আজ ১৮ আগস্ট ২০২১ সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক বৈধকরণ সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ব্যাটারিচালিত রিকশাা-ভ্যান-ইজিবাইক বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, ব্যাটারিচালিত পরিবহনসমূহকে লাইসেন্স প্রদান, চালকদের উপর পুলিশী হয়রানি-নির্যাতন বন্ধের দাবিতে সমাবেশ-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মানিকনগর, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, খিলগাঁও, কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর, কেরাণীগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলের অটোরিকশা শ্রমিক অংশগ্রহণ করে। সংগ্রাম কমিটির সংগঠক নাঈমা খালেদ মনিকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, সংগ্রাম কমিটির ঢাকা মহানগরের নেতা ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রাজু আহমেদ, শ্রমিকনেতা মানিক হোসেন, তসলিমা আকতার বিউটি, রিকশাশ্রমিক নেতা বাবুল মোল্লা, মোহাম্মদ শাকিল প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে সময়ে সরকারের দায়িত্ব ছিল মানুষের মৃত্যুকে ঠেকানো, করোনা মহামারিকে মোকাবেলায় চিকিৎসার সার্বিক আয়োজন নিশ্চিত করা, সেসময়ে আমরা দেখলাম সরকার তা না করে বরং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে কর্মহীন করেছে। প্রায় ৫০ লক্ষের বেশি অটোরিকশা শ্রমিক ও তাদের পরিবার-পরিজন মিলে প্রায় ৩ কোটির বেশি মানুষকে সরকার অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, কাজ হারাতে বাধ্য করেছে, সর্বোপরি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থে গরিবদের পেটে লাথি মারার এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।
সরকার যে সমস্যা দেখিয়ে সরকার অটোরিকশা-ভ্যান বন্ধের কথা বলেছে, তা নিতান্তই খোঁড়া যুক্তি। কেননা, সড়ক দুর্ঘটনার কথা যদি বলা হয়, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সড়কের দুরবস্থা ও অব্যবস্থাপনাই দায়ী। আবার অটোরিকশার প্রযুক্তিগত যে সীমাবদ্ধতা আছে, তা সহজেই সমাধানযোগ্য। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^দ্যিালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা যে পরামর্শ দিয়েছেন, তাও সরকার শুনছে না। অথচ, অটোরিকশা শ্রমিকদের উপর পুলিশের হয়রানি-নির্যাতন বেড়ে চলেছে। আর তাদের উপর ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজি তো আছেই।
ব্যাটারিচালিত রিকশা ব্যবহার চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্যেই সুবিধাজনক। কেননা, এতে একদিকে যেমন চালকের শারীরিক কষ্ট কম হয়, অন্যদিকে সাশ্রয় হয় সময় ও খরচ দুটোরই। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছে, অথচ এই বিষয়টা কেন বুঝছে না? তার কারণ, এর পেছনে রয়েছে মালিকগোষ্ঠীর স্বার্থ। মালিকদেরকে নতুন গাড়ি আমদানির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকার এই তৎপরতা চালাচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে নতুন করে মালিকদের ব্যবসার স্বার্থকেই সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। মিথ্যা অজুহাত হিসেবে নানা কথা বলছে।
এই করোনা মহামারিতে লকডাউনে অটোরিকশা বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সেই শ্রমিকরা কীভাবে চলবে, তাদের সংসারের খাবার-চিকিৎসার বন্দোবস্ত কী হবেÑসেসব নিয়ে সরকারের বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই। এমনকি অর্থ-সাহায্য, রেশনের কোনো ব্যবস্থাই সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। সবশেষে চলছে, করোনা টিকা নিয়ে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা। সরকার যদি অটোরিকশা-ভ্যান পরিবহনখাতে অন্তভুর্ক্ত করে বৈধতা প্রদান করে, তাহলে এর সমাধান হতে পারে।
পরিশেষে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত রিকশাা-ভ্যান-ইজিবাইক বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল, ব্যাটারিচালিত পরিবহনসমূহকে লাইসেন্স প্রদান, চালকদের উপর পুলিশী হয়রানি-নির্যাতন বন্ধ, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন শ্রমিকদের ভাতা ও বিনামূল্যে চিকিৎসার দাবি জানান।