সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ মারা গেলেন। এই মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যমগুলোতে দেখা গেলো নানামুখী প্রতিক্রিয়া। কর্পোরেট মিডিয়াগুলোর ভাষায় গর্বাচেভ সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে নাকি ব্যক্তির বিকাশের বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। গর্বাচেভের নেতৃত্বেই সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি সোভিয়েত ইউনিয়নে নিষিদ্ধ হয়। একইসাথে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় সোভিয়েত রাষ্ট্র। তাই গর্বাচেভ কর্পোরেট মিডিয়ার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যে, ১৫টি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হলো তার জনগণ কী পেলেন? কেমন চর্চা চলছে মুক্তচিন্তার? ব্যক্তির বিকাশের কী অবস্থা? খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ অন্যান্য সূচকগুলোর অবস্থা কী?
প্রাক্তন সোভিয়েতভুক্ত বর্তমানে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পরিচালিত দেশগুলোতে পতন পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক সংকট তীব্র হয়েছে। মানুষের দুরাবস্থা বেড়েছে। এটা শুধু সোভিয়েতভুক্ত দেশের চিত্র নয়, পূর্ব ইউরোপের যেসকল দেশ আগে সমাজতান্ত্রিক ছিলো তাদের বেশিরভাগের চিত্র তাই।
অবশ্য এইসকল দেশের এই পরিণতির জন্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকেই দায়ী করা হয়। বলা হয়, পূর্বে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করার কারণেই নাকি বর্তমানের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রচারের অধিনায়ক, পুঁজিবাদী পথে অর্থনীতি বিকাশের রোল মডেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কী অবস্থা? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সময় ১৯৯০-৯১ সালে আমেরিকায় বেকারত্বের হার ছিলো প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ। এই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে এগোয়নি কখনোই। যুদ্ধ লাগিয়ে, অস্ত্র বিক্রি করেও আমেরিকার বেকারত্ব ঘুচানো যায়নি। এর পরিণতিতে ২০০৮ সালে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়। এর ঘটে যায় ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট মুভমেন্ট’। আমেরিকার পঁুজিপতিদের আখড়ার সামনে বসে খোদ আমেরিকার জনগণ বললেন, আমাদের দেশে ১ শতাংশ লোক ৯৯ শতাংশ লোককে বঞ্চিত করে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। বললেন, আমরা ৯৯ শতাংশের দলে।
আবার আমেরিকার শাসকগোষ্ঠীর সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা ও বিভিন্ন দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তাদের নগ্ন হস্তক্ষেপের বিরোধীতা করেন এমন একদল মানুষও মনে করেন যে, গর্বাচেভ সোভিয়েতের জনগণকে একটা মুক্তির স্বাদ দিয়েছেন। তারা মনে করেন আমেরিকা এটাকে তার নিজ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ব্যবহার করেছে। তারা সা¤্রাজ্যবাদ স্বীকার করেন কিন্তু পুঁজিবাদী শোষণকে ধরতে পারেননা। শ্রেণিশোষণ, শ্রেণিসংগ্রাম মানেন না। এই লিবারেল চিন্তার লোকেদের পরিচালিত মিডিয়াগুলো গর্বাচেভ বন্দনা ও আমেরিকার বিরুদ্ধতা দুই-ই করেছেন।
অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের পক্ষে অনেক লেখাও এই সময়ে এসেছে। সেখানে গর্বাচেভের ভূমিকার নিন্দা যেমন আছে, তেমনি আছে সোভিয়েত পতনের কারণ সম্পর্কিত আলোচনার চেষ্টা। এ সম্পর্কিত নির্মোহ আলোচনা খুবই জরুরী। কারণ সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের গৌরবের দিন অস্বীকার না করলেও—এই প্রশ্ন অনেকের মনেই এখন জন্ম নিয়েছে যে, এই বিরাট মহাযজ্ঞের আগুন নিজ থেকেই নিভে গেলো কেন? ভেতরের কোন প্রতিরোধ ছাড়াই কিভাবে সংঘটিত হলো এই প্রতিবিপ্লব?
ভাঙন হঠাৎ করে হয়েছে, কিন্তু ভেতর থেকে সমাজতন্ত্র দুর্বল হচ্ছিলো দীর্ঘদিন ধরে এবং ধীরে ধীরে। সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভেতরে পরিমাণগত পরিবর্তন যে ঘটনাগুলোর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছিলো, সেই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর ভূমিকা কী ছিলো? কোন বাস্তবসম্মত বিশ্লেষণ সে ব্যাপারে ছিলো কি? সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পর সেই সম্পর্কিত সঠিক বিশ্লেষণগুলো কি শিক্ষা হিসেবে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সামনে এসেছে? এই প্রবন্ধে আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে এই বিষয়গুলো আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
গর্বাচেভের ‘পেরেস্ত্রইকা’ ও ‘গ্লাসনস্ত’: অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিবিপ্লবের চূড়ান্ত দলিল
সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরই ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় কমিটির প্লেনারি মিটিংয়ে গর্বাচেভ তার ‘পেরেস্ত্রইকা ও গ্লাসনস্ত’ এর পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। তারপর ১৯৮৬ সালের ২৭তম পার্টি কংগ্রেসে এবং ১৯৮৮ সালের ১৯তম ‘অল ইউনিয়ন পার্টি কনফারেন্স’ এর মধ্য দিয়ে তিনি ধাপে ধাপে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। এই সময়ের মধ্যে যতগুলো কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং ও প্লেনারি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়–সেগুলো হয় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই।
পেরেস্ত্রইকা বা পুনর্গঠন মানে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন। এতে কেন্দ্রীভূত ও পরিকল্পিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পরিবর্তে তথাকথিত ‘সেল্ফ ফিনান্সিং’ ও ‘সেল্ফ ম্যানেজমেন্ট’-এর মাধ্যমে শিল্প ও কৃষি ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ ‘অপারেশনাল অটোনমি’ চালু করা হয়। রাষ্ট্রীয় ও যৌথ খামারগুলোকে সমবায় খামারে রূপান্তরিত করা হয়। এগুলোতেও ‘সেল্ফ ফিনান্সিং’ ও ‘সেল্ফ ম্যানেজমেন্ট’ চালু করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কৃষকদের হাতে জমির নিরঙ্কুশ মালিকানা প্রদান করা হয়। উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের পরিবর্তে প্রোডাকশন ইউনিটগুলোর ম্যানেজারদের হাতে অর্পণ করা হয়। ম্যানেজারদের বাজার থেকে লিজ ও কন্ট্রাক্ট-এর মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করার অধিকার দেয়া হয়। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অধিকারও তাদের উপর ন্যস্ত করা হয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বলা হয়, উৎপাদনের নীতি নির্ধারণ করবে ম্যানেজাররা এবং তা নির্ধারিত হবে তাদের নিজস্ব প্রোডাকশন ইউনিটগুলোর উন্নতির দিকে লক্ষ্য রেখে। এই উন্নতির মাপকাঠি হলো মুনাফা, সামাজিক কল্যাণ নয়। এভাবে, এককথায় সমগ্র অর্থনীতিকে বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ পুঁজিবাদী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই ম্যানেজার শ্রেণিই হচ্ছে সোভিয়েত সমাজের নতুন বুর্জোয়াশ্রেণি, যাদেরকে ‘পেরেস্ত্রইকা’র মাধ্যমে সোভিয়েত অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের নিরঙ্কুশ অধিকার আইনিভাবে প্রদান করা হয়।
অথচ পুঁজিবাদী অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের এই উদ্যোগ নেয়া হয় সমাজতন্ত্রকে অধিকতর সুদৃঢ় করার কথা বলতে বলতেই। এজন্য অর্থনীতিতে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা এবং অর্থনৈতিক সংকটকে অজুহাত হিসেবে সামনে তুলে ধরা হয়। অথচ এই নৈরাজ্য সৃষ্টিই হয়েছিলো সমাজতন্ত্রের মধ্যে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নিয়ম চালু করার জন্য, পেরেস্ত্রইকা যার সবচেয়ে পরিণত সংস্করণ।
‘গ্লাসনস্ত’ অর্থাৎ ‘খোলা হাওয়া’ কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে গর্বাচেভ তার ভাষ্যে সমাজতন্ত্রকে ‘মানবিক মুখাবয়ব’ দেন। যেন এর আগে সমাজতন্ত্র অমানবিক ছিলো। এর মাধ্যমে পুঁজিবাদী বিশ্বের সমস্ত পঁচাগলা ভোগবাদী সংস্কৃতির আমদানি শুরু হয়। মস্কোতে সুন্দরী প্রতিযেগিতা অনুষ্ঠিত হয়, আরবাত স্ট্রিটে বে্্রক ডান্স শুরু হয়, স্ট্যালিনকে কালিমালিপ্ত করে তৈরি করা সিনেমার পরিচালক পুরস্কৃত হন। সমাজতন্ত্রবিরোধী সমস্ত চিন্তা ও সংস্কৃতির একপাক্ষিক প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। আর এর নাম দেয়া হয় ‘মুক্ত হাওয়া’। যে বিষাক্ত হাওয়ার প্রবাহে পুঁজিবাদী দেশগুলোর জনগণের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে প্রতিনিয়ত, সেই হাওয়া প্রবাহের দিকে সোভিয়েতের দরজা খুলে দেয়ার নাম হলো ‘গ্লাসনস্ত’। এই খোলা হাওয়া সোভিয়েতবাসীর মনে ব্যক্তিস্বার্থ ও ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা সৃষ্টির জন্য, তাদের ধনী হওয়ার কাল্পনিক স্বপ্ন তৈরি করার জন্য। তা না হলে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। একদিন যে সোভিয়েত জনগণ সবাইকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখতো, তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধি ও ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টির জন্য এই গ্লাসনস্ত। এককথায় গ্লাসনস্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে সাস্কৃতিক প্রতিবিপ্লব।
আধুনিক সংশোধনবাদ যেভাবে শুরু হলো
বিপ্লবের পর দেশকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য এক দীর্ঘ রাস্তা সোভিয়েত জনগণকে পাড়ি দিতে হয়েছিলো আর এই সমাজতান্ত্রিক বিনির্মাণের শিল্পী ছিলেন মহান স্ট্যালিন। স্ট্যালিন অল্প সময়ের মধ্যেই গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত, দারিদ্রপীড়িত সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতিকে এক সৃদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করান।
কিন্তু ক্রুশ্চেভ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে সমাজতন্ত্রের এক অদ্ভুত মানে করলেন। তিনি সমাজতন্ত্রের মানে করলেন উৎপাদনের প্রাচুর্য। উৎপাদনের প্রাচুর্য যদি না থাকে, যদি সমাজতান্ত্রিক দেশের উৎপাদন পুঁজিবাদী দেশের পেছনে পড়ে থাকে তাহলে তাকে কিভাবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ বলা যাবে? এই উৎপাদনের প্রাচুর্যের ধারণা তাকে অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ ও লেবার ইনসেনটিভ দেয়ার দিকে নিয়ে গেলো। অথচ তিনি ধরতেই পারলেন না আমেরিকা থেকে মোট উৎপাদন কম থাকার পরও গোটা দুনিয়াকে কমিউনিস্টরা যে জয় করতে পেরেছিলো, তার শক্তি ছিলো ভিন্ন জায়গায়। চেতনার নিম্নমানের জন্য এই বুনিয়াদি বিষয়টি ধরতে না পারার কারণে চিন্তার ক্ষেত্রে তার বিচ্যুতি ঘটলো। চেতনার নিম্নমান যেমন হঠকারিতার জন্ম দেয়, তেমনি সংশোধনবাদেরও জন্ম দেয়। চেতনার এই নিম্নমানই ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে আধুনিক সংশোধনবাদের জন্ম দিয়েছে। এই সংশোধনবাদ একদিকে ব্যক্তিগত ইনসেনটিভ দেয়ার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে পুঁজিবাদী পুনরুজ্জীবনের সূচনা ঘটিয়েছে, অন্যদিকে এর ফলাফল হিসেবে চিন্তার ক্ষেত্রে এসেছে লিবারেলাইজেশন বা উদারনীতিবাদ।
আর এজন্য ক্রুশ্চেভকে ব্যক্তিপূজার বিরুদ্ধে সংগ্রামের নামে ব্যক্তি স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামতে হয়েছে। যে সংশোনবাদী রাস্তায় তারা হাঁটছিলেন তাতে চলতে গেলে স্ট্যালিনকে আক্রমণ না করলে চলে না। কারণ স্ট্যালিন এই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মূলনীতিগুলোকে রক্ষা করেই অর্থনৈতিক পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন। যারা এর বাইরে যেতে চেয়েছেন, তাদের সাথে তিনি লড়াই করেছেন, তত্ত্বগতভাবে ও প্রায়োগিকভাবে তাদের মোকাবেলা করেছেন। একটি দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু রাখতে গিয়ে কী কী সংকট মোকাবেলা করতে হয়, মূল্যের নিয়ম, পণ্য পরিবহন এসবের রূপ কী হবে এ সম্পর্কে স্ট্যালিনের স্পষ্ট বক্তব্য ছিলো।
স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর তাঁর অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ ও তাঁর সময়ে গৃহিত রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলোর সমালোচনা শুরু করা হয়। ঘৃণ্যভাবে তাঁকে আক্রমণ করা হয়। তাঁকে একজন স্বৈরতন্ত্রী একনায়করূপে সোভিয়েত জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়। কেন্দ্রীভূত ও পরিকল্পিত অর্থনীতির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু হয়, লিবারম্যানের মতো অর্থনীতিবিদদের সামনে আনা হয়। তারা বলতে থাকেন যে, কেন্দ্রীভূত অর্থনীতি অপ্রচলিত, নিয়ন্ত্রণমূলক ও আমলাতান্ত্রিক। তারা মুনাফাকে উৎপাদনের নিয়ামক হিসাবে নির্ধারণের উপর জোর দেন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের মেটেরিয়াল ইনসেনটিভ দেয়ার প্রথা চালু করার কথা বলতে থাকেন।
এর ফলে অর্থনৈতিক সংস্কারের নামে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠা ও বাজার অর্থনীতিকে পুনঃপ্রবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাতে পুরাতন সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর সাথে নতুন অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচীর অনিবার্য বিরোধ ঘটে। অর্থনীতি ধীরে ধীরে সংকটে নিমজ্জিত হতে থাকে এবং অর্থনীতিতে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার জন্ম হয়। ফলে গর্বাচেভ যে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিলেন সেটি পরিকল্পিত এবং দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাদী পথে হাঁটবার ফলাফল।
নেতৃত্বের ভুল নেতাকর্মীরা বুঝতে পারলো না কেন
এতবড় একটা মহান সংগ্রাম একজন নেতার কয়েকটা পদক্ষেপের কারণে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে না। প্রশ্ন আসে ক্রুশ্চেভের এই ভুল সোভিয়েত পার্টি ও সোভিয়েত জনগণ বুঝতে পারলো না কেন?
এর প্রথম কারণ হচ্ছে পার্টির মধ্যে নেতা-কর্মীর যান্ত্রিক সম্পর্ক। পার্টিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক ছিলো না। নেতারা যা বলতেন কর্মীরা তা অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন। এই চিন্তার প্রভাব শুধু সোভিয়েত পার্টিতে নয়, গোটা সাম্যবাদী শিবিরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিলো। সাম্যবাদী শিবিরের ক্ষেত্রেও দেখা যায় নেতৃত্বকারী কমিউনিস্ট পার্টি যা বলছেন, অন্যান্যরা তা কোন প্রশ্ন ব্যতিরেকেই গ্রহণ করছেন। ফলে সোভিয়েত পার্টির নেতৃত্ব যখন স্ট্যালিনের হাতে ছিলো তখন চিন্তার এই যান্ত্রিকতা পার্টি ও সাম্যবাদী শিবিরের অভ্যন্তরে থাকলেও সেটি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কিংবা সাম্যবাদী শিবিরকে বিপন্ন করেনি। কিন্তু যখন স্ট্যালিন অনুপস্থিত হলেন, তখন ক্রুশ্চেভের এই পদক্ষেপগুলোর উদ্দেশ্য সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব বুঝতে না পেরে তাকে অন্ধভাবে অনুসরন করলেন। পরবর্তীতে এর বিষময় ফলাফল বর্তালো সোভিয়েত সমাজতন্ত্র ও বিশ্বসাম্যবাদী ব্যবস্থার উপর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অভূতপূর্ব জয়, বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অগ্রগতি ও তার নেতৃত্বে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান—এসব দেখে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ও কর্মীদের মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তিও এসেছিলো। তারা শুধু বাইরের সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের আক্রমণ নিয়েই চিন্তিত ছিলেন। দলের ভেতরের সংগ্রামের উপর জোর দেননি। আদর্শগত চর্চাকে অবহেলা করেছেন। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণ এসেছে ভেতর থেকে, যা শেষ পর্যন্ত দলের নিষ্ঠাবান নেতাকর্মীরা ঠেকাতে পারেননি।
বিশ্বসাম্যবাদী শিবিরের যান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কমরেড শিবদাস ঘোষের হুশিয়ারি
সমাজতান্ত্রিক সমাজ শ্রেণিহীন সমাজ নয়। পুঁজিবাদ থেকে শ্রেণিহীন সাম্যবাদী সমাজে যাওয়ার মধ্যবর্তী সমাজব্যবস্থা হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা। ফলে এই সমাজে শ্রেণিদ্বন্দ্ব থাকে। ক্ষমতা হারানো পুঁজিপতি শ্রেণি এই ব্যবস্থার মধ্যেই তাদের মিত্রের সন্ধান করে, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে।
একটা দল বিপ্লব সংঘটিত করলেই দলের সকল সদস্য একটা ডিক্রি জারির মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ও সংস্কৃতি, যেটা পুঁজিবাদী সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তিগত চিন্তা ও ব্যক্তিগতভাবে বাঁচবার সংস্কৃতির বিপরীতে যৌথচিন্তা ও যৌথভাবে বাঁচবার সংস্কৃতি—সেটা রপ্ত করে ফেলে না। ফলে সমাজতান্ত্রিক সমাজে, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিতেও পুঁজিবাদ বেঁচে থাকে ব্যক্তিগত রুচি ও অভ্যাসের মধ্যে, মানুষের চিন্তাগত ক্ষেত্রে। এগুলোকে উস্কে দিয়ে পুঁজিবাদীরা শক্তি সঞ্চয় করে। তাই উৎপাদন বিকাশের সাথে সাথে ক্রমাগতভাবে আদর্শগত মানকে বিকশিত করতে হয়। নতুন নতুন যে সকল প্রশ্ন চিন্তাজগতে আসে তার উত্তর করতে হয়। পুঁজিবাদী সমাজে মানুষ কাজ করে নিজে টিকে থাকার জন্য, ব্যক্তিগত স্বার্থে। সমাজতান্ত্রিক সমাজে উৎপাদনের উদ্দেশ্যই আমূল পাল্টে যায়। এখানে ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, মানুষ উৎপাদন করে সকলে মিলে ভালো থাকার জন্য। বর্ধিত উৎপাদন দিয়ে সমাজতান্ত্রিক সমাজে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, শ্রমিকদের শ্রমঘন্টা কমে, তারা অর্থনৈতিক উৎপাদনের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক উপাদনের সময় পায়।
আমরা যে বিষয়টায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে চাইছি সেটি হলো, গর্বাচেভের দুর্মতির কারণে এক মহান বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটা দেশের রাতারাতি এমন পরিণতি হতে পারে না। গর্বাচেভ কফিনের শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন। কিন্তু এর মৃত্যু হয়েছে ধীরে ধীরে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে আধুনিক সংশোধনবাদের জন্ম ও সমাজতন্ত্রবিরোধী অর্থনৈতিক সংস্কার পদক্ষেপ নেয়ার সময় বিশ্বসাম্যবাদী শিবিরে অবস্থিত অন্যান্য দলগুলোর ভূমিকা কী ছিলো? এটা গভীরভাবে ভাবা দরকার।
সে সময়ে সমাজতন্ত্রের অভূতপূর্ব বিজয় সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক সাম্যবাদী শিবিরের মধ্যে যান্ত্রিক চিন্তাপদ্ধতি ও কর্মপদ্ধতির প্রভাব মারাত্মকভাবে পরিস্ফুট হচ্ছিলো। সোস্যালিস্ট ইন্ডিভিজুয়ালিজমের নানা মাত্রার প্রভাব, জাতীয়তাবাদী বিচ্যুতি, নেতৃত্বকারী কমিউনিস্ট পার্টিকে অন্ধভাবে অনুসরনের মতো বিষয়গুলো কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রভাব বিস্তার করছিলো। দলের মধ্যে ও আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের সাথে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের অভাব, দলের মধ্যে আদর্শগত চর্চার অভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনে সেসময় দেখা যাচ্ছিলো যখন বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলন চূড়ান্ত বিজয়ের দরজায়। সেই সময়ে তুলনামূলক একটি ছোট পার্টি হলেও ভারতের এসইউসিআই দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড শিবদাস ঘোষ সাম্যবাদী শিবিরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘাটতির দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলেন। যুগোস্লাভিয়ার নেতা মার্শাল টিটোকে কমিনফর্ম থেকে বহিস্কারের পটভূমিতে ১৯৪৮ সালে লিখিত এক নিবন্ধে তিনি বলেছিলেন, “…বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের বহু সফলতা ও গৌরবময় আত্মত্যাগকে যথাযথ গর্ব ও শ্রদ্ধার সাথে স্বীকার করেও আমরা এর গুরুতর ত্রুটিবিচ্যুতির প্রতি দৃষ্টি আর্কর্ষণ করতে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাইনি। …এই গুরুতর ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি দেখা দেয়ার মূল কারণ হচ্ছে, বিশ্বসাম্যবাদী শিবিরের বর্তমান নেতৃত্ব বহুলাংশে যান্ত্রিক চিন্তাপদ্ধতি দ্বারা প্রভাবিত। এটা আমরা বেশ কিছুদিন যাবৎ অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করে আসছি। …অর্থাৎ যেখানে বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিয়ে এবং পার্টির সকল সদস্যের মধ্যে এবং নেতা ও কর্মীদের মধ্যে চিন্তার দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের পথেই কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর নেতৃত্ব গড়ে তোলার দরকার ছিলো, সেখানে বেশিরভাগ পার্টিই যান্ত্রিক একেন্দ্রীকরণের সহজ রাস্তা বেছে নিয়েছে, যা ফলস্বরূপ পার্টির শীর্ষে আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্বের জন্ম দিয়েছে।
এই ঘটনা বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের আদর্শগত ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে গুরুতর ত্রুটিরই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। যার প্রমাণ যাওয়া যাবে বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর ভুল স্বীকারের মধ্যে; যেখানে তারা বলেছে যে, বি^যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে বিরাট সাফল্য সত্ত্বেও দৈনন্দিন সংগ্রাম পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলছিলো, তা ভুল ছিলো ও তা সর্বহারার শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো না। (এখানে ফ্রান্স, ইটালি, ভারত প্রভৃতি দেশের বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুপরিচিত ‘জনযুদ্ধ তত্ত্ব’ এর প্রয়োগ সম্পর্কে কমিনফর্মের একটি সভায় ঐসব দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর বক্তব্য দ্রষ্টব্য)
… এতকাল বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্টরা সংগঠনের একপেশে রুটিন কাজের উপরই প্রধানত জোর দিয়ে এসেছেন, আদর্শগত চর্চার সাথে যুক্ত করে সংগঠন করার কাজকে একদম গুরুত্ব দেননি। অন্যদিকে নেতারা কর্মীদের শুধু দলের প্রতি দায়িত্ব ও শৃঙ্খলার কথা (যা যান্ত্রিক শৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই নয়) এবং যে কোন উপায়েই হউক সংগঠন বাড়াবার কথাই বলেছেন। …কিন্তু আজ হিসাব—নিকাশের সময় উপস্থিত। …কারণ এতদিনে বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের বর্তমান নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন যে, উদ্দেশ্যের স্বচ্ছ উপলব্ধি ছাড়া অনেকটা অন্ধের মতোই কর্মীরা অশেষ নির্যাতন ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে বিরাট সংগঠন গড়ে তুলেছেন, সেটা বহুলাংশেই শক্ত ভিত্তির উপর গড়ে উঠেনি; যার ফলে তাঁদের পরিশ্রমের ফসলকে বিরুদ্ধ শক্তিগুলি (গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্র্যাট ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা) আত্মসাৎ করতে সক্ষম হচ্ছে।”
কমরেড স্ট্যালিন নিজেও সেটা বুঝতে পেরেছিলেন। স্ট্যালিনের নেতৃত্বে পরিচালিত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কংগ্রেসের রিপোর্টই তার প্রমাণ। সে রিপোর্টে বলা হয়েছে, “পার্টি এটা লক্ষ্য না করে পারে না যে, পার্টির কর্মী সংখ্যা দ্রুত বেড়ে ওঠার কতগুলো কুফল দেখা দিয়েছে—পার্টি কর্মীদের চেতনার মান কিছুটা নেমে গিয়েছে। …আমাদের মধ্যে যে সমস্ত ভুলভ্রান্তি, সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা ও ত্রুটিবিচ্যুতি আছে সেগুলো প্রকাশ্যে টেনে আনা ও দূর করার উপায় হিসেবে আত্মসমালোচনা, বিশেষ করে নিচের তলা থেকে সমালোচনার প্রক্রিয়াকে যতদূর প্রসারিত করা যায়, তা পার্টি সংগঠনের সমস্ত স্তরে শুরু হয়নি। …পার্টি এটাও লক্ষ্য না করে পারে না যে, যেখানেই সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার প্রক্রিয়াকে অবহেলা করা হয়েছে, বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার কার্যকলাপের উপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ যেখানেই দুর্বল করা হয়েছে, ফলস্বরূপ সেখানেই অনিবার্যভাবে আমলাতান্ত্রিকতা, নানা ধরনের পচন প্রভৃতি কুৎসিত জিনিস মাথাচাড়া দিয়েছে এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে জনগণের সম্পর্ক এমনকি ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।”
দুঃখজনক হলো স্ট্যালিন এটা ধরতে পারলেও ১৯তম কংগ্রেস এর অল্পদিনের মধ্যেই স্ট্যালিন মারা যান। স্ট্যালিনের পর ক্রুশ্চেভ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন। এইসময় থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি সংশোধনবাদী পথে হাঁটতে শুরু করে।
সোভিয়েতের পতন থেকে শিক্ষা নিতে হবে
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতাকে প্রমাণ করে না, বরং সংশোধনবাদী চর্চার পরিণতি কী সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। ছোট একটি নিবন্ধে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তোলা ভুল অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হলো। বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়ী-পুঁজিপতিদের প্রচারযন্ত্রে যেভাবে সমাজতন্ত্র সম্পর্কে বিষোদগার করা হয়েছে, একতরফা অপপ্রচার করা হয়েছে, মিথ্যা কাহিনী বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে—সে সম্পর্কিত আলোচনা খুবই জরুরি। সমাজতন্ত্রের পতন থেকে শিক্ষা নিয়ে, আত্মসমালোচনার ভিত্তিতে বামপন্থীরা সমাজতন্ত্রের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনবেন—এবারের নভেম্বর বিপ্লব বার্ষিকীতে গোটা বিশ্বের মেহনতি মানুষ এই প্রত্যাশাই করছে।