চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিভিত্তিক আন্দোলনে মালিকপক্ষের মদদে পুলিশের গুলিতে শ্রমিক হত্যার বিচার, নিহত-আহতদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে ১৮ এপ্রিল ২০২১ সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ ও পরবর্তীতে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড মানস নন্দীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রেজা, অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা নগর শাখার সভাপতি রাজু আহমেদ, বাসদ (মার্কসবাদী) ঢাকা নগর শাখার ইনচার্জ নাঈমা খালেদ মনিকা, শ্রমিক নেতা মানিক হোসেন, ভজন বিশ্বাস প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, “বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে শ্রমিকরা আগে থেকে দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ বরাবর এড়িয়ে গেছে এবং তাদের উপর নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। গতকাল তাদের ন্যায্য বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে মালিকপক্ষ তাদের উপর চড়াও হয়। পরে মালিকের নির্দেশে পুলিশ এসে শ্রমিকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ৫ জন শ্রমিক নিহত হয় এবং ৩০ জনের অধিক আহত হন, যার মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
বক্তারা আরও বলেন, “শ্রমিকদের দাবি নিয়ে কথা বলার অধিকার ন্যায়সম্মত। ফলে তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে গড়ে উঠা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ গুলি করার অধিকার কোথায় পেল? পুলিশের উচিত ছিল, মালিকপক্ষকে চাপ দিয়ে শ্রমিকদের দাবি আদায় করা। অথচ, সেখানে আমরা দেখলাম, মালিকের মদদে একটা রাষ্ট্রীয় বাহিনী জনগণের পক্ষে কাজ না করে সরকারি নির্দেশে নিরীহ নিরস্ত্র শ্রমিকের উপর নির্বিচারে গুলি চালালো। এটা সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে উন্মোচিত করেছে।
মূলত সরকার দেশীয় কোম্পানী এস আলম গ্রুপ ও চায়নাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান SEPCOIII Electric Power Construction-এর যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রের মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করছে। এর আগেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণকে উচ্ছেদ করার সময় সরকারি নির্দেশে পুলিশ স্থানীয় জনগণের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। সেই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার আজও পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার করেনি। ফলে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের শ্রমজীবী জনগণের রক্তের উপর দিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসে দেশের জনগণের রক্ত শুষে তাদের তথাকথিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ধারণা বাস্তবায়ন করছে। মানুষের রক্তের দাগ তাদের প্রতিটি উন্নয়ন কার্যক্রমে মিশে আছে। সেটা পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত।”
নেতৃবৃন্দ দাবি জানিয়ে বলেন, “শ্রমিক হত্যার ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্য, গুলি করার নির্দেশদাতা এবং এসআলম গ্রুপের মালিককে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। নিহত শ্রমিকের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে করতে হবে। একইসাথে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি বেতন-বোনাস দ্রুত পরিশোধ করতে হবে।”