বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ২ মে ২০১৯ সকাল সাড়ে সাত টায় ঢাকার মুক্তাঙ্গন থেকে সোনাগাজীর উদ্দেশ্যে রোড মার্চ কর্মসূচি শুরু হয়। নুসরাত হত্যার বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত রোড মার্চ এর শুরুতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনি সমাবেশে বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। এ সময় জোটের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্সার্ক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা আ.ক.ম. জহিরুল ইসলাম, কমিউনিস্ট লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বাচ্চু ভাইয়া, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক।
উদ্বোধনী সমাবেশসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভায় ও সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সারা দেশে নারী-শিশু নির্যাতন যৌন হয়রানী ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। রাষ্ট্র-সরকার এর প্রতিকার করতে পারছে না। নুসরাতের ঘটনা গোটা দেশবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। কেউ কল্পনাও করতে পারে নাই, এমন নির্মম হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা এতো শান্তভাবে করতে পারে। নুসরাতকে শুধু যৌন নিপীড়ন করেই ক্ষান্ত হয়নি, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। যৌন নিপীড়নের পর মামলা করতে গেলে থানার ওসি মামলা না নিয়ে সেখানেও তাকে যৌন হয়রানী করা হয়। ইতিমধ্যে পুলিশের তদন্তে বেরিয়েছে ওসি, এসপি, এডিসিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের লোকজনও নুসরাত হত্যার সাথে জড়িত। তাছাড়া হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা ও সরাসরি যুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র তারা সকলেই শাসক দল আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত।
নেতৃবৃন্দ বলেন, নুসরাতসহ ভয়ংকর যতো ঘটনা ঘটেছে সবই শাসক দলের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এবং প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে। নেতৃবৃন্দ বলেন পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থায় নারীকে ভোগের পণ্য হিসেবে বিচেনা করা, ধর্মীয় কুসংস্কার ফতোয়া, নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারী দেহকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরার কারণেই সারা দেশে পুরষতান্ত্রিক মানসিকতার শিকার হচ্ছে নারী-শিশুরা।
এছাড়াও বিচারহীনতার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছে সেটাই ধর্ষকদের নারী-শিশু নির্যাতনে উৎসাহী করছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা নৈতিক শিক্ষা বলে প্রচার করা হয় অথচ মাদ্রাসাগুলোতে যৌন হয়রানী, নারী নির্যাতন এর ঘটনা ক্রমে বাড়ছে, এটা কোন ধরনের নৈতিকতা। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষা বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুযায়ী সংবিধানে উল্লেখিত এক ধারার শিক্ষা চালুর দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ নুসরাত হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন এবং অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা, ওসি মোয়াজ্জেম, এসপি, এডিসি, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন, ছাত্র লীগ নেতা শাহাদাৎ, নুরুদ্দিনসহ জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার ও সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সাথে সারাদেশে নারী শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।