গত ২৪ এপ্রিল সাভারে ৯ তলা ভবন ধসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে প্রাণ হারিয়েছে ৭ শতাধিক শ্রমিক, নিখোঁজ শতাধিক, চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে কয়েকশ। এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে আশুলিয়ায় তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা যান ১২৪ জন শ্রমিক। ঐ রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। পাঁচ মাসের মাথায় আবারও গণহত্যা ঘটল। সাভারে ভবন ধসে শত শত শ্রমিকের নির্মম মৃত্যুর সংবাদে দেশ শোকাহত, বিক্ষুব্ধ। কারণ এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটা একটা গণহত্যা। ভবনে ফাটল ধরার পরও শ্রমিকদের ডেকে এনে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। এখন এও জানা যাচ্ছে যে ওই ভবন কোনো নিয়ম-নীতি মেনে তৈরি করা হয়নি।
জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। ভবনে চাপা পড়া ভয়ার্ত মানুষগুলোকে টিভি চ্যানেলে দেখানো হচ্ছিল। পত্রিকায় তাদের খবর এসেছে। জীবিত-অর্ধমৃত মানুষগুলো চিৎকার করে বলছে, আমি বেঁচে আছি। আমাকে বের করুন। কেউ একটু পানি খেতে চাইছে। তাদের পরিবার-পরিজন ছুটে এসেছে ঘটনাস্থলে- তার প্রিয় মানুষটি বেঁচে আছে কি না তার খোঁজ নিতে। এদের মধ্যে অনেক পরিবারের সন্তানই হয়তো এ ঘটনার পর আর স্কুলে যাবে না, নতুন বিয়ে করা বধূটি হয়তো কাজের খোঁজে রাস্তায় নামবে, কারও বৃদ্ধ পিতা হয়তো বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। ভবন চাপা পড়া মানুষগুলোর কষ্ট বোঝা যায়, তাদের আর্তনাদ শোনা যায়। কিন্তু এই পিতা, এই স্ত্রী, এই ছেলেমেয়ের নিঃশব্দ কান্না একদিন কালের স্রোতে হারিয়ে যাবে।
এই ঘটনাগুলো ঘটার পেছনে মালিকদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা আছে। বছরের পর বছর ধরে সর্বোচ্চ মুনাফা তোলার জন্য শ্রমিকদের সর্বশক্তি নিংড়ে নেয়ার মাধ্যমে গার্মেন্টস মালিকদের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি ঘটেছে। গার্মেন্টস শিল্প দেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান মাধ্যম হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিক পরিবারের বুক ফাটা আর্তনাদ বৈদেশিক মুদ্রার ঝনঝনানিতে হারিয়ে গেছে। মজুরি সামান্য বাড়াতে মালিকদের ভীষণ কার্পণ্য। এতে না কি শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। নিরাপদ কারখানার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগটুকু করতেও মালিকরা রাজি নয়। কখনো আগুন লাগলে, কলাপসিবল গেট আর অপরিসর সিঁড়ির কারণে শ্রমিক বেরুতে পারে না। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, পদদলিত হয়ে, আগুনে পুড়ে মরে। কখনো ভবন ধ্বসে পড়ে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাপা পড়ে শত প্রাণ। প্রতিটি ঘটনায় গণহারে শ্রমিক মারা গেছে, অথচ একবারও মালিকের বিচার হয়নি। এমনকি একজন মালিককেও আদালতের কাঠগড়ায় পর্যন্ত দাঁড়াতে হয়নি।
এ এক অপূর্ব দেশ! অপূর্ব তার বিচার ব্যবস্থা! এখানে শ্রমিকের বিচার চাওয়ার অধিকার নেই। গণহত্যা ঘটিয়েও মালিককে এখানে কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় না। কারণ, তাকে রক্ষার জন্যই দেশের আইন, দেশের সংসদ, দেশের প্রশাসন। সাভারের ঘটনায়ও এই কথাটিই প্রমাণিত হল। নয়তলা ভবনের ৩য় থেকে ৮ম তলা পর্যন্ত ৫টি পোষাক কারখানা। দ্বিতীয় তলায় ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ও কিছু দোকান। ভবনে ফাটল দেখা গিয়েছিল আগের দিন। সেদিন ৩য় তলায় ফাটল দেখে বিভিন্ন তলায় কর্মরত শ্রমিকরা আতঙ্কে বেরিয়ে যান। তখন সবগুলো কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের শাখাও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। খবর পেয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভবন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করে তিনি বলেন, ভবন ধ্বসে পড়ার মতো অবস্থা হয়নি, সামান্য ফাটল ধরেছে মাত্র। ভবনের মালিক সোহেল রানা পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মুরাদ জং-এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনি আগের দিনও সাংবাদিকদের বলেছেন, ভবন ধ্বসে পড়ার মতো কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। পরদিন সকালে তাই শ্রমিকরা আতঙ্কে ভবনের সামনে ভীড় করেছিলেন। ভেতরে ঢোকার সাহস পাননি। গার্মেন্টস মালিকরা তা মানবেন কেন? একদিন লোকসানের চেয়ে নিশ্চয়ই শত শ্রমিকের জীবন মূল্যবান নয়। ফলে তাদের জোর করে কাজে ঢোকানো হল। বহুল প্রচারিত একটি দৈনিক পত্রিকা তাই শিরোনাম করেছে ‘ডেকে এনে শত প্রাণ হত্যা’।
সরকারদলীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রশাসন, ভবন নির্মাণ দেখভালের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আর মালিক- সবাই মিলে সংগঠিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটালো। এরা সবাই এক। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তব্য দিলেন। মালিকদের গাফিলতি নিয়ে কোন কথা বললেন না। জোর করে শ্রমিকদের কাজ করানোর কথা এড়িয়ে গিয়ে বললেন- মালপত্র সরাতে ভবনে লোক ঢুকেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা ধাক্কাধাক্কি করে ভবন ভেঙ্গে ফেলেছেন। প্রশ্ন জাগে- এ রাষ্ট্র কারা চালায়? তাদের কাছে শ্রমিকদের প্রাণের মূল্য কতটুকু? মাত্র কয়েক মাস আগে গত বছরের অক্টোবরে আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন্সে আগুনে পুড়ে অসহায়ভাবে মারা গেছে ১২৪ জন শ্রমিক। আজ পর্যন্ত তাজরিনের মালিককে গ্রেফতার করা হয়নি। একইভাবে বিএনপি-জামাত ৪ দলীয় জোটের আমলে ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল রাতে এই সাভারেই স্পেকট্রাম নামের ৮ তলা ভবন ধসে আনুমানিক ৩ শত শ্রমিক নিহত হয়। ওই ঘটনার জন্য দায়ী মালিক-কর্তৃপক্ষের কোনো শাস্তি হয়নি। বিচার হয়নি ২০০৬ সালে চট্টগ্রামের কেটিএস এপারেল-এ শ্রমিক হত্যার। আর আজ এই বিএনপি-জামাত জোটই শ্রমিকের জন্য মায়া কান্না কাঁদছে। গত দুই দশকে বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড, ভবন ধ্বসসহ নানা দুর্ঘটনায় প্রায় ১৩ শত শ্রমিক গণহত্যার শিকার হয়েছে। প্রতিটি দুর্ঘটনার কারণ- মালিকরা কারখানায় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করেনি। শ্রমিকের শ্রমের মতো তাদের জীবনও মালিকদের কাছে সস্তা। মুনাফালোভী মালিকদের পাশাপাশি সরকারও শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী। কারণ, কারখানা আইন মেনে চলতে কোনো সরকারই মলিকদের বাধ্য করেনি এবং কোনো দুর্ঘটনার জন্যই দায়ী কোনো মালিককে এ পর্যন্ত শাস্তি পেতে হয়নি। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে বিরোধ থাকলেও ধনীদের স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে তারা এক। মালিকদের প্রতি উদার হলেও ন্যায্য মজুরিসহ ন্যায়সঙ্গত দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ দমনে সব সরকারই কঠোর।
এই ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনাটি যেদিন ঘটল তার ক’দিন পরই পালিত হল ১ মে। আমাদের দেশবরেণ্য নেতারা এদিন বড় বড় হল হোটেলে গিয়ে, শ্রমিক সমাবেশে দাঁড়িয়ে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। কেউ হয়তো সাভারের ঘটনা স্মরণ করে অশ্রুবর্ষণ করেছেন। শ্রমিকহত্যার নায়কেরাই শ্রমিক অধিকারের জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। মুহুমূর্হু করতালিতে তাদের বক্তব্যের জয়জয়কার পড়েছে। এসব মিটিংয়ের খাবারের প্যাকেটের মূল্য সামান্য পোশাকশ্রমিকের মাসের বেতনকেও ছাড়িয়ে যাবে। তাদের তৃপ্তির ঢেঁকুরের নিচে শত শ্রমিকের আর্তনাদ, শত মায়ের আহাজারি, শত শিশুর কান্না চাপা পড়বে। কিন্তু শতবর্ষ পূর্বে শিকাগোর হে মার্কেটে যে শ্রমিকের রক্ত ‘মে দিবসের’ সূচনা করেছিল, আজ শতবছর পরে সাভারের রানা প্লাজায় ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়া শ্রমিক তার কি অর্থ খুঁজে পাবে? শত বছরেও কি এর কোনো পরিবর্তন নেই? এমন করে মৃত্যুই কি নিয়তি? দেশের লক্ষ কোটি মানুষ আজ তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে কোটি টাকার বিলাসবহুল জীবন আর অন্যদিকে একটু একটু করে ক্ষুধার অন্ন যোগাড় করতে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া মানুষের দল। একদিকে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ গোটা দেশের সম্পদ করায়ত্ত করে বসেছে, অন্যদিকে লাখো কোটি বুভুক্ষু মানুষ। রাতের বেলা স্টেশনে পা ফেলা যায় না, ফুটপাত ভর্তি মানুষ। এদের ঘর নেই, ঠিকানা নেই, ওরা জানে না কাল কি হবে। জীবন তাদের জন্য এক অজানা গন্তব্য। ওদের শিশুদের শৈশব নেই, বৃদ্ধদের আশ্রয় নেই, নেই কোনো পারিবারিক দাম্পত্য জীবন। এখানে ভালবাসার স্থান নেই, মাতৃস্নেহ কি তা এই রাস্তার শিশুরা জানে না- মায়া মমতার অবশেষটুকু এ সমাজ তাদের মধ্যে রাখেনি। যারা মাথার উপরে ছাদটুকু যোগাড় করতে পেরেছে তারাও জানেনা কাল তা থাকবে কিনা। এখানে পোশাক শ্রমিক, চা-শ্রমিক, মাটি কাটা শ্রমিক, দিনমজুর, মুটে- কারও বেঁচে থাকার মতো মজুরি নেই। অথচ দ্রব্যমূল্য হু হু করে বাড়ছে। একমুঠো ভাত সন্তানদের মুখে তুলে দেয়ার জন্য এদের মুখে রক্ত তুলে খাটতে হয়। অথচ এরাই সভ্যতার নির্মাতা। এই তিলোত্তমা নগরী, এই ঝাঁ চকচকে দালান- এরাই তৈরি করেছে। তাদের তৈরি স্কুল কলেজে তাদের ছেলেমেয়েরা পড়তে পারে না, তাদের নির্মিত হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা হয় না। এই সভ্যতা, এই স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল, এই রাষ্ট্র তাদের নয়। যাদের টাকা আছে তাদের। গরিব মাটিকাটা শ্রমিকদের জীবন দেখে বহুদিন আগে বেদনায় ক্ষোভে সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র শ্রীকান্ত উপন্যাসে লিখেছিলেন, “আধুনিক সভ্যতার বাহন তোরা, তোরা মর্। কিন্তু যে নির্মম সভ্যতা তোদের এমন ধারা করিয়াছে তাহাকে তোরা কিছুতেই ক্ষমা করিস না। যদি বহিতেই হয়, ইহাকে তোরা দ্রুতবেগে রসাতলে বহিয়া নিয়া যা।”
দেশে যে যখন ক্ষমতায় বসেছে সে-ই শ্রমিক অধিকার, দেশের স্বার্থ সবকিছু বিসর্জন দিয়ে দেশটাকে আপাদমস্তক লুট করে নিয়েছে। দুর্নীতিতে সবাই আকণ্ঠ নিমজ্জিত। গত ৪২ বছরের পুঁজিবাদী শাসনে যে সরকার যখন দেশ শাসন করেছে দেশটাকে শুষে তারা আখের ছোবড়ায় পরিণত করেছে। শ্রমিক হত্যা, নারী নির্যাতন, দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার ব্যাপারে এরা সবাই এক। পার্থক্য শুধু এদের বহিরাঙ্গে। নীতিগত ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পুঁজিপতিদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্যই এরা ক্ষমতায় বসে। এরা তাদেরই সেবাদাস, বৃহৎ শিল্পপতিদের পলিটিক্যাল ম্যানেজার। ম্যানেজারির সুযোগ প্রতি ৫ বছর পরপর কে পাবে- এটা নিয়েই এদের মারামারি। এই পুঁজিবাদই আজ শ্রমিকদের নিঃস্ব করেছে, তাদের পরিবারকে পথে নামিয়েছে। যতদিন পুঁজিবাদ থাকবে, তাদের পলিটিক্যাল ম্যানেজাররা দেশ শাসন করবে ততদিন এ মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে না। এর কোন বিচার নেই। কারণ, দেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত – একদিকে মুষ্টিমেয় মালিক ও ধনিকগোষ্ঠী, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক-কৃষক-সাধারণ মানুষ। মালিকের রাষ্ট্রে, মালিকের আইনে শ্রমিকের বিচার পাওয়ার আশা নেই। এর প্রতিকার একটাই শ্রমিকের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা।
সেদিনের ঐ ঘটনার পর হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উদ্ধারকার্যে। একদিকে শ্রমিকের প্রতি মালিকের নিষ্ঠুরতা আর সরকারের অবহেলা, উদ্ধার কাজে গাফিলতি; অন্যদিকে মানুষের প্রতি সহজাত সহমর্মিতাবোধ থেকে সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে। সরকার এমনকি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও জোগান দিতে পারেনি, জনগণ নিজেরাই টর্চ-ড্রিল মেশিন-হ্যাক্সো ব্লেড-অক্সিজেন সিলিণ্ডার ইত্যাদি কিনে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে। আহতদের চিকিৎসা এবং স্বজনের খোঁজে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষকে খাওয়াতে ব্যক্তি উদ্যোগে অর্থ সাহায্য দিয়েছেন অনেকেই। শত শত ছাত্র-যুবক, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চ, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত তরুণযুবক রক্ত দিতে ভিড় জমিয়েছেন। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এই তরুণেরাই সমাজ বদলের কাণ্ডারী। লাখো তরুণের ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’ ধ্বনিতে সারা দেশ প্রকম্পিত হয়েছিল, এই শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবিতেও তারা নিশ্চয় রাজপথ কাঁপিয়ে তুলবে- তা না হলে এই শোক-সহমর্মিতার কোনো মূল্য থাকবে না।
স্বাধীনতার জন্য এদেশের লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছিল। তারা দেশের মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেদিন তারা কল্পনাও করেননি স্বাধীন দেশে পুঁজিপতিদের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য হাজার শ্রমিককে প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে। শ্রমিকের নির্বাক লাশ আজ কোটি জনতার সামনে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে- এই কি স্বাধীনতা? এ স্বাধীনতা মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির শোষণের স্বাধীনতা। আজ প্রকৃত স্বাধীনতার মূল্য রাখতে হলে, শ্রমিকদের এই দুঃসহ শোষণ থেকে মুক্তি দিতে হলে পুঁজিবাদ উচ্ছেদ করার সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। গোটা জাতি আজ শোকাহত, বাকরুদ্ধ। এই শোকের মাতম সংগ্রামের প্লাবন ডেকে আনুক।