Saturday, November 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ সেপ্টেম্বর ২০১৯আমাজন থেকে সুন্দরবন — সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য বেপরোয়া আগ্রাসন

আমাজন থেকে সুন্দরবন — সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য বেপরোয়া আগ্রাসন

একমাস ধরে পুড়ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ অ্যামাজন। ফুসফুস, কারণ সারা বিশ্বের ২০ ভাগ অক্সিজেন আমাজন একাই সরবরাহ করে। এ আগুন এত বিশাল এলাকা জুড়ে যে, তা মহাকাশ থেকেও দেখা যাচ্ছে। প্রথমদিকে ব্রাজিল সরকার ও প্রচলিত গণমাধ্যমগুলো এ খবরটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিল সরকার তেমন কোনো উদ্যোগই প্রথমদিকে নেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে খবরটি প্রচার হয়ে যাওয়ায় সারা বিশ্বে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হওয়ায়, ব্রাজিল আগুন নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। আমাজনের আগুন অনেকগুলো বিষয় নতুন করে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করল। আমরা দেখলাম, পুঁজিবাদের মুনাফা লিপ্সার কাছে পরিবেশ আজ কত বিপন্ন! উন্নয়নের নামে আজ যেমন আমাজন বিপন্ন, তেমনি আমাদের দেশে বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে আজ ধ্বংসের আয়োজন চলছে। বিষয়টা তলিয়ে দেখা যাক।

এটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দাবানল ছিল না
ব্রাজিল সরকার বলছে, আমাজনে এ শুষ্ক মৌসুমে এমন আগুন লাগাটাই স্বাভাবিক, আর এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। খরার ফলে প্রাকৃতিক কারণে আমাজনে দাবানল সৃষ্টি হয়, যা স্বাভাবিক। কিন্তু এবার তেমন বিষয় ছিল না, জলবায়ু স্বাভাবিক ছিল। আমাজনের আগুন লাগার ঘটনাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা বেশির ভাগ অগ্নিকান্ডই মানুষের সৃষ্ট বলছেন। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ’ (INPE) বলছে, এ বছর জুন পর্যন্ত আমাজনের ব্রাজিল অংশে ৭২ হাজার ৮৪৩টি অগ্নিকা হয়েছে, যা গত বছরের এসময়ের তুলনায় ৮৪ শতাংশ বেশি। জলবায়ু ও অস্বাভাবিক সংখ্যায় দাবানল দেখে বোঝা যায়, এটা প্রাকৃতিক নয়, মানুষের সৃষ্ট।

ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ মুনাফার লোভ, রাষ্ট্র যার নাম দিয়েছে উন্নয়ন
আমাজনের ৬০ ভাগের অবস্থান ব্রাজিলে এবং তা ব্রাজিলের মোট আয়তনের ৪০ ভাগ। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য আমাজন উজাড় করে কৃষিজমির বিস্তার, গবাদিপশুর খামার তৈরি, বৈধ ও অবৈধ লোহা, হীরে, সোনার খনি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য বন ধ্বংস করা হচ্ছে। গড়ে উঠছে এর সাথে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত প্রকল্প। এবছর অগ্নিকাÐের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির জন্য গবেষকরা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসরানোর বৃহৎ ব্যবসায়ীপন্থী নীতিকেই দায়ী করছেন। এবছর জানুয়ারিতে ব্রাজিলের ক্ষমতায় এসে উগ্র ডানপন্থী বলসরানো ব্রাজিলের মন্দা কাটিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি প্রতিশ্রæতি দেন আমাজনের উন্নয়ন ঘটাবেন এবং আমাজনের আরও সংরক্ষিত এলাকা খনি, শিল্পকারখানা, কৃষি ফার্ম, গবাদি পশুর ফার্ম, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে উন্মুক্ত করবেন। এর পূর্ব থেকেই ব্রাজিলের মাংস ও সয়াবিন রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা আমাজনের জঙ্গল কেটে-পুড়িয়ে বিরাট পশুপালন খামার ও সয়াবিন চাষ করে আসছে বৈধ-অবৈধভাবে। উল্লেখ্য ব্রাজিল বিশ্বের অন্যতম সয়াবিন রপ্তানিকারক দেশ এবং বিশ্বের মোট মাংস চাহিদার ২০ ভাগ সরবরাহ করে। বলসরানো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে এ দুই খাতের ব্যবসায়ী ও খনি মালিকদের জোরালো সমর্থন ছিল। বলসরানো সরকার এদের স্বার্থ রক্ষা করতেই পরিবেশ আইনের প্রয়োগ ও লঙ্ঘন তদারককারী ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থা ইবামা (IBAMA)-র ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রিচার্ড সেলসকে, যিনি মন্ত্রী হওয়ার পূর্বে ব্রাজিলের বৃহৎ ব্যবসায়ীদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ব্রাজিলের পরিবেশ সংস্থার বরাদ্দ ২৩ মিলিয়ন ডলার কমিয়ে দিয়েছেন। পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের জরিমানা আদায় গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সরকারের এ নীতির ফলে উৎসাহিত হয়ে বড় ব্যবসায়ীরা যেন আমাজনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আরও প্রবল গতিতে চলছে বন উজাড়, আদিবাসীদের জমি দখল, উচ্ছেদ, ভয়ভীতি প্রদর্শন — এমনকী হত্যাকান্ড পর্যন্ত। আমাজন সংলগ্ন জঙ্গল শহর মানাউসে ফ্রি ট্রেড জোন, প্যারা প্রদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লোহার খনি, আমাজনের দক্ষিণ অংশে গবাদি পশু ও সয়াবিনের বিরাট বিরাট খামার গড়ে উঠেছে। টাপাজোস নদীতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছে, যার তীরে মুন্ডুরকু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস। হীরে ও সোনার খনির মালিকরা তাদের পানি দূষিত করছে, জমি দখল করছে, বনভূমি উজাড় করছে কিন্তু রাষ্ট্র নির্বিকার।

বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতি, বাংলাদেশের উন্নয়ন
ব্রাজিলের মতোই বাংলাদেশে চলছে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের নামে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের প্রবল উম্মাদনা। এ উন্মাদনায় বিপর্যস্ত প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সুন্দরবনের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। বিশেষজ্ঞ ও দেশবাসীর প্রবল বিরোধিতা উপেক্ষা করে চলছে সুন্দরবনের পাশেই রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ। দেশ-বিদেশের বহু বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা পরিবহন ও কয়লা পোড়ানোতে যে পানি, বায়ু ও মাটিদূষণ হবে, তাতে সুন্দরবনের অস্তিত্ব নিশ্চিতভাবে বিপন্ন হবে। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করছে না। এতে উৎসাহী হয়ে সুন্দরবনে শিল্পকারখানা স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। সুন্দরবনের ১০ কি.মি. এলাকার মধ্যে ৩২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সবক’টিই দূষণকারী, এর মধ্যে ২৪টি মারাত্মক দূষণকারী শিল্প। সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্টের চারদিকে ১০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা, যা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে চিহ্নিত, তার মধ্যেই সুন্দরবন থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে, পরিবেশ দূষণকারী বেশ কয়েকটি সিমেন্ট কারখানা এবং চার কিলোমিটারের মধ্যে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা, ওরিয়ন, নাভানাসহ কয়েকটি কোম্পানিকে এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। এগুলো সবই সুন্দরবনের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। কারখানা আছে এমন এলাকায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর সংখ্যা, কারখানা নেই এমন এলাকার চেয়ে দুই তৃতীয়াংশ কম।

সুন্দরবনই শুধু নয়, কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়ায় উন্নয়নের নামে চলছে পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, প্রকৃতি ধ্বংসের মহাযজ্ঞ। মহেশখালী একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপবন, যেখানে মিঠা-লোনা দুই রকম পানির জগতই আছে। এই উপকূলীয় এলাকা প্রাণবৈচিত্র্যের অনন্য আধার। সেই মহেশখালীতে ২৬টি বড় প্রকল্প হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ (ইসিআর) অনুযায়ী এগুলোর ২২টি লাল অর্থাৎ মারাত্মক পরিবেশদূষণকারী প্রকল্প। বাকি চারটি কমলা অর্থাৎ মাঝারি মাত্রায় দূষণের শ্রেণিভুক্ত। সবক’টি প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রাথমিকভাবে ধরা হয়েছে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। অন্যান্য দ্বীপ মিলিয়ে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আরও অনেক বেশি হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, পাহাড় ও বন কাটা পড়ছে, নদীতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাগদা, ভেটকি ও কাঁকড়ার চাষ।

সরকার ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে সোনাদিয়া দ্বীপটিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দীর্ঘ মেয়াদে বরাদ্দ দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দ্বীপের ৩০ শতাংশ এলাকায় পরিবেশবান্ধব ইকোট্যুরিজম পার্ক হবে। ভারতীয় কোম্পানি মাহিন্দ্র গ্রæপকে যুক্ত করে ৫০০ একরের মতো এলাকার নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। বেজা হোটেল-মোটেল ও গলফ কোর্টের জন্য ৫০০ একর এবং অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৫৫১ একর জমি রেখেছে। প্রকল্পের আওতায় ১০টি হোটেল ও মোটেল, দুটি গলফ কোর্ট ও দুটি টেনিস কোর্ট হবে। থাকবে শিশু পার্ক, মসজিদ, জাদুঘর, কমিউনিটি সেন্টার, শৈবাল চাষ, মুক্তা চাষসহ নানা তৎপরতা। ৩০ একর জমিতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। সোনাদিয়ার ৪৭ শতাংশ এলাকায় এখনও বাদাবন তথা শ্বাসমূলীয় বন রয়েছে। গত দুই যুগে বনের ২৬ শতাংশ ধ্বংস করা হয়েছে। সমীক্ষা বলছে, দ্বীপটি দেশের প্রধান জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি এলাকাগুলোর একটি। জাতিসংঘ একে ‘রামসার এলাকা’ ঘোষণা করে বৈশ্বিক পরিসরে একই স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ সেই সোনাদিয়া এখন মরতে বসেছে।

শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, উচ্ছেদ হয় মানুষ
প্রতিটি প্রকল্পে উচ্ছেদ হচ্ছে এলাকার শ্রমজীবী মানুষ, যারা সেই প্রকৃতিরই আলো-ছায়ায় বড়। প্রকৃতির কর্ষণ করে তার বুকে সে ফসল ফলায়। কিন্তু উন্নয়নের ধাক্কায় পরিবেশের সাথে মানুষও যায়, বেশিরভাগ সময়ই তা সামনে আসে না। ‘আর্টিকুলেশন অফ ইনডিজিনিয়াস পিপলস অফ ব্রাজিলে’র নেতা গ্যায়াজাজারার সংবামাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে আমাজনের আদিবাসীদের আশঙ্কা উঠে এসেছে — “আদিবাসীরা পুঁজিবাদের বিপক্ষে। মুষ্টিমেয় মানুষের মুনাফা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য ধ্বংস ও মৃত্যু ডেকে আনছে। আমাজনে যদি কৃষিবাণিজ্যের (agrobusiness) এ ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে শুধু আমাজন ধ্বংস হয়ে যাবে তাই নয়, পুরো পৃথিবীতে বন বলে আর কিছু থাকবে না।”

দৈনিক প্রথম আলো মহেশখালীর সুভাষ নাথের বক্তব্য ছাপিয়েছে। ক্ষিপ্ত এই প্রৌড়ের বক্তব্য, “আমরা এই দ্বীপের আদি বাসিন্দা, জাতে নাথ স¤প্রদায়ের। আমাদের দ্বীপে আমরা থাকতে পারছি না। বড় বড় রাস্তা হচ্ছে, পাহাড় কেটে সমান করা হচ্ছে। বন কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর সব চলে যাচ্ছে।”

এভাবে একের পর এক কৃষিজমি থেকে চাষীদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইপিজেড গড়ে তোলা হচ্ছে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের জন্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করে গড়ে উঠছে ট্যুরিজমের নামে হোটেল-রিসোর্ট ব্যবসা, বাণিজ্যিক রাবার, সেগুন বাগান।

এই যাত্রার ভবিষ্যৎ কী
শিল্পোন্নত দেশগুলোর নির্গত গ্রিন হাউজ গ্যাস বিশ্বের উষ্ণতা বাড়াচ্ছে। মাত্র ১০০ কোম্পানি পৃথিবীর ৭০ ভাগ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। এমন অবস্থা চললে আগামী ৫০ বছরে বিশ্বের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বেড়ে যেতে পারে। উত্তর ও দক্ষিণ মেরুসহ হিমালয় ইত্যাদির বরফ গলায় সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে। এই বৃদ্ধি প্রতিহত করতে না পারলে উপকূলবর্তী এলাকাগুলো দ্রæত তলিয়ে যাবে। কয়েক হাজার দ্বীপ বিলুপ্ত হবে। একদিকে বরফ গলছে অন্য দিকে আফ্রিকা, ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এশিয়া, চীন ইত্যাদি এলাকার ব্যাপক বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় অক্সিজেনের পরিমাণ দ্রæত কমছে। অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের হার বাড়ছে। কিন্তু মুনাফার ঠুলিতে পুঁজিবাদের চোখ বাঁধা। জগৎ-সংসার সব তলিয়ে যাক, কিন্তু পুঁজির চাই শুধু মুনাফা। আজ থেকে ১৫০ বছর আগে মহামতি কার্ল মার্কস তাঁর ক্যাপিটাল গ্রন্থে টি.জে. ডানিং-এর উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছেন, “মুনাফার সম্ভাবনা দেখলেই পুঁজি সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১০% নিশ্চিত মুনাফা হবে জানলে যেখানেই বলবে পুঁজি সেখানেই খাটতে যাবে, ২০ শতাংশ লাভের নিশ্চিত আশ্বাসে তার চোখ চকচক করবে, ৫০ শতাংশ লাভের লোভে তার ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়াবে, ১০০ ভাগ লাভ হবে জানলে সে ন্যূনতম মানবতাটুকুর গলায় পা দিয়ে দাঁড়াবে। ৩০০ ভাগ লাভ হবে এই নিশ্চয়তা পেলে হেন অপকর্ম নেই যা সে করবে না, এমন ঝুঁকি নেই যা সে নেবে না, এমনকী পুঁজির মালিকের ফাঁসি হতে পারে জেনেও পুঁজি ছুটবে লাভের অদম্য লালসায়।”

তাই আজ প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে পুঁজিবাদ উচ্ছেদ করে সমাজতন্ত্রের লড়াই জোরদার করতে হবে।

সাম্যবাদ সেপ্টেম্বর ২০১৯

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments