[মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি। বাসদ (মার্কসবাদী)’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, এদেশের অনন্যসাধারণ কমিউনিস্ট বিপ্লবী কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী গত ৬ জুলাই ২০২১ তারিখে প্রয়াণের পর ১৪ জুলাই ২০২১ তারিখে দলীয় উদ্যোগে আয়োজিত অনলাইন স্মরণসভায় কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যটি পরবর্তীতে লিখিতরূপে `কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ‘-এ সংকলিত হয়। কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হলো।]
মাননীয় সভাপতি, বাসদ (মার্কসবাদী)’র নেতৃবৃন্দ, আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় বামপন্থী নেতৃবৃন্দ, সুধীমণ্ডলী, প্রিয় কমরেডস্ এবং বন্ধুগণ, আমি প্রথমেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে, আমাদের সমগ্র পার্টির সমস্ত কমরেডদের পক্ষ থেকে কমরেড মুবিনুল হায়দারের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রদর্শন করাটা আপনা-আপনি ও স্বাভাবিকভাবে উদয় হয়। আমার মতে, দল হিসাবে সংগঠন হিসাবে বিভক্তি সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজেকে বিপ্লবী বলে দাবি করতে পারেন না, যদি অন্য ঘরানার বা অন্য প্ল্যাটফর্মের বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের ইতিবাচক অবদানকে তিনি স্বীকার না করেন, এবং সে অনুযায়ী তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব যদি তার ভেতর না থাকে। শুধু এইটুকুই নয়, আমার আগে যে ক’জন আলোচনা করেছেন, তাদের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত হয়ে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সম্পর্কে একথা বলতে চাই যে, তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি বিশুদ্ধ বিপ্লবী নৈতিকতার ধারায় নিজেকে পরিচালিত করতে সচেষ্ট থেকেছেন এবং তাঁর এই প্রয়াসের ক্ষেত্রে কোনো খাদ ছিল না। অন্তত আমার চোখে ধরা পড়া বা আমার জানাশোনার ভেতরে আমি এমন কিছু কোনো সময় খুঁজে পাইনি। ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু ভুল-ত্রুটি হওয়া এক জিনিস, আর কমিটমেন্ট থাকা অন্য জিনিস। বিপ্লবের প্রতি কমিটমেন্ট তথা শ্রমজীবী মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট, কমিউনিস্ট সভ্যতা নির্মাণের পথে সমগ্র বিশ্ব এবং আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কর্তব্যের প্রতি কমিটমেন্ট–এসব ক্ষেত্রে নির্ভেজাল একাগ্রতা নিয়ে কাজ করার মতো একজন মানুষ ছিলেন কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।
আমার পক্ষে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সম্পর্কে একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করা এই কারণে কষ্টকর যে, তাঁর সঙ্গে আমাদের পার্টির ইন্টার্যাকশন, অথবা ব্যক্তি হিসাবে তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ইন্টার্যাকশন, খুব যে দীর্ঘকালীন ছিল তেমন নয়। তাঁর নামের সঙ্গে পরিচিত হলেও তাঁর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতার, এমনকি ঘনিষ্ঠভাবে কথা বলার সুযোগও একেবারে ইদানিংকালে কিছুটা সম্ভব হয়েছে। সিপিবি এবং বাসদ যখন থেকে যৌথভাবে একসঙ্গে কাজ করা শুরু করল এবং রাজপথে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার প্রক্রিয়া আমরা সূচনা করেছিলাম, বিশেষ করে তখনই এটি সম্ভব হয়েছিল। এখনও আমার মনে পড়ছে প্রেসক্লাবে মঞ্চের উপর কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীসহ আমরা অনেকে দাঁড়িয়ে সেই সভায় বক্তৃতা করেছিলাম। তারপরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কিংবা বহুপাক্ষিক কয়েকটা দল মিলে যখন আলোচনা করেছি, তখন তাঁর সঙ্গে ইন্টার্যাকশন হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কিংবা বাসদ অফিসে যখন আমি গেছি, অথবা সিপিবি অফিসে যখন বাসদ নেতারা আলোচনার জন্য এসেছেন, তখন তাঁর সাথে কথাবার্তা হয়েছে। একেবারে শেষদিকটায় এই যোগসূত্রটা আরেকটু বৃদ্ধি করার জন্য আমরা উভয়ই বেশ সচেষ্ট ছিলাম। করোনাকালেও টেলিফোনে কথাবার্তা হতো এবং খোঁজ-খবর নেওয়ার বাইরেও কতগুলো বিষয়ে আলোচনা হতো। আমার একটা দুঃখ থেকে গেল যে, তাঁর সঙ্গে আরও গভীর আলোচনার সুযোগ আমি করে নিতে পারিনি। এবং আরও বড় একটা দুঃখ যে, রাজনৈতিক আদর্শগত আলোচনার বাইরে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে সম্পর্কটাকে আরও ঘনিষ্ঠ করার সুযোগ আমি করে নিতে পারিনি।
আমি বেশি লম্বা কথায় যাব না। আমি কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী সম্পর্কে আজ শুনতেই বেশি আগ্রহী। তাঁর সম্পর্কে নানান সূত্র থেকে নানা কথার ভেতর দিয়ে হয়তো কিছু শুনতাম। কিছু ভুল শুনতাম। সেগুলো আবার সংশোধন হতো। তাঁর জীবন-বৃত্তান্ত দলের কর্মীদের কাছে যতটা জানা আছে, দলের বাইরের কর্মীদের কাছে হয়তো ততটা জানা নেই। এজন্য, শুরুতে যেটা বলা হলো, সে অনুসারে তাঁর একটা স্মারকগ্রন্থ রচিত হলে তা থেকে অনেককিছু জানার একটা পরিস্থিতি হতে পারে।
আমাদের এখানকার বাম আন্দোলনের ধারার ক্ষেত্রে আমি এখানে কয়েকটা মন্তব্য করতে চাই। আমাদের উপমহাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯২০ সালের দিকে। এবং নানা স্রোতধারা থেকে এসে সেই সূচনাটাকে পরিপক্ব করে তা দ্রুতই একটা সাংগঠনিক রূপ অর্জন করেছিল। ১৯২০ সালে কানপুর কনফারেন্স, যেটাকে গণ্য করা হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেস হিসাবে, সেই কংগ্রেসে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে সুনির্দিষ্টভাবে পার্টি হিসাবে আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম শুরু করা হয়েছিল। একটু খতিয়ে দেখলেই দেখা যাবে কমিউনিস্ট আন্দোলন ভুঁইফোড়, হঠাৎ করে উদ্ভাবিত কোনো আন্দোলন ছিল না। বিদ্যমান জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে নানা স্রোতধারার বিপ্লবীরা এখানে এসে সমবেত হয়েছিল। তার মধ্যে একটা স্রোত ছিল, যেটাকে আমরা সাধারণত ভুলভাবে আখ্যায়িত করে থাকি ‘সন্ত্রাসবাদী’ আন্দোলন হিসাবে, সেই ধারার অনুশীলন, যুগান্তর ইত্যাদি গ্রুপ থেকে (আসলে সন্ত্রাসবাদী এই অর্থে যে, তাঁরা চিন্তা করত ব্রিটিশদেরকে ভয় দেখিয়ে, তাদের প্রাণের উপর হুমকি সৃষ্টি করে একটা ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে ব্রিটিশরা ভয়ে পালিয়ে যাবে। এর জন্য তাঁরা ব্যক্তিগত সন্ত্রাসের পথ গ্রহণ করেছিল।) এইসব বিপ্লবী আন্দোলনের যারা সংগঠক ও অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন, তাদের বেশিরভাগ উপলব্ধি করলেন যে, জনগণকে সঙ্গে না রাখতে পারলে আগানো যায় না। ফলে জনগণের শক্তির দিকে তাদের দৃষ্টি গেল। তারা ভাবতে শুরু করলেন–জনগণ কারা? তারা বুঝতে পারলেন যে যারা কৃষক, শ্রমিক, শ্রমজীবী-মেহনতি মানুষ, তারাই জনগণ। এইভাবে তারা আস্তে আস্তে মার্কসবাদের দিকে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের দিকে আসতে থাকলেন। অন্যদিকে বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন গড়ে উঠছিল। শিল্প-কলকারখানা কিছু কিছু সৃষ্টি হচ্ছিল। বোম্বাই-কলকাতা-মাদ্রাজ এইসব দিকে। সেই ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের ধারায় আস্তে আস্তে অর্থনীতিবাদের ধারা থেকে সরে এসে রাজনৈতিক সচেতন বিপ্লবী সমাজতন্ত্র অভিমুখী কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারায় তারা সামিল হতে থাকেন। আবার, দেখা যায় যে, গান্ধীজীর নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেসের যে অহিংস ধারা, সেটা বারবার ফেইল করে যাচ্ছে। জনগণ জেগে উঠছে, কিন্তু গান্ধীজী তাদেরকে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। মাঝপথে আন্দোলন থেমে যাচ্ছে। তারা বুঝল যে এই পথে হবে না। তাদের মোহভঙ্গ হওয়ায় অনেকে কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারায় এসে যোগ দিয়েছিলেন। এদিকে সুভাষ বোসের যে মিলিট্যান্ট লাইন, সেটা অনেককে ইনস্পায়ার করেছিল। সেখান থেকে একটা ধারা এসে আস্তে আস্তে মার্কসবাদের দিকে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের দিকে আসল। আমি এত বিস্তারিত বিবরণে যাব না। মূল কথাটা হলো যে, শুধু একক একটি মাত্র দরজা দিয়ে প্রবেশ করে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সৃষ্টি এবং বিকাশ হয়নি।
এক্ষেত্রে আমাদের দেশের কথায় এবার আসি। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির ধারার ভেতরে যেমন, তেমনি আমাদের দেশেও, যা আনু মুহাম্মদ বললেন, চীনপন্থী-রুশপন্থী বিভাজন এবং চীনপন্থীদের ভিতরে আরও অনেক ডিভিশন হয়েছে। এটি সনাতন কমিউনিস্ট ধারার কথা। বাংলাদেশে এই সনাতন কমিউনিস্ট ধারার বাইরে আরেকটা ধারা আমাদের দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে শরিক আছে। আমি এটাকে বিরাট এক অর্জন ও আশীর্বাদ বলে মনে করি। এই ধারার প্রধান উপাদান ছিল মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে গড়ে ওঠা র্যাডিক্যাল জাতীয়তাবাদী শক্তি। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় নানাবিধ উপাদানের কার্যকারণের ফলে এই র্যাডিকালাইজেশন ঘটেছিল। শ্রমিক-কৃষকরা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। বিশ্ব প্রতিক্রিয়া ও প্রগতি–এই দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ধারায় আমরা অগ্রসর হয়েছিলাম। বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, বিশ্বাস করে হোক বা না বিশ্বাস করে হোক, সমাজতন্ত্রের স্লোগান উচ্চারণ করা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভবপর ছিল না। এসব ঘটনাবলির ফলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভেতরেও একটা র্যাডিকাল ধারার উদ্ভব ঘটেছিল। যেটার অভিপ্রকাশ ঘটেছিল ‘জাতীয় সমাজতন্ত্র’ ও ‘জাসদ’ সৃষ্টির মাধ্যমে। এবং সেই ঘরানার ভেতর থেকে পরবর্তীকালে বাসদের জন্ম হয়েছিল। সেখানেও একাধিকবার বিভাজন ঘটেছে। সম্প্রতি বাসদ (মার্কসবাদী)-র জন্ম হয়েছে। অনুরূপভাবে জাসদেরও ভাগ হয়েছে।
আমি সবাইকে বিশেষভাবে ভাবার জন্য আমার নিজস্ব একটি ভাবনার কথা বলব। আমি দলের ভেতরে অথবা বাইরের কোনো কমরেডের সাথে যখন ইন্টার্যাক্ট করি, তখন আমি সাধারণত প্রথমে তার ভেতরে বিদ্যমান বিপ্লবী উপাদানের উপস্থিতি খোঁজার চেষ্টা করি। ‘হোয়ার ইজ আওয়ার ডিফারেন্স’–প্রথমে সেটা আমার নজরে আসে না। ‘হোয়ার ইজ আওয়ার ইউনিটি’–সেটার দিকে প্রথমে আমার নজর চলে যায়। আমি তখন দেখতে পাই যে, আরে! তিনি তো দেখি আমার মতোই চিন্তা করেন! তাঁর কাছ থেকে তো আমি অনেক সুন্দর জিনিস শিখতে পারলাম! সম্ভবত আমাদের বর্তমান পর্যায়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ আমরা এভাবে ভাবি না, চর্চা করি না।
আমাদের দলগুলোর গঠন প্রক্রিয়ায় তার শ্রেণিবৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তসুলভ কতগুলো ভাবধারা, চিন্তা, অভ্যাস ইত্যাদি ধরনের বিচ্যুতিগুলো আমাদের ভেতরে জন্ম নিয়ে আছে এবং নিয়ে চলেছে। এ ধরনের প্রবণতাগুলোকে আমরা কীভাবে নেগেইট করতে পারি প্রত্যেককেই সেই দিকে নজর দিতে হবে। সম্ভবত পরস্পরকে শুধুমাত্র ‘সাদা ও কালো’ হিসাবে কিংবা ‘বিশুদ্ধ অথবা গন-কেস’ বলে গণ্য করাটি যেমন ঐতিহাসিকভাবে কারেক্ট না, একইভাবে তা আইডিয়োলজিক্যালিও কারেক্ট না। আর, দেশের বর্তমান কনটেক্সট্ বিবেচনা করলে এধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ হবে একেবারেই অনুচিত। আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র বাইরে একটা বিকল্প গড়ে তোলা এখন আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। অন্যথায় দেশকে বাঁচাতে পারব না।
বহুদিন ধরে একটা কথা কেউ কেউ বলে চলেছেন যে, ‘সমাজতন্ত্রের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাই তোমাদেরকে এখন নতুন অন্যকিছুর কথা ভাবতে হবে।’ ভারতের অধ্যাপক অশোক মিত্রের নাম আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন। তাঁকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সমাজতন্ত্রের কি কোনো ভবিষ্যৎ আছে? তিনি একটা অসাধারণ জবাব দিয়ে বলেছিলেন, “সমাজতন্ত্রের যদি ভবিষ্যৎ না থাকে, তাহলে জানবেন ভবিষ্যতেরও কোনো ভবিষ্যৎ নেই।” কথাটার অর্থ হলো–মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হতে পারে একমাত্র সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদে উত্তরণের ভিতর দিয়ে।
দেশ আজ লুটেরা ধনিকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এই প্রতিক্রিয়াশীল-গণবিরোধী শক্তিকে আজ ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। শোষকশ্রেণির রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসাবে আওয়ামী লীগ বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থায় আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হবে; যে বিকল্প ব্যবস্থার ভিত্তি আমরা ’৭১ সালে রচনা করে রেখেছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের আকাক্সক্ষাকে রূপ দেওয়ার জন্য তাকে ভিত্তি করে আমাদের শক্তি সমাবেশ করতে হবে। এবং সেটি করতে হলে ‘দ্যা লেফট্ মাস্ট ইউনাইট’। সব যুক্তির ঊর্ধ্বে হলো এই যুক্তি। বামপন্থীরা একত্র হতে হবে। এবং তার চতুর্দিকে অপরাপর আরও প্রকৃত গণতান্ত্রিক, মানবিক শক্তিকে কতটা টেনে আনা যায়, সেটাও আমাদেরকে ট্যাক্টিক্যালি বিবেচনা করতে হবে। আমার চিন্তাটা আমি এখানে বললাম।
মধ্যবিত্তের ভিতরে একটা ত্রুটি হলো, যেকথা দু-এক জায়গায় আমি আগেও বলেছি, তার রিপিটেশন হলেও আমি বলতে চাই, বোধ হয় ‘আমাদের বুদ্ধি বেশি, আক্কেল কম’। একটু ভেবে দেখবেন। সূক্ষ্ম ব্যাপার নিয়ে আমরা এত ব্যস্ত হয়ে যাই যে, মোটা দাগে বিবেচনা করলে আসল জায়গা যে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, সেটা সবসময় খেয়াল রাখি না। আরেকটা কথা বলি ‘ইনফরমেশন’ বা তথ্য এক জিনিস। ‘ইনফরমেশনকে’ বেসিস করে যে ‘নলেজ’ বা জ্ঞান তৈরি হয়, সেটা আরেকটা জিনিস। ‘ইনফরমেশন’ থাকলেই ‘নলেজ’ বা জ্ঞান হয় না। আর জ্ঞান বা ‘নলেজ’ থাকলেই প্রজ্ঞা বা ‘উইজ্ডম’ হয় না। সেই উইজ্ডম কমিউনিস্টদের, বামপন্থীদের থাকতে হবে। হায়দার ভাইয়ের সঙ্গে অল্পস্বল্প আমার যে সম্পর্ক হয়েছিল, তাতে আমার মনে হয়েছে যে, ‘ওয়াইজ’ অর্থাৎ প্রজ্ঞাবান মানুষের গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যগুলো কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর ভেতর রয়েছে।
আমি আশা করব, কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর অবদানকে আমরা সঠিকভাবে আত্মস্থ করব। তাঁর নিজের জীবনে ‘আদর্শের’ প্রতিফলন ঘটানোর জন্য তিনি যেভাবে প্রয়াসী হয়েছিলেন, সেটাও আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করবে। সত্যের অনন্ত অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে। সমস্ত বিশ্ব মানবতাকে মুক্ত করে সাম্যবাদী সভ্যতা নির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের যে মূল মিশন, সেই পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর সংগ্রাম আমাদেরকে পথ দেখাবে।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী লাল সালাম!
আপনাদের অভিনন্দন! সবাইকে ধন্যবাদ।