শিক্ষা কনভেনশনের পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪। যুদ্ধাপরাধী দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীর রায়ে ঘাতক ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলাম লোক দেখানো প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করল। যদিও রায়ের প্রশ্নে সরকারের সাথে তাদের গোপন আঁতাত ওপেন সিক্রেট বিষয় হিসেবে সারাদেশের মানুষের মধ্যে আলোচিত হচ্ছিল। হরতাল ঘোষিত হলো ২২ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত। ছাত্র ফ্রন্টের সারাদেশের কর্মীবাহিনী এবং কনভেনশনে যোগ দিতে ইচ্ছুক নতুন ছাত্র প্রতিনিধিদের উদ্বেগ – হরতালে তারা ঢাকায় যেতে পারবে তো? শেষে সিদ্ধান্ত হলো ২৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা গেলো, সব জেলা ইউনিট ট্রেনে আসবে। মুহূর্তেই জানিয়ে দেয়া হলো। তারিখ পরিবর্তনের কারণে কনভেনশনের আলোচকদের সাথে যোগাযোগ, টিএসসি বরাদ্দ ও অন্যান্য আয়োজনের জন্য ত্বরিত কর্মোদ্যোগ গৃহীত হলো। তবে উদ্যোগের সূচনা হয়েছে আরও প্রায় তিন মাস আগে।
বাণিজ্যিকীকরণের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা ও সারাদেশে ছাত্রদের প্রতিবাদ-আন্দোলন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি বিষয়ে বাণিজ্যিক নাইট কোর্স বন্ধ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিভি ও ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা কোর্স ফি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে বাণিজ্যিক নাইট কোর্স বন্ধ, বাকৃবিতে বর্ধিত ফি প্রত্যাহার ও ছাত্র হত্যার বিচার, শাবিপ্রবি-তে ভর্তি ফরমের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার ও যৌন নির্যাতনের বিচার- এরকম নানা দাবিতে আন্দোলনমুখর ছিল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ফল বিপর্যয়, সেশনজট ও বর্ধিত ফি আরোপের প্রতিবাদে শামিল হয়েছিল। এ আন্দোলনসমূহে পুলিশি হামলা ও প্রশাসনিক দমন-পীড়নের ন্যাক্কারজনক নজির যেমন আছে; অন্যদিকে আছে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের লড়াকু ও সাহসী ভূমিকা। এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল একের পর এক প্রশ্নপত্রফাঁসের ঘটনা।
একদিকে উদ্বিগ্নতা, অন্যদিকে সরব কিংবা নীরব ধিক্কার সর্বমহলে। প্রশ্নপত্রফাঁসের পরে একজন ছাত্র বলেছে, ‘দুই বছরের অধ্যবসায় পরীক্ষার হলে এসে ম্লান হলো। কারণ প্রায় সবাই আগেই প্রশ্ন পেয়েছে।’ নৈতিক বোধ কীভাবে নীচে নামে তা জনৈক অভিভাবকের কথায় স্পষ্টÑ‘আমি যদি আমার সন্তানের জন্য প্রশ্ন যোগাড় না করি, তাহলে তার রেজাল্ট খারাপ হবে। কিন্তু বাকিরা প্রশ্ন পেয়ে রেজাল্ট ভালো করবে। আমি কি আমার সততা রক্ষা করার জন্য ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করব?’ নৈতিক বোধ-বুদ্ধি এভাবেই হার মানছে ‘ভবিষ্যৎ’ নষ্ট না করার বৈষয়িক স্বার্থবুদ্ধির কাছে! ভালো ডিগ্রি মানে তো ভালো চাকুরি! শিক্ষার নানা ধাপ পেরিয়ে শিক্ষার্থীদের কেউ ডাক্তার হবে, কেউ বা ইঞ্জিনিয়ার অথবা কেউ বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে ভালো চাকুরি পাবে- কিন্তু তাতে সমাজের জন্য শুভ বা ইতিবাচক কোনো ফল তৈরি হবে কি? হবে না- জানার পরও শিক্ষামন্ত্রীর উদ্বিগ্নতা নেই। বরং ‘প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি’, ‘সরকারের সাফল্যকে ম্লান করার অপপ্রয়াস’ – দায়িত্বহীনের মতো এসব কথাই বলেছেন, যা প্রকারান্তরে প্রশ্নপত্রফাঁসের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে তাদের আড়াল করতেই সহায়তা করেছে। এই সময় প্রয়োজন ছিল শিক্ষার অধিকার নিয়ে এরকম ছিনিমিনি খেলা ও শিক্ষার মর্মবস্তুকে ধ্বংস করার বিরুদ্ধে এক তুমুল জাগরণ! এই চাওয়া আছে সকলের কিন্তু নিস্পৃহতা, নির্লিপ্ততা বা ক্রিয়াহীন প্রত্যাশা কি এ চাওয়া পূরণ করবে?
সংকট থাকলেই বা ভুক্তভোগী হলেই মানুষ লড়াই-এ ঐক্যবদ্ধ হয় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে একদল মানুষকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হয়। দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে মানুষকে একীভূত করতে হয়। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এ দায়বোধ থেকেই কনভেনশনের আয়োজন করেছে।
চিন্তার বিনিময়-মিথষ্ক্রিয়ায় ভাবনার স্ফূরণ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলায় ছাত্রসভা-মতবিনিময়
ছোট্ট দেড় ফর্মার বই। ৫টি দাবির প্রচ্ছদ। অল্প কথায় বর্তমান সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে সংকট ও তার প্রতিকার বর্ণিত আছে। জুন মাস থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে বইটি নিয়ে যাওয়া হলো। সমাজে মতামত তৈরি করেন যে সব শিক্ষাবিদ-অভিভাবক-পেশাজীবী, পুস্তিকা নিয়ে তাদের সাথে আলাপচারিতা শুরু হলো। ঈদের ছুটির পর পুরোদমে আরম্ভ হলো ছাত্র সংযোগ। স্কুলের ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছে বই বিক্রির সময় নতুন অভিজ্ঞতা হয় কর্মীদের। একজন অভিভাবক বললেন, ‘সরকার তো কোচিংকে বৈধতা দিল।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘আমার ছেলে পড়ে না। আমিই পড়ি। গত এক ঘণ্টা ধরে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি এই দেখতে, বাচ্চা সব লিখেছে কিনা। স্যারের কাছে না পাঠালে তো আমার বাচ্চার অংকের নিয়ম ভুল গণ্য হবে। স্কুল, কোচিং কোথাও পাঠিয়ে স্বস্তি নেই। এর বিরুদ্ধে কথা বললে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ অথবা অভিভাবকগণ আমার উপর রুষ্ট হবেন।’ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস ক্যাম্পেইন করে ছাত্রদের কাছে বইটি নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা ইউনিটে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা ও ছাত্র সমাবেশ। হবিগঞ্জের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, ‘প্রধান সমস্যা হলো শিক্ষার মান নিয়ে। বাণিজ্যিকীকরণের সাথে পাল্লা দিয়েই তা নিম্নমুখী হচ্ছে।’ নোয়াখালীর মতবিনিময় সভায় উপস্থিত অশীতিপর এক শিক্ষক বলেন, ‘মূল্যবোধের জাগরণ এখন খুবই জরুরি। এ আন্দোলন এগিয়ে নিতে পারলে মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাবে।’ রাঙামাটির মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ২১ জন আলোচক উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামে মতবিনিময় সভায় এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বেড়েছে, ছাত্র বেড়েছে। কিন্তু কমেছে সরকারের বাজেট বরাদ্দ। কোচিং-ফি যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
আমরা যখনই জাগব তখনি আসবে দিন
শিক্ষা কনভেনশনে যোগ দিতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রেজিস্ট্রেশন করেছে। রেজিস্ট্রেশন করতে এসে এক ছাত্রের মন্তব্য, ‘এতদিনে বুঝলাম অন্য ছাত্র সংগঠন থেকে কেন ছাত্র ফ্রন্ট পৃথক। ওদের প্রোগ্রামে গেলে বখরা জোটে। আর ছাত্র ফ্রন্ট ছাত্রদের নিজস্ব শক্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে। এখানে সুবিধা নেই বরং দায়িত্ব আছে।’ বিভিন্ন জেলা থেকে রাতভর ক্লান্তিহীন ভ্রমণ করে ছাত্র প্রতিনিধিরা এসেছেন। তারপরও দিনভর এত এত আলোচনা শোনার ক্লান্তি নেই। যেন এখান থেকেই শক্তি নিয়ে ফিরবে। একজন অভিভাবক মন্তব্য করেন, ‘এখনও এরকম হয়! তোমাদের উদ্যোগ আমাদের আশা জাগায়। তোমরাই পারবে।’
অন্ধকারের গর্ভ ভেদী সূর্যের আলো আনি
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, সকাল সাড়ে দশটা : সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু শিক্ষা কনভেনশনের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ও আলোচকদের মঞ্চে আসন গ্রহণ করার আহ্বান জানান। প্রথম অধিবেশনে ‘শিক্ষার সর্বজনীন অধিকার ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ’ শীর্ষক ধারণা পত্রটি উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার। এ অধিবেশনে আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, বাসদ নেতা কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক, কুড়িগ্রামের রৌমারীর স্কুল শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক এবং গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক আসিফ চৌধুরী।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বেতন-ফি বাড়ছে, অন্যদিকে গবেষণা খাতে বরাদ্দ শূন্যের কোঠায় নামছে। বিশ্বব্যাংক ধনীদের অনুদান নিয়ে একে এনজিও-তে রূপান্তরিত করতে চাইছে। অভিভাবকের আয়ের ভিত্তিতে বেতন নির্ধারণের সুপারিশ আছে। এতে বিদ্যমান বৈষম্য আরও প্রকট হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন স্কুল ছাত্রদের উপর পরীক্ষার বিরাট বোঝা। পরীক্ষার পর পরীক্ষা। সরকারের নীতি হলোÑ তোমরা ডিগ্রি চাও, সার্টিফিকেট চাও, পাবে। কিন্তু তোমরা শিক্ষা চেয়ো না।’
সামিনা লুৎফা নিত্রা বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সরকারের অবস্থান কি, সেটা বলা আছে ইউজিসি’র কৌশলপত্রে। এখানে বলা হয়েছে, সরকার বরাদ্দ হ্রাস করবে, শিক্ষার খরচ আদায় করবে ছাত্রদের কাছ থেকে। আর চাকুরির বাজার অনুযায়ী শিক্ষা দেয়া হবে। মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞানে ব্যয় সংকোচনের খড়গ নেমে এসেছে সবার আগে। বাস্তবে কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করে সরকার আমাদের দেশকে একদল উচ্চশিক্ষিত সস্তা শ্রমিকের যোগানদাতায় পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। অথচ শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তৈরি করা বা গড়ে তোলা।’
প্রথম অধিবেশন শেষে শিক্ষার দর্শন নিয়ে বিভিন্ন মনীষীর কোটেশন ও দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও সংগঠন পতাকা নিয়ে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে।
শিক্ষা কনভেনশনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় বিকাল সাড়ে তিনটায়। শুরুতে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত ছাত্র প্রতিনিধিরা। পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষাচিত্র নিয়ে বক্তব্য রাখেন কলিন চাকমা, বাকৃবি’র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন আশরাফ মিলটন, কারমাইকেল কলেজের আবু রায়হান বকসি তুলে ধরেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের নানা চিত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্মিতা রায় সুপ্তি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি অরূপ দাস শ্যাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলে রাব্বী নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। দ্বিতীয় অধিবেশনের ধারণা পত্র ‘শিক্ষার দর্শন ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব’ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা।
এ অধিবেশনে আলোচনা করেন, বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, জয়পুরহাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কৃষ্ণ কমল এবং প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘দেশের কথা ভাবব না, তাহলে কিসের জন্য শিক্ষা? শিক্ষা মানেই কোনো না কোনো সামাজিক দক্ষতা, আর দক্ষতা তো সমাজের জন্যেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে এদেশের ছাত্রসমাজের কী বিরাট ভূমিকা সেটা সবাই জানেন। কিন্তু উপর তলার নেতৃত্ব জনগণের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি, তাই ছাত্ররাই পথ দেখিয়েছে। এদেশের যুবক-তরুণ-সাধারণ মানুষ একটা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। অথচ সেই দেশেই আজ সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের জন্য যে এ কত বড় মর্মান্তিক পরাজয়, সাধারণ মানুষের জন্য যে কত বড় অপমানÑ তা কি এই শিক্ষার্থীরা বুঝবে না?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় যে সাম্প্রদায়িকীকরণ, তা মূল ধারাতেও এসে যাচ্ছে। একই সাথে আজকে ‘টাকা যার শিক্ষা তার’ শুধু নয়, ‘টাকা যার মেধা তার’ এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার মানের বড় অবনমন ঘটছে। অথচ এটা নিয়ে কেউ ভাবছে না। প্রয়োজন শিক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষা আন্দোলন আসলে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র চরিত্র পরিবর্তনের আন্দোলন।’
শিক্ষা কনভেনশনের ঘোষণা পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রি চক্রবর্ত্তী রিন্টু।
শিক্ষা কনভেনশনের সমাপনী অধিবেশন সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকনের বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়। তিনি বলেন, ‘কোনো ক্ষেত্রেই সমস্যার অন্ত নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা অসঙ্গতি গা-সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। যে যুবক তরুণরা দায়বোধ অনুভব করবে, সমাজের-রাষ্ট্রের সমস্যাকে ও মানুষের দুঃখ- যন্ত্রণাকে নিজের বলে মনে করবে, তারা আজ আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমজ্জিত। যৌবনের শক্তিকে সুবিধাবাদিতা ও পেশী শক্তির জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রসমাজ, যারা দরিদ্র-বঞ্চিত মানুষের সন্তান, তারা কি এভাবে মুখ বুঁজে থাকতে পারে? বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণের প্রবল জোয়ারের বিরুদ্ধে তাদেরকে দাঁড়াতেই হবে।
সাংস্কৃতিক অবনমন আজ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যাতে মনে হচ্ছে সমাজে মানুষ থাকবে কিন্তু চরিত্র থাকবে না। তাই সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের যে উদ্যোগ তা কেবল শিক্ষার অধিকার রক্ষার জন্যই নয়, মনুষ্যত্ববিনাশী প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করার জন্যও। এ লড়াই সকল শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন, বিবেকবান মানুষেরই লড়াই।’
তিনি ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাবিদ-অভিভাবকসহ সকলের প্রতি এই আন্দোলনে শামিল হবার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘যারাই মনে করবেন তরুণ-যুবকদের ভবিষ্যতকে রক্ষা করা দরকার, তাদের সবাইকে এ লড়াইয়ে আমরা আহবান জানাই। স্পষ্টতই বলি, ছাত্র ফ্রন্টের একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে। কেউ এই মতাদর্শে বিশ্বাসী নাও হতে পারেন। কিন্তু কেবল শিক্ষা প্রশ্নে একমত পোষণ করলে এ লড়াইয়ে শামিল হোন। আমাদের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইটাই বড়।’