আমাদের দেশে কৃষককে উচ্চমূল্যে কৃষি উপকরণ কিনতে হয়। আর ধানসহ কৃষি ফসল বিক্রি করতে হয় লোকসানী দামে। ব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত সুদ, মহাজনী ও এনজিও ঋণের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে আছে এ দেশের কৃষকরা। তারপরও কৃষক উৎপাদন করে, ফসল ফলায়। কৃষি ফসলের লাভজনক মূল্য না পেয়ে লোকসান গুণে, দেনার দায়ে সম্পদ-সম্পত্তি বিক্রি করে। এভাবে মধ্য কৃষক দরিদ্র কৃষকে, আর দরিদ্র কৃষক ভূমিহীন ক্ষেতমজুরে পরিণত হয়। এই চক্রই চলে আসছে বাংলাদেশের কৃষিতে।
এই প্রক্রিয়ায় এখন গতি পাচ্ছে কারণ প্রায় প্রতি বছর অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে হাওড় এলাকার ফসল, আগাম বন্যার ফলে কৃষক ও গ্রাম শহরের দরিদ্র মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। কোটি কোটি ক্ষেতমজুরদের সারা বছর নিশ্চিত কাজ না নেই। বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। এই ক্ষেতমজুরদের টিকে থাকাই এখন প্রধান সংগ্রাম। স্বাস্থ্য-শিক্ষা বিলাসিতার বা স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।
এইসময়ে ক্ষেতমজুরদের রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ও সারা বছরের কাজ দিতে হবে। কৃষি ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, কৃষক ক্ষেতমজুর ও দরিদ্র চাষীদের স্বল্প মূল্যে (আর্মি বা পুলিশ রেটে) গ্রামীণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সার, বীজ ও কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিএডিসিকে কার্যকর করতে হবে। সকল কৃষি ঋণ মওকুফ করতে হবে, কৃষকদের উপর দেয়া সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ঋণ নয়, কৃষিতে নগদ প্রণোদনা দিতে হবে। খাস জমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করতে হবে। ইকোনোমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল)-এর নামে এবং পাওয়ার প্লান্ট ও ইট ভাটা নির্মাণের নামে কৃষি জমি ধ্বংস, ভূমিহীনদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতি বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যায় তলিয়ে যাওয়া কৃষি ফসল হারানো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দরিদ্র মানুষদের দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এগুলোসহ মোট সাত দফা দাবিতে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন মাসব্যাপী প্রচার, পথসভা, খুলি বৈঠক, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের সংগঠিত করে। গত ১ জুন সংগঠনের উপজেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ও জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।