“প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় বসেই আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম আক্রমণ করেছে শ্রমিকদের ওপর। মালিকগোষ্ঠী ও সরকারের প্রতারণায় মজুরি বৃদ্ধির পরিবর্তে কমিয়ে দেয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শ্রমিক হত্যা করা হয়েছে, সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে, ১২ হাজারের মত শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে, অসংখ্য মামলায় অজ্ঞাতনামা হাজার শ্রমিককে আসামী করে রাখা হয়েছে, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিজিএমইএ তথ্যভান্ডারে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ন্যায্য মজুরির দাবিতে আন্দোলন করায় শ্রমিকরা হল নির্যাতিত, অন্যদিকে মালিকদের উৎস কর ও কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোসহ নানা সুবিধা বাড়ানো হল। পাটকলশ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করলে তাদের ওপরও পুলিশী নির্যাতন চালানো হয়েছে। ফলে, শ্রমিকের অধিকার আদায় করতে হলে মালিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকারীএই স্বৈরাচারী সরকারের নিপীড়নমূলক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।” বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত মে দিবসের সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
সংগঠনের উদ্যোগে ১লা মে সকাল সাড়ে ১০টায় লাল পতাকাশোভিত একটি মিছিল পল্টন-গুলিস্তান এলাকায় রাজপথ প্রদক্ষিণ করে এবং পরে শিশু কল্যাণ পরিষদচত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রমিকনেতা জহিরুল ইসলাম, ডা. মুজিবুল হক আরজু, রাজু আহমেদ, মামুন মিয়া, মানিক হোসেন, মো. ইউনুস, মাহবুবুল আলম, শহিদুল ইসলাম, মো. ইউসুফপ্রমুখ। সমাবেশে গণসঙ্গীত পরিবেশনা করেন দলীয় সংগঠকরা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “মে দিবস নিছক আনন্দ-উদযাপন করার দিন নয়। সকল ধরণের শোষণ-জুলুম-বৈষম্য থেকে মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামের শপথ গ্রহণের দিন।শ্রমিকদের লড়াই এবং জীবনদানের বিনিময়েই মালিকেরা স্বীকার করে নিয়েছিল শ্রমিকেরাও মানুষ, তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম-বিনোদনের অধিকার আছে। কিন্তু আজকেযেন গোটা বিশ্ব আবারও উনিশ শতকে ফিরে যাচ্ছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় এবং শ্রমিক আন্দোলনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দেশেদেশে মালিকশ্রেণী আবারও উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। লাগামহীন শোষণ ও লুটপাটের স্বার্থে তারা শ্রমিকশ্রেণীর সমস্ত অধিকারকে পায়ে মাড়াচ্ছে।” তাঁরা বলেন, “বাংলাদেশের শ্রমজীবীমানুষের বর্তমান অবস্থার সাথে দেড়শ বছর পূর্বেকার অবস্থার বড় কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ শুধু শ্রমিকরা নন, যারা বহু বেতনের কর্পোরেট চাকরি করেন তারাও ৮ ঘন্টা কাজের নিয়ম মানতে পারেন না। এদেশে এখনো অধিকাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক নিয়োগপত্র, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, ওভারটাইম, গ্রাচুইটি, প্রভিডেন্টফান্ড, প্রোডাকশন বোনাস, পেনশন কিছুই পায় না। না আছে কর্মস্থলে থাকার মতো ব্যারাক-কলোনি, না আছে চিকিৎসা সুবিধা, না পায় রেশন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল বৃদ্ধি, শিক্ষা-চিকিৎসার বাড়তি খরচের চাপে সীমিত আয়ের শ্রমিক-কর্মচারীরা দিশেহারা। শ্রমিকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নেই। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে হাজারো শ্রমিক মরেছিল, কিন্তু আজও তার বিচার হয়নি, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের আইন সরকার করেনি।” তাঁরা আরো বলেন, “শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে আমাদের রপ্তানি বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, জাতীয় উৎপাদন বাড়ছে, মালিকরা টাকার পাহাড় গড়ছে, কিন্তু শ্রমিকের অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছেনা।”
শেষে নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান, “ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণেই উদয়াস্ত পরিশ্রম করেও শ্রমিকের দুর্দশা কাটে না, অন্যদিকে মালিকরা টাকারপাহাড় গড়ে। এই অবস্থা পাল্টাতে হলে চাই শ্রমিকদের সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ লড়াই। তাই অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া আদায়ে সংগ্রামের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারারশ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”