বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হ্য়াদার চৌধুরী বাম গণতান্ত্রিক জোটের ‘কালো দিবস’ পালনের কর্মসূচিতে পুলিশের নৃশংস হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, “পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বাম গণতান্ত্রিক জোট আজ সকাল ১১টায় ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ভোট-ডাকাতির নির্বাচন’কে প্রত্যাখান করে বর্তমানের স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ‘কালো দিবস’ পালনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় মৎস ভবনের মোড়ে পুলিশ দফায় দফায় লাঠিজার্জ করে এবং হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের আহত করে। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে নেতৃবৃন্দ কর্মসূচি পালনের কথা বললেও পুলিশ তা ভ্রুক্ষেপ না করে চারদিক থেকে বেধড়ক লাঠিচার্জ করতে থাকে। বিশেষত নৃশংসভাবে মাথায় লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। হামলায় বাসদ (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য ফখরুদ্দিন কবির আতিক, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনোয়েদ সাকি’সহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিভিন্ন দলের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। প্রায় ৫-৬ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকার কতটা জনবিচ্ছিন্ন হলে এই হামলা ও গ্রেফতার করাতে পারে তা এখন দৃশ্যমান। আমি সরকারের এই ফ্যাসিবাদী আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বাসদ (মার্কসবাদী)’র প্রায় ১৬ জনের বেশি এই হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য ফখরুদ্দিন কবির আতিকের ডান হাত, চোখ ও পায়ে আঘাত করা হয়েছে। বাসদ (মার্কসবাদী)’র ঢাকা নগরের ইনচার্জ নাঈমা খালেদ মনিকার হাত ও তলপেটে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়েছে। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সীমা দত্তের পায়ে, হাতে ও পিঠে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ রানার হাত ও আঙুল ভেঙে গেছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকীর পায়ে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমার মাথা ফেটে গিয়েছে, তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলামের মাথা ফেটে গেছে, হাত ভেঙে গেছে এবং কানে জখম হয়েছে। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকা নগরের ইনচার্জ সংগঠক সুস্মিতা রায়ের চোখের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। চোখের নিচে ৬টি সেলাই দিতে হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ইডেন কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর সুমির সারা শরীরে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হাসানের মাথা ফেটে গেছে এবং সে সংজ্ঞাহীন হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা কলেজ শাখার সংগঠক মাহমুদুল হাসানের কপালে আঘাত লেগেছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক সজীব চৌহানের পায়ে-হাতে ও কাঁধে পেটানো হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানিক হোসেনের হাত ও তলপেটে আঘাত লেগেছে। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে তারা কাতরাচ্ছে।
ভোট-ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে এই সরকার দুর্নীতি-লুটপাট, মূল্যবৃদ্ধি, ধর্ষণ-খুন-নির্যাতনÑএমন কোনো অপকর্ম নেই যা সরকার করছে না। আমরা এই অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ চাই। এভাবে জনগণের সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো সরকারই অতীতে টিকে থাকতে পারেনি। গায়ের জোরে আওয়ামী লীগও থাকতে পারবে না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ এই সরকারের পতন ঘটাবেই। আমরা দেশের সচেতন সকল স্তরের জনগণকে এই আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি।”
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি এবং একই সাথে হামলার সাথে যুক্ত পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি জানান, আগামীকাল বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।