বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ২৫ এপ্রিল ২০২১ ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৬ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
কেন্দ্রীয়ভাবে স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে সংগঠনের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সীমা দত্তের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক নাঈমা খালেদ মনিকা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা নগর শাখার আহ্বায়ক তাসলিমা আকতার বিউটি, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও ঢাকা নগর শাখার সদস্যসচিব তৌফিকা লিজা প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট নিম্নোক্ত বক্তব্য তুলে ধরা হয়:
বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নেবেন। করোনা ভাইরাসের অতিমারী গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। দেশে ভাইরাস প্রতিরোধে সময়োপযোগী কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও নাজুক। জনজীবনে খাদ্য-স্বাস্থ্য সুরক্ষা-নীতিনৈতিকতা-মানবিক মূল্যবোধ সকল ক্ষেত্রেই ধস নেমেছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা এমন যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই তীব্র সংকট ঘনীভূত। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। জনমনে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা চরম রূপ নিয়েছে। বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। খবরে প্রকাশ এই সময়ে ২.৫ কোটি নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, অন্যদিকে কোটিপতি বেড়েছে ৩,৪১২ জনেরও বেশি। শিক্ষাব্যবস্থার চরম দুরবস্থা জাতির ভবিষ্যতকে ধুলায় লুন্ঠিত করেছে। ছাত্র যুবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পণ্যে পরিণত করার চলমান প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে মহামারী করোনা ভাইরাস। আজ সবচেয়ে বড় ব্যবসা এবং দুর্নীতির প্রধান ক্ষেত্র এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স-টেকনিশিয়ান নেই। ফলে সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর কারণে সকল শ্রমজীবী, পেশাজীবী মানুষের কাজের ক্ষেত্র একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত গার্মেন্টসে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ কর্মরত। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। গার্মেন্টস খোলা রেখে তাদের মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। কাজ হারিয়ে গৃহকর্মীদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা নাজুক। গ্রামীণ শ্রমজীবী নারীদের কাজ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেঁচে থাকার জন্য ঘরে ন্যূনতম খাদ্য নেই, মাথার উপর এনজিও ঋণের কিস্তি, মহাজনী সুদের চাপে মানুষ দিশেহারা। সহায় সম্বলহীন রিক্ত-নিঃস্ব মানুষের কবরই এখন একমাত্র ঠিকানা।
কর্মহীন মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে নানারূপ অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, যার প্রধান শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। করোনা পরিস্থিতিতে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। দেশের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে যারা কলের চাকা ঘোরায়; ক্ষেতে লাঙ্গল চালায়; উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সকলের মুখের আহার জোগায় সে সকল শ্রমজীবী মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে, জীবন-জীবিকা সচল রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
দাবিসমূহ:
১. নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. গার্মেন্টস ও গৃহকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি মাসে পরিবার পিছু পর্যাপ্ত খাবার ও পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ কর।
৩. সকল নাগরিকদের বিনামূল্যে করোনা টেস্ট, চিকিৎসা ও টিকা দিতে হবে। জেলা-উপজেলায় করোনা পরীক্ষায় RT-PCR ল্যাব স্থাপন কর।
৪. ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ কর। তাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও ঝুঁকি ভাতাসহ প্রণোদনা দিতে হবে।
৫. গ্রামীণ কর্মহীন শ্রমজীবী নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ কর।
৬. করোনাকালীন এনজিও ঋণ মওকুফ ও মহাজনী সুদী কারবার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ কর।