আগামীকাল ১১ আগস্ট ২০২১ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)’র উদ্যোগে সকলের জন্য করোনা টিকা ও বিনামূল্যে চিকিৎসা; লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-কৃষক-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা; রাষ্ট্রীয় পাটকল ও চিনিকল আধুনিকীকরণ করে চালু; ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল; জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ; কৃষকদের ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত; ক্রসফায়ার-এনকাউন্টারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, বেআইনি আটক, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ ইত্যাদি দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে পল্টন মোড়ে সকাল সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে দলটি। ইতোপূর্বে দলের পক্ষ থেকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন দাবিতে লড়াই গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল এই কর্মসূচি পালিত হবে।
বাসদ(মার্কসাবাদী)’র দাবিসমূহ:
১. এই বছরের মধ্যে ৮০% জনসংখ্যাকে করোনা টিকা প্রদানের ব্যবস্থা কর। সকল জেলায় করোনা পরীক্ষার ল্যাব ও উপজেলায় পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ, দৈনিক কমপক্ষে ২ লক্ষ টেস্ট চাই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ও আইসিইউ স্থাপন কর। বেসরকারি হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা বাণিজ্য বন্ধ কর। ওষুধসহ চিকিৎসা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর। স্বাস্থ্যখাতে জাতীয় আয়ের ৬% বা জাতীয় বাজেটের ২০% বরাদ্দ কর।
২. লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক-কৃষক-ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরকারি আর্থিক সহায়তা ও বিনা সুদে ঋণ দাও, কৃষিঋণ-এনজিও ঋণের সুদ মওকুফ কর। গরিব-মধ্যবিত্তের জন্য রেশনব্যবস্থা চালু কর। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির মূল্যবৃদ্ধি চলবে না। বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর কর। শহরে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অল্প ভাড়ায় সরকারি আবাসন প্রকল্প বা কলোনি নির্মাণ কর। রেল-বিআরটিস’সহ সরকারি গণপরিবহন বাড়াও।
৩. স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দাও। করোনাকালে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি মওকুফ কর। বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন সরকারি তহবিল থেকে দাও। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ কর। সবার জন্য একই পদ্ধতির সেক্যুলার শিক্ষা চাই।
৪. রাষ্ট্রীয় পাটকল ও চিনিকল আধুনিকীকরণ করে চালু রাখ, লোকসানের জন্য দায়ীদের শাস্তি চাই। ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক নিষিদ্ধ নয়, আধুনিকীকরণ করে বৈধ কর। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ কর। সব শ্রমিকের জন্য অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও ‘সর্বজনীন পেনশন’ ব্যবস্থা চাই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সহায়তার জন্য সরকারি তহবিল গঠন কর।
৫. কৃষকদের ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে রাষ্ট্রীয় ক্রয় বাড়াও। স্বল্পমূল্যে সার-বীজ-কীটনাশক ইত্যাদি উপকরণ ও কৃষিযন্ত্র সরবরাহ কর, কৃষিখাতে সরকারি বরাদ্দ ও ভতুর্কি বাড়াও। মহাজনী ও এনজিও ঋণের উচ্চ সুদের শোষণ বন্ধ কর। সরকারি খাসজমি ভূমিহীনদের বরাদ্দ দাও। ইকোনমিক জোনের নামে কৃষিজমি ধ্বংস ও উচ্ছেদ চলবে না।
৬. শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ চাই। সরকারিভাবে বেকার জনগোষ্ঠীর নাম তালিকাভুক্ত করে কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় শূন্যপদে নিয়োগ দাও, সরকারি চাকুরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত কর ও বয়সসীমা ৩২ নির্ধারণের দাবি মেনে নাও।
৭. ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও ভূমির অধিকার নিশ্চিত কর। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অঘোষিত সেনাশাসন প্রত্যাহার কর। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে দোষীদের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। মাদক-পর্নোগ্রাফি-জুয়া নির্মূল কর, মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন চাই।
৮. স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অবসান চাই। ক্রসফায়ার-এনকাউন্টারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, বেআইনি আটক, হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ কর। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল কর। প্রশাসন-বিচার বিভাগ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দলীয়করণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বন্ধ কর।
৯. দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ কর, আয়ের সাথে সঙ্গতিবিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত কর। কালো টাকার মালিক-অর্থপাচারকারী-ঋণখেলাপী-ব্যাংক লুটেরাদের গ্রেপ্তার কর।
১০. অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন চাই। নির্বাচনে টাকার খেলা-পেশীশক্তির দাপট-প্রশাসনিক কারসাজি-মিডিয়া ম্যানিপুলেশন-ধর্মের ব্যবহার বন্ধ কর। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বব্যবস্থা চালু কর।