সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সচিবালয় ঘেরাওয়ে পুলিশি বাধা
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক দুঃশাসন-জুলুম-লুটপাটের প্রতিবাদে, জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে অবাধ-নিরপেক্ষ-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ১৪ অক্টোবর পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বাসদ (মার্কসবাদী) নগর শাখার নেতা নাঈমা খালেদ মনিকা সহ ৩০ জনের অধিক আহত হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ (মার্কসবাদী)-এর কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক।
গত ৪৭ বছরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে যে, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিবে না। একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের দুঃশাসনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। দমন-নিপীড়ন, হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ডে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, অপহরণ, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড সাধারণ নিয়মে পরিণত করেছে। গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। বিরোধী দল ও মতকে গায়ের জোরে দমন করা হচ্ছে। দলীয়করণ, জবরদখল, ব্যাংক ডাকাতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সীমাহীন চুরি, লুটপাট, অর্থপাচার এক ভয়ানক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিচারব্যবস্থার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব পূর্বের সকল সময়ের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে অকার্যকরী করে তোলা হয়েছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের কালো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের দুর্নীতি-লুটপাট আড়াল করতে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরণ করতে এ আইন ব্যবহৃত হবে।
সমাবেশে সাতক্ষীরায় গ্রেফতারকৃত বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করা হয়।
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, ছাত্র সংসদ নির্বাচন, পিইসি পরীক্ষা বাতিল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের দাবিতে
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৫ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ, ডাকসুসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, পিইসি পরীক্ষা বাতিল ও নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ সাত দফা দাবিতে ২৬ সেপ্টেম্বর সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৫ম কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১ টায় অপরাজেয় বাংলায় সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সংগঠনের সভাপতি নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্তী রিন্টুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা।
উদ্বোধনী বক্তব্যের পর সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রায় দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে একটি সুদৃশ্য র্যালী বিশ্ববিদ্যালয় ও নগরীর রাজপথ প্রদক্ষিণ করে।
বিকাল ৪ টায় রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান, অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের সভাপতি কমল সাঁই।
সম্মেলনে মাসুদ রানাকে সভাপতি, জয়দীপ ভট্টাচার্যকে সহ-সভাপতি, রাশেদ শাহরিয়ারকে সাধারণ সম্পাদক ও তাজনাহার রিপনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সবশেষে সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রসঙ্গে বাসদ (মার্কসবাদী)-র প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মৌলবাদী গোষ্ঠী পরিচালিত গ্রেনেড হামলায় সেসময় ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের একটি অংশ যেভাবে মদদ দিয়েছিল তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অশুভ কালো অধ্যায় রচনা করেছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকার ২১ আগস্ট নৃশংস হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারে না শুধু নয়, তারা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও নিষ্ঠুরভাবে হামলার শিকার আওয়ামী লীগকেই এর জন্য দায়ী করেছিল, জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল, গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাজউদ্দিনকে দেশ ছেড়ে পালাতে সাহায্য করেছিল, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি গোপন করেছিল। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ পদাধিকারীরা শাসক দলের প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে এসব কাজে সাহায্য করেছিলেন। গণবিরোধী শাসকদের হাতে রাষ্ট্রশক্তি কিভাবে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয় তা এখান থেকে বোঝা যায়। ফলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসানে ওই বর্বরোচিত হামলায় অংশগ্রহণকারী, নেপথ্যে মদদদাতা ও সহায়তাকারী সকলের বিচার ও শাস্তি যেকোন বিবেকবান মানুষের কাম্য। বিলম্বে হলেও এ মামলার রায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অন্তত একধাপ অগ্রগতি ঘটাবে – এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, “কিন্তু, একইসাথে আমরা বলতে চাই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে বিরোধী দলকে দমন ও নিছক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ মামলার রায়কে দেখছে বলে জনমনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় দেশ চালাতে গিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিনা বিচারে হত্যা-গুম-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা ও ষড়যন্ত্রের একই পথ অনুসরণ করছে। এই সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের ত্বকী, সাংবাদিক সাগর-রুনি, বিএনপি-র ইলিয়াস আলী, কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুসহ অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যা-গুমের বিচার হয়নি। দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলা, পল্টনে সিপিবি-র সমাবেশে ও রমনা বটমূলে নৃশংস বোমা হামলা ইত্যাদি সুরাহার কোনো লক্ষণ এখনো নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় নির্মূল করার ফ্যাসিবাদী মানসিকতা বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডেও প্রতিফলিত হচ্ছে। বিচারব্যবস্থা-প্রশাসন-পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্তমানে যেভাবে দলীয়করণ, নিয়ন্ত্রণ ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণে ব্যবহার করা হচ্ছে তা নজিরবিহীন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মত কালো আইন করে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের এই অগণতান্ত্রিক ভূমিকা ও চরিত্রই মামলার রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং বিএনপি-র মধ্যে যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাথে যুক্ত ছিলেন বা হামলাকারীদের আড়াল করেছেন তাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, “দেশে যখন অগণতান্ত্রিক শাসন চলে, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না – তখন সেই ব্যবস্থার অধীনে যেকোন বিচারের পশ্চাতে শাসকদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশের জনসাধারণকে বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগ-বিএনপি এসব ধনিকশ্রেণীর দলগুলো আজ আর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সত্যিকার অর্থে ধারণ করে না। বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের ভোটাধিকার পুরোপুরি হরণ করে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক শাসন ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বুর্জোয়া সংসদীয় পদ্ধতিকেও অকার্যকর করে তুলেছে। ফলে আওয়ামী স্বৈরতান্ত্রিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় বামপন্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের পথেই জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।”
জাতীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী প্রকল্প বন্ধের দাবি
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী সকল বাণিজ্যিক তৎপরতা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়া সকল রাজনৈতিক দলের কাছে সুন্দরবন রক্ষায় রামপালসহ বিভিন্ন বিষাক্ত প্রকল্প বন্ধের দাবিকে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুধু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, এই কেন্দ্রের কারণে প্রলুব্ধ হয়ে দেশের বনগ্রাসী ভূমিগ্রাসী কতিপয় গোষ্ঠী তিন শতাধিক বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে সুন্দরবন ঘিরে ফেলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, গত কয়েক বছরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, উন্মুক্ত কয়লা খনি, এলএনজি এবং এলপিজি’র লবিস্ট কোম্পানীর স্বার্থে কাজ করে যাওয়া ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর দৌরাত্ন্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ত্রণালয় এখন তাদেরই দখলে। সুন্দরবন ধ্বংসকারী রামপাল কয়লাভিত্তিক প্রকল্প তাই এখনও বাতিল হয়নি, উপরন্তু কোনো প্রকার পরিবেশ সমীক্ষা না করে দেশের বিদ্যমান পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে উপকূল রক্ষাকারী বন বিনাশ করে মহেশখালি, বরগুনা ও পটুয়াখালিতেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সুন্দরবনের ঘাড়ের ওপর বসানো হচ্ছে এলএনজি প্লান্ট।
৬ অক্টোবর, সকাল ১০.৩০ মিনিটে পুরানা পল্টনস্থ মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠন করেন সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সংগঠক রুহিন হোসেন প্রিন্স। এসময় টিপু বিশ্বাস, বজলুর রশীদ ফিরোজ, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, নজরুল ইসলাম, বহ্নি শিখা জামালী, প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, জাহাঙ্গীর আলম ফজলু, শামসুজ্জোহা, নাসিরউদ্দিন নাসু, মহিন উদ্দিন চৌধুরী লিটন, শহীদুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে রূপপুর প্রকল্পের ব্যয়, পরিবেশ সমীক্ষা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের শ্বেতপত্র দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় দুটো দায়মুক্তি আইন বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে রাহুর মতো চেপে আছে। এর একটি ২০১০ সালে প্রথমে ৪ বছরের জন্য বহাল করা হয়, এরপর তার মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে গৃহিত সকল প্রকল্প দরপত্র ছাড়া, বিদ্যমান আইনী বাধ্যবাধকতার বাইরে গিয়ে বাস্তবায়ন করার এখতিয়ার নেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক আদালতের দারস্থ হতে পারবে না। এই দুর্নীতি অনিয়মের কারণেই একের পর এক অসম্ভব ব্যয়বহুল ক্ষতিকর প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তফসিলের আগে এসব দায়মুক্তি আইন বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের ইশতেহারে দায়মুক্তি আইন বাতিল করে সর্বজনের সম্পদ ব্যবহারে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার দাবি যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফুলবাড়ীতে জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় সরকার দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থে জাতীয় সম্পদ ধ্বংসের কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। একমাত্র গণআন্দোলনই জাতীয় সম্পদ সুরক্ষায় সরকারকে বাধ্য করতে পারে। সচেতন মানুষকে এই আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৮০০০ টাকা মজুরি প্রত্যাখ্যান
১৬০০০ টাকা মজুরি দাবি
‘প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনা ৮০০০ টাকা মানি না এবং অবিলম্বে মজুরি ১৬,০০০ টাকা কার্যকর করতে হবে’ – এই দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের উদ্যোগে ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর ৮০০০ টাকার মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ১২টি সংগঠনের জোট ‘গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন’ ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী সে আবেদনে সাড়া না দিয়ে মালিকদের পক্ষ নিলেন। বেসিক ১০,০০০ টাকাসহ মোট নিম্নতম মজুরি ১৬,০০০ টাকার পক্ষে যুক্তি-তর্ক এবং সেগুলোর সপক্ষে গবেষণাও হাজির করা হয়েছিল। সে-অনুযায়ী শ্রমিক কনভেনশনও হয়েছিল। অথচ এখন জোটের প্রস্তাব, অন্যান্য বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠনের প্রস্তাব এবং সিপিডির প্রস্তাবসহ কারও প্রস্তাবকেই মজুরি ঘোষণায় আমলে নেয়া হলো না।
গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের বর্তমান সমন্বয়কারী এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইলের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক জুলহাসনাইন বাবু, ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ ইয়াসিন, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, বিপ্লবী গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক বিপ্লব ভট্টাচার্য এবং বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দ ব্যাপারী বিন্দু প্রমুখ।
সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তারকৃত বাসদ (মার্কসবাদী) নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ২১ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে সাতক্ষীরায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তারকৃত বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা কমিটির সদস্য এড. খগেন্দ্রনাথ ঘোষ ও অধ্যাপক প্রশান্ত রায় এবং বাসদ জেলা সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকারের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দকে থানা হাজত থেকে জেলা জজ কোর্টের জিআরও-র মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ও ২৫(ঘ) ধারায় ‘পরিকল্পিতভাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপ সংঘটনের উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হইয়া অপরাধের প্রস্তুতি গ্রহণ ও ষড়যন্ত্রের অপরাধ’-এর অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়নমূলক স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের নমুনা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে এই গ্রেপ্তার ও মিথ্যা অভিযোগে জেলে প্রেরণ। মামলার এজাহারে একদিকে বলা হয়েছে তারা বিএনপি-র ‘উচ্ছৃঙ্খল’ নেতাকর্মী, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমবেত হয়েছিল, অন্যদিকে বলা হয়েছে তাদের হাতে বাম গণতান্ত্রিক জোট লেখা ব্যানার ও হ্যা-বিল পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে খগেন্দ্রনাথ ঘোষ সাতক্ষীরা জজকোর্টে প্র্যাকটিসরত আইনজীবী, প্রশান্ত রায় তালা কুমিরা মহিলা কলেজে শিক্ষকতারত সহকারী অধ্যাপক এবং নিত্যানন্দ সরকার একটি কলেজে বিজ্ঞানের ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে কর্মরত। কোনো ধরণের অভিযোগ ছাড়াই শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে পঞ্চাশোর্ধ বয়সের এই তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলায় জড়ানোর ঘটনা রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি মহাজোট সরকারের অসহিষ্ণুতা ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার আরেকটি নিদর্শন। দলীয়করণকৃত পুলিশ প্রশাসন সরকারবিরোধীদের ফাঁসাতে কিভাবে ভুয়া ও ভিত্তিহীন মামলা সাজায় তার উদাহরণ তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ। হামলা ও মামলায় হয়রানি করে সরকার বামপন্থীদের ভয় দেখাতে চায় যাতে তারা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন থেকে সরে আসে। কিন্তু নির্যাতন-গ্রেপ্তার, দমন-পীড়ন মোকাবেলা করে বাম গণতান্ত্রিক জোট আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবিচল থাকবে।”
‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা’ শীর্ষক মুক্ত সংলাপ
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা’ শীর্ষক মুক্ত সংলাপ ২৭ জুলাই বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছ্ত্রা ফ্রন্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অরূপ দাস শ্যাম, আলোচনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, স্টেট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন আল রশীদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিদ্যা ও সমাজকর্ম বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক শহীদ মল্লিক ও ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, অভিমিতা স্বর্ণা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র ও অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “শাসকগোষ্ঠীর শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ নীতির কারণে দিনদিন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য কমে আসছে। ফলে বিচ্ছিন্নভাবে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাকে না দেখে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার সমস্যার সাথে তাকে মিলিয়ে দেখতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতিতে বাজারের জন্য কেতাদুরস্ত কেরানী তৈরি হতে পারে কিন্তু মানবিক মানুষের সমাজ কখনো তৈরি হতে পারে না।” প্রভাষক শহীদ মল্লিক বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজারের প্রয়োজন এমন বিষয়গুলোকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। মানবিক মানুষ গড়ে তোলার কোনো আয়োজন সেখানে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু ছাত্র-ছাত্রীদেরই নয়, শিক্ষকদেরও নেই মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও শিক্ষকদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছে মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।” রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, “শিক্ষার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে শাসকগোষ্ঠী আমাদের দেশে শিক্ষার বেসরকারিকরণকে বৈধতা দিতে ১০৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দিয়েছে, যার সংখ্যা সামনে আরো বাড়বে। শাসকগোষ্ঠীর শিক্ষানীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মালিকদের দৃষ্টিভঙ্গি একে অন্যের পরিপূরক, যার মূল উদ্দেশ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর শিক্ষার অধিকার হরণ করা। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই।”
শ্রম আইন সংশোধনী শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এবং শ্রমিকদের সাথে প্রতারণামূলক
সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত শ্রম (সংশোধনী) আইনকে সরকারের দাবি অনুযায়ী ‘শ্রমিকবান্ধব’ তো নয়ই, বরং শ্রমিক স্বার্থবিরোধী এবং শ্রমিকদের সাথে প্রতারণামূলক বলে অভিহিত করেছেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জহিরুল ইসলাম ও উজ্জ্বল রায় ১২ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “বিদ্যমান শ্রম আইনের অগণতান্ত্রিক ও শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারাগুলো বাতিল করে একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে এসেছি। অথচ সরকার সে দাবি অনুসারে অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো বাতিল তো করেইনি, বরং নতুন সংশোধনীকে কৌশলপূর্ণ চাতুর্যের সাথে ‘অধিক শ্রমিকবান্ধব’ হিসেবে দেখিয়ে তার আড়ালে শ্রমিক অধিকার হরণের সমস্ত আয়োজন ও বিধিবিধান অক্ষুন্ন রেখেছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “পূর্বের ৩০% শ্রমিকের স্থলে বর্তমানে ২০% শ্রমিকের সম্মতিতে কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে – এ সংশোধনীর মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে আরো সহজ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। অথচ এ ধরণের শর্ত আরোপ সরকারস্বীকৃত আইএলও সনদের ৮৭ ও ৯৮ ধারার (সংঘবদ্ধ হওয়া,স্বাধীনভাবে সংগঠন করা ও নেতা নির্বাচনের অধিকার) পরিপন্থী। আই এলও কনভেনশনে আছে, ১০ জন শ্রমিকও ট্রেড ইউনিয়ন করতে চাইলে তাদের অনুমতি দিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৭ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যায়। শ্রম আইনের ২৩, ২৬, ১৮০ ধারা বহাল রেখে কার্যত ট্রেড ইউনিয়ন গঠন অসম্ভব করা হয়েছে। ২৩, ২৬ ধারা ব্যবহার করে মালিক শ্রমিককে ইচ্ছেমতো ছাঁটাই করতে পারে। ১৭৯, ১৮০এর মতো কালো ধারাও বহাল আছে, যাতে ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের মৃত্যুতে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক পরিবারের প্রতি চরম উপহাসের সামিল। এ প্রস্তাব আইএলও কনভেনশনের ১২১ ধারার আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণের বিধান এবং রানা প্লাজা ধ্বসের পর হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটির ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাসের প্রস্তাব বৈষম্যমূলক। কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত/সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস চালু আছে। পূর্বে শ্রমিক সরাসরি শ্রম আদালতে মামলা করতে পারতো। এখন শ্রম আইনের সংশোধনীতে মামলা করার জন্য কলকারখানা পরিদর্শক অধিদপ্তরের অনুমতি নেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ অনুমতি নিতে গিয়ে শ্রমিক দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হবে। এছাড়া, ‘খাবার এবং বিশ্রাম ছাড়া টানা ১০ ঘন্টার বেশি কাজ করানো যাবে না’ – এ কথা বলে শ্রমিকের কর্মদিবস ১০ ঘন্টা নির্ধারণ করে রক্তস্নাত ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। ফলে শ্রম আইন(সংশোধনী) ২০১৮ এর মাধ্যমে সরকার মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী হিসেবে তার অতীতের বিশ্বস্ত ভূমিকাই পালন করেছে।”
নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে এ অগণতান্ত্রিক শ্রম(সংশোধনী) আইন অবিলম্বে বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানান এবং এ লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তুলতে শ্রমিকশ্রেণীর প্রতি আহ্বান জানান।
গোবিন্দপুরে চাষীদের আন্দোলনে দাবি আদায়
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে ফসলের মাঠে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন বিজয়ী হয়েছে। এলাকার প্রভাবশালীরা ১১টি বিল থেকে পানি নিষ্কাশনের খালের মুখ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে নানা ধরণের স্থাপনা করেছে। ফলে বর্ষাকালে ওইসব খাল দিয়ে পানি নিচে নামতে পারে না। বেশ কয়েকবছর ধরে বিল ও খালগুলো ভরাট করে জমি, দোকানপাট ও বসতবাড়ি নির্মাণ করায় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে এলাকার কৃষকরা চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে খাল-নালা উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ-এর দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে গড়ে ওঠে ‘গোবিন্দপুর ফসল মাঠ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটি’। এই কমিটির আহ্বায়ক বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আলাল মিয়া।
সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠের জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে গত ১৪ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল এবং পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি দেয়া হয়। সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে উপজেলার হোসেনপুর-নান্দাইল আঞ্চলিক সড়কের গোবিন্দপুর চৌরাস্তার পাশে এই কর্মসূচিতে সহস্রাধিক কৃষক অংশ নেন।
৩০ আগস্ট গোবিন্দপুর বাজারে মানববন্ধন কর্মসূচি ও সানকি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শত শত কৃষক মাটির তৈরি খাবারের সানকি হাতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় বক্তৃতা করেন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আলাল মিয়া, সদস্যসচিব আবুল কাশেম, যুগ্ম সচিব কৃষক জালাল মিয়া, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন, সোহরাব ব্যাপারী, জমির বেপারী, গোলাপ মিয়া। এই কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দেয়া হয় – অবিলম্বে প্রশাসন খাল-নালা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ না নিলে ৫ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক অফিস ঘেরাও ও স্মারকলিপি পেশ করা হবে। ঘোষিত সময়সীমার আগেই ইউএনও-র উদ্যোগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল-নালা উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। ১১টির মধ্যে ইতিমধ্যে ৮টি বিল জলাবদ্ধতামুক্ত হয়েছে। আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও সংগ্রাম কমিটি ঘরোয়া সভার মাধ্যমে সাংগঠনিক কর্মকা- অব্যাহত রেখেছে। খাল সংরক্ষণে পাড় ইট দিয়ে বাঁধাই করে দেয়াসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থার দাবিতে তারা ভবিষ্যতে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হোসেনপুরের গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা কয়েক বছর ধরে মাঠে ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। অথচ আগে কৃষকরা এসব মাঠে ধান, বাদাম, আলু, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন এসব ফসল উৎপাদন করতেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ থেকে পানি নিষ্কাশনের খাল আর নালাগুলো প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল দখল ও বন্ধ করে দিতে থাকে। ফলে ওই এলাকার তারা বিল, কামিনী বাবুর বিল, বলিয়ার বিল, হারুয়ার বিল, হিংড়া হুলির বিল, উত্তরের বিল, দক্ষিণের বিল, গোপাল নদীর নাল, কাট গড়িয়া বিল, কোমার গাথা বিল ও জালু পুরির বিলসহ আরো কয়েকটি ফসলি মাঠের পানি নিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন ফসলের মাঠে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি এলাকার শতাধিক বাড়িতে বছরজুড়ে জলাবদ্ধতা থাকে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, পানি নিষ্কাশনের এসব খাল বা নালা জনগণের সম্পদ। কিন্তু এলাকার সুবিধাবাদী মহল এসব খাল-নালা দখল করে নিজের প্রয়োজনে মাটি ভরাট করে বাড়িঘর, দোকান তৈরি করছে। ফলে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে তিন ফসলি জমি এক ফসলিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪০-৫০ হাজার মণ ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। এতে ফসল ফলাতে না পেরে সংসার চালাতে অনেক চাষীকে ঋণ করতে হচ্ছে। পরে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে জমিজমা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গ্রেফতারকৃত শিক্ষার্থী ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তি দাবি
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থী এবং আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে ১৮ আগস্ট বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. সাজেদুল হক রুবেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের খালেকুজ্জামান লিপন, বাসদ (মার্কসবাদী) নগরের নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গণসংহতি ঢাকা নগরের নেতা বাচ্চু ভুইয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নগর নেতা মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।
দৈনিক মজুরি ৩শ টাকা নির্ধারণের দাবিতে চা শ্রমিক ফেডারেশনের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে ২৬ আগস্ট বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ২০ আগস্ট ঈদের আগের দিন চা শ্রমিকদের জন্য সরকার দৈনিক মাত্র ১০২ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে। বর্তমান বাজারে এক কেজি চালের দাম যেখানে ৫০ টাকা সেখানে এই অল্প মজুরি দিয়ে চা শ্রমিকদের জীবন চালানো অসম্ভব। অথচ চা শ্রমিকদের দীর্ঘ দিনের ৩শ টাকা মজুরির দাবি উপেক্ষা করে সরকার এই অন্যায্য মজুরি নির্ধারণ করেন। সমাবেশে দেশের সার্বিক আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে অবিলম্বে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩শ টাকা নির্ধারণের দাবি জানানো হয় ।
চা শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হৃদেশ মুদির সভাপতিত্বে এবং অজিত রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলার সভাপতি সুশান্ত সিনহা সুমন, সন্তোষ বাড়াইক, লাংকাট লোহার, শেলী দাশ, বীরেন সিং প্রমুখ।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালন
চারণের উদ্যোগে ‘উত্তরাধিকার রবীন্দ্র–নজরুল’
চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে ২৮ জুলাই শনিবার দুপুর ৩টায় ‘উত্তরাধিকার রবীন্দ্র-নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাদ মানবসভ্যতার সকল মহৎ সৃষ্টিকে ধ্বংস করছে। তাই এ সমাজ ও মানবসভ্যতা রক্ষায় সমাজ বদলের বিকল্প নেই। রবীন্দ্র- নজরুল তাই আজকের দিনে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। এখনকার তরুণসমাজকে তাদের যোগ্য উত্তরাধিকারী হতে হলে মননে, চিন্তায় তাদেরকে ধারণ করতে হবে। তাদের গান, কবিতা ও নাটকের মর্মবাণী সমাজের প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এ সংকটময় সময়ে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
কমরেড মুবিনুৃল হায়দার চৌধুরী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম বৃটিশশাসিত ভারতবর্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজকের দিনে তাদের উত্তরাধিকার বহন করতে গেলে বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা উপলব্ধি করতে হবে। সমাজ পরিবর্তনের আকাক্সক্ষার সাথে যুক্ত হয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের যথার্থ উত্তরাধিকার হওয়ার সংগ্রামে ব্রতী হতে হবে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রকে। চারণের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সেই যাত্রার সূত্রপাত হল, যা দেশের সমস্ত জনগণকে উদ্বুদ্ধ করবে।
আলোচনাপর্ব শেষে ফেনী, ময়মনসিংহ, খুলনা ও ঢাকা জেলা চারণের শিল্পীরা গান, নৃত্য, আবৃত্তিতে রবীন্দ্র-নজরুলের সমাজ, প্রেম-প্রকৃতি ও দেশপ্রেম ভাবনা ফুটিয়ে তোলেন।
পূর্ণাতি ত্রিপুরা ধর্ষণ–হত্যার বিচার দাবীতে খাগড়াছড়িতে মানববন্ধন
খাগড়াছড়িতে পূর্ণাতি ত্রিপুরার ধর্ষক ও খুনিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবীতে শিশু কিশোর মেলা ৩১ জুলাই সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। ২৯ জুলাই দিঘীনালার নয়মাইল এলাকায় ৫ম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণাতি ত্রিপুরা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়। মানববন্ধনে উজ্জ্বল মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা কবির হোসেন, শিশু কিশোর মেলার সংগঠক স্বাগতম চাকমা, কৃষ্টি চাকমা, মিলন কান্তি ত্রিপুরা, ৮ম শ্রেণির ছাত্র কাঁকন চাকমা। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, পাহাড় ও সমতলে প্রতিদিন শিশু ও নারী হত্যা-ধর্ষণ-গুম বেড়েই চলেছে। কিন্তু এর কোনো বিচার নেই। সরকার নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পূর্ণাতি ত্রিপুরাও এর শিকার। ধর্ষক ও হত্যাকারী যেই হোক না কেন এর বিচার করতে হবে। যেভাবে দেশে অপসংস্কৃতি বেড়েই চলেছে এটি তারই ফল। অপসংস্কৃতি রুখতে সরকার থেকে কোনো উদ্যোগ নেই। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে, শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। বক্তারা দাবী করেন পূর্ণাতি ত্রিপুরার ধর্ষক ও হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসি দিতে হবে এবং নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হবে।