের হামলায় কর্তব্যরত সাংবাদিকরাও আহত হন।
সাতক্ষীরায় তিনজন গ্রেপ্তার
কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা নেতা বাসদ সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, বাসদ (মার্কসবাদী)’র নেতা খগেন্দ্রনাথ ও প্রশান্ত রায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
হামলার প্রতিবাদে ২২ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ আজকের কর্মসূচিতে পুলিশী হামলার ও সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। বাম গণতান্ত্রিক জোট হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর, শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।
পুলিশী লাঠিচার্জের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাসদ (মার্কসবাদী)
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আজ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশী লাঠিচার্জে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ ৫০ এর অধিক নেতা-কর্মীকে আহত করার নিন্দা জানিয়েছেন
একইসাথে সাতক্ষীরায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা নির্বাচনঅফিস ঘেরাও কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তারকৃত বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা এড. খগেন্দ্রনাথ ঘোষ , প্রশান্ত রায় ও বাসদ জেলা সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকারের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের নমুনা আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তার।
সরকারের নির্দেশে পুলিশ এমনকি বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ক সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, রাজেকুজ্জামান রতন, ফখরুদ্দিন কবির আতিকসহনারী কর্মীদের ওপর লাঠি চালাতেও দ্বিধা করেনি।
তিনি আরো বলেন, নির্যাতন- গ্রেপ্তার, দমন-পীড়ন মোকাবেলা করে বাম গণতান্ত্রিক জোট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং দ্বি-দলীয় অপরাজনীতির বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার সংগ্রামে অবিচল থাকবে।