রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৩তম বার্ষিকী এবং দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর শাখার উদ্যোগে বিকাল ৪টায় নগরের পল্টন, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, প্রেসক্লাব এলাকায় লাল পতাকা মিছিল ও মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। নগরের ইনচার্জ নাঈমা খালেদ মনিকা সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য ফখরুদ্দিন কবির আতিক। সভা পরিচালনা করেন নগর শাখার সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য্য।
বক্তারা বলেন, মানব সমাজে যখন থেকে বৈষম্য শুরু হলো, সমাজ ধনী-গরিবে বিভক্ত হলো, তখন থেকেই সকল প্রকার শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ স্বপ্ন দেখেছে, লড়াই করেছে। এ থেকে মুক্তির বিজ্ঞানসম্মত রাস্তা দেখিয়েছিলেন মহামতি কার্ল মার্কস। কার্ল মার্কসের তত্ত্বকে বাস্তবে রূপ দিয়ে পৃথিবীর বুকে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান লেনিন। ১০৩ বছর আগে জার শাসিত রাশিয়ার বুকে শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে কমরেড লেনিন এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেন। এই বিপ্লব মানুষের অর্থনৈতিক, মানবিক, সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল। এতদিন মানুষ ভেবেছিল-মানুষে মানুষে যে বৈষম্য তার কি অবসান কখনো সম্ভব? নারী-পুরুষের সমানাধিকার কি সম্ভব, সমাজে যে শ্রেণির মানুষ সবসময় অত্যাচারিত হয়ে এসেছে তার কি কোনা অবসান হবে না? মহান রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আমাদের দেখিয়েছিল মানুষে মানুষে বৈষম্যের অবসান সম্ভব। নারী-পুরুষের সমানাধিকার সম্ভব। অত্যাচারিতরাও ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে পারে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রও পরিচালনা করতে পারে। তাদের এই শিক্ষা আমাদের দেশেও কাজে লাগাতে হবে। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষার ভিত্তিতে বাংলাদেশের মাটিতেও আমরা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-এর নেতৃত্বে শোষণমুক্তির সেই লড়াই করছি।
বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে রাতের আঁধারে ভোট-ডাকাতি করে ক্ষমতাসীন হয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এ সরকার ক্ষমতায় আসেনি, জনগণের প্রতি তার কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। করোনা মহামারিতে যেখানে মানুষের চাকরি নেই, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিয়ে সরকার প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিককে এক ধাক্কায় পথে বসিয়েছে। করোনার এই সময়ে সধারণ মানুষের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার একটা বড় অংশ লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা। সংক্রমণের যে সময়ে খুব বেশি বেশি টেস্ট করানোর কথা ছিল, সেখানে সরকার টেস্টের উপর ফি আরোপ করে মানুষকে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যখন মানুষ থাকে না, তখন যে কোনো দেশের শাসকশ্রেণিই এই রকম জনবিরোধী কাজ করে।
আজ গোটা বিশ্বের একই চেহারা। ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব। ছোট থেকে বড়, উন্নত-অনুন্নত সকল রাষ্ট্রেই বর্তমানে পুঁজিবাদী উৎপাদনব্যবস্থা ও শোষণ বিদ্যমান। মানুষের বাক-স্বাধীনতা নেই, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা নেই, কোনরকম মানবতা-মনুষ্যত্বের বালাই নেই। মানবজাতির ইতিহাসে সমাজতান্ত্রিক সমাজই এই গ্লানি থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল। যেসকল দেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানেই এ থেকে মুক্তির দিশা মিলেছিল। কিছু ভুলের কারণে সেই গৌরবময় সমাজতান্ত্রিক শিবির আজ আর নেই। কিন্তু মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পুুঁজিবাদী ব্যবস্থার অসারতা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, পুনরায় এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই মুক্তির সংগ্রাম বেগবান করার জন্য বাসদ (মার্কসবাদী) লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চেতনায় বর্তমান পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে সবাইকে এক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।