মানুষ আজ অসীম সাহসী ও শক্তিমান। এই শক্তির উৎস কী? সভ্যতার ঊষালগ্ন হতে আজ পর্যন্ত সঞ্চিত জ্ঞানভাণ্ডার তার শক্তির উৎস। কিন্তু সভ্যতার সূচনাকালে মানুষ ছিল অসহায়, হিংস্র জন্তু জানোয়ার আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে বিপন্ন করেছে। প্রকৃতিকে বশ করতে তাকে প্রকৃতির নানা নিয়ম অনুসন্ধান করতে হয়েছে; সৃষ্টি করতে হয়েছে বেঁচে থাকার কলাকৌশল। এরপর সমাজ শ্রেণী বিভক্ত হলে নিপীড়িত শ্রেণীকে বাঁচার জন্য তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত থাকতে হয়েছে। এ সংগ্রামের ধারায় তৈরি করেছে ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি নীতি-নৈতিকতা ও সমাজ সম্পর্কে ধারণা। এভাবে প্রকৃতি এবং সমাজের অন্যায় অসঙ্গগতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে মানুষ গড়ে তুলেছে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। যা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। যাকে আমরা বলি জ্ঞান। আর এ জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে শেখানোর প্রক্রিয়ার নাম শিক্ষা।
মানব জাতির সকল সন্তান শিক্ষার অধিকার পাবে কিনা বা কারা কতটুকু পাবে, কে তা নিশ্চিত করবে, অকার্যকর ও অযৌক্তিক ধ্যান ধারণা বাদ দিয়ে সমাজ বিকাশের গতি ধারার পরিপূরক বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে শিক্ষা দেয়া হবে কিনা প্রভৃতি বিষয় কীভাবে দেখা হবে তাই হলো শিক্ষার দর্শন।
আমাদের সমাজ একটি শ্রেণীবিভক্ত সমাজ। ফলে এখানে শিক্ষা সর্ম্পকিত দৃষ্টিভঙ্গিও দু’রকমের। পুঁজিপতিশ্রেণী তাদের রাজনীতি, আর্দশ এবং স্বার্থ রক্ষার পরিপূরক নীতির অংশ হিসেবে শিক্ষাকে দেখে। তাই শ্রমজীবী মানুষের শিক্ষার অধিকার নিয়ে ভাবতে হলে তাদেরও শ্রেণীর পরিপূরক রাজনীতি, আর্দশ ও স্বার্থরক্ষার অংশ হিসেবে শিক্ষাকে দেখতে হবে। শিক্ষার দর্শন আমাদের কাছে কোনো গুঢ় তত্ত্ব বা দুর্বোধ্য আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। সমাজ প্রগতির প্রশ্নে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এ আলোচনা জনগণের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের দেশের ছাত্র-জনতা-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা সর্ম্পকিত সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা ছাড়া কার্যকর শিক্ষাআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সে কারণে শিক্ষার দর্শন সর্ম্পকিত আলোচনা এবং রাষ্ট্রের সাথে তার সর্ম্পক বা বিরোধ নিয়ে আলোচনা খুবই জরুরি।
অশিক্ষা-কুশিক্ষা, জাত-পাত, ধর্ম-জাতি, আঞ্চলিকতা গোঁড়ামিতে পূর্ণ মন – মানুষকে কখনও ঐক্যবদ্ধ হতে দেয় না। সামন্তযুগে শাসকরা তাদের শাসন-শোষণের প্রয়োজনে শিক্ষাকে ধর্মীয় বিধি বিধানের বাইরে যেতে দেয়নি। সেদিন শিক্ষার ভিত্তি ছিল অতি প্রাকৃত শক্তির প্রতি অন্ধবিশ্বাস। সামন্ততন্ত্রবিরোধী নবজাগরণের কালে দাবি উঠেছিল বিচার-বিশ্লেষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত সত্যের বাইরে কোনো কিছু গ্রহণ করা হবে না। সবকিছু গ্রহণ বর্জনের মাপকাঠি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ, যাচাই বাছাই ও ইতিহাসের কষ্টিপাথর। ফলে শিক্ষার ভিত্তি হবে বিজ্ঞান আর বিষয়বস্তু হবে ইহজাগতিক। এই প্রকৃত শিক্ষায় মানুষ হবে ঐক্যবদ্ধ। যার ভিত্তিতে মানুষ সমাজের অন্যায় অত্যাচার অসঙ্গতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।
এভাবে শিক্ষা সামাজিক অনাচার প্রতিহত করার সাহস যুগিয়েছে। এ কারণেই শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ হয়েছে মনুষ্যত্বের অধিকারী। একইভাবে শিক্ষা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে সামাজিক দায়বদ্ধতা। কারণ শিক্ষিত মানুষ জানে, যে জ্ঞান সে রপ্ত করেছে এটা তার নিছক ব্যক্তিগত সম্পত্তির ব্যাপার নয়। অসংখ্য মানুষের শ্রমের-সংগ্রামের সম্মিলিত চেষ্টার অংশ হিসেবে এটি গড়ে উঠেছে। তাই জ্ঞান, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শুধু নিজের ব্যক্তি স্বার্থ সুবিধা হাসিলের কথা চিন্তা করতে তার রুচিতে বাঁধে। বরং সমাজের বিকাশের স্বার্থে সে তার জ্ঞান কাজে লাগায়। এ কারণে সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ মাত্রই নীতি নৈতিকতাবোধ ও সামাজিক দায়বোধে উদ্বুদ্ধ হয়।
শিক্ষার অধিকার সর্বজনীন। বহু সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এ অধিকারের ধারণা আজ প্রতিষ্ঠিত দাবি। সামন্ত ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করত রাজা। রাজা ছিল সর্বময় ক্ষমতার মালিক। জনগণের কোনো অংশগ্রহণ বা ক্ষমতা ছিল না। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বুর্জোয়ারা দাবি তুলেছিল, দেশ শাসন করবে জনগণ। একজন রাজার ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা খেয়াল খুশির বিপরীতে দেশের সকল নাগরিক তাদের স্বার্থ ও কল্যাণে শাসন কার্য পরিচালনা করবে। ফলে শাসন ব্যবস্থা হবে গণতান্ত্রিক। রাজারা তাদের প্রয়োজনে অল্প সংখ্যক মানুষকে শিক্ষা দিত। কিন্তু বুর্জোয়া মানবতাবাদ দাবি তুলেছিল, শিক্ষা হবে সবার। কোনো মানুষকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। কারণ যে জনগণ দেশ পরিচালনা করবে, তারা যদি নিরক্ষর ও পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণার অধিকারী হয়, তাহলে আধুনিক বিধি-বিধানসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চলবে কীভাবে? এজন্য বলা হতো শিক্ষা হলো গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।
তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে আধুনিক গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি হলো – শিক্ষা হবে সবার জন্য অবারিত; বিজ্ঞানের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে শিক্ষা হবে ইহজাগতিক।
এই দর্শনের ভিত্তিতে শিক্ষার এ অধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। কেননা মানব জাতির এ বিশাল জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে কাউকে বঞ্চিত করে কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। তাই প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর শিক্ষিত মানুষ মানেই দক্ষ মানুষ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বহুগুণে সমাজ প্রগতির শর্ত তৈরি করে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পত্তনের যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্র এভাবে শিক্ষার মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে ছিল।
সেদিন অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতার সময়ে শিক্ষার অবাধ প্রসার, জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে তোলার জন্য বুর্জোয়া মানবতাবাদীরা
এই দর্শনের ভিত্তিতে শিক্ষার এ অধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। কেননা মানব জাতির এ বিশাল জ্ঞান ভা-ার থেকে কাউকে বঞ্চিত করে কোনো সমাজ এগিয়ে যেতে পারে না। তাই প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর শিক্ষিত মানুষ মানেই দক্ষ মানুষ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বহুগুণে সমাজ প্রগতির শর্ত তৈরি করে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পত্তনের যুগে বিভিন্ন রাষ্ট্র এভাবে শিক্ষার মধ্য দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে ছিল।
সেদিন অর্থনীতিতে অবাধ প্রতিযোগিতার সময়ে শিক্ষার অবাধ প্রসার, জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তোলার জন্য বুর্জোয়া মানবতাবাদীরা অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল। অর্থনীতির অবাধ প্রতিযোগিতা যখন একচেটিয়া রূপ নিল, তখন থেকে বুর্জোয়ারা সকল গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সংকুচিত করে স্বৈরতান্ত্রিক বিধি বিধান চাপিয়ে দিতে থাকে। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতি রক্ষার প্রয়োজনে তারা দেশে দেশে বাজার দখল করে যুদ্ধ বাধিয়ে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। আর এ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষাসহ নানা পরিষেবা খাতগুলো এখন তাদের কাছে মুনাফা লুটের সবচেয়ে বড় লাভজনক খাত। ফলে ক্রমাগত রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমিয়ে ব্যক্তি পুঁজির কাছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ছেড়ে দেয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণাকে ধ্বংস করে পুঁজিপতিদের মুনাফা ও যুদ্ধের স্বার্থে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল গবেষণা ও সাফল্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, কলা’র মতো মৌলিক জ্ঞান বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বাজারমুখি শিক্ষার আমদানি হয়েছে। আবার একদিন বৈজ্ঞানিক বিচারে বাতিল বলে গণ্য হয়েছিল যে অধ্যাত্মবাদী চিন্তা, তাকে শিক্ষার বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তা নায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ বলেছেন, ‘ছাত্রদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক ও সুশৃঙ্খল যুক্তিধারা গড়ে তোলার পরিবর্তে অধ্যাত্মবাদ ও কারিগরি বিজ্ঞানের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটানোর প্রবণতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাজীবনে এই ঝোঁকটি বাস্তবিক পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এ হচ্ছে ফ্যাসিবাদী সংষ্কৃতির বৈশিষ্ট্য।’ শিক্ষার আয়োজন এবং পরিবেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, খেলাধূলা, মুক্তবুদ্ধির চর্চার অনুপস্থিতি এ ফ্যাসিবাদী মনন আরও পোক্ত করছে। একদল দায়-দায়িত্বহীন, আত্মকেন্দ্রিক, প্রশিক্ষিত অনুগত মানুষ তৈরিই যেন বর্তমান শিক্ষার উদ্দেশ্য।
শিক্ষার বিষয়বস্তুতে এবং পরিবেশে অধ্যাত্মবাদী চিন্তার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকীকরণের ব্যাপক বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। সামাজিক বৈষম্য টিকিয়ে রাখা এবং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে। ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ২৭ বছরে বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে ১.৬৫ গুণ; দাখিল মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে ৭.৬৭ গুণ। ঠিক এসময়ে প্রাথমিকে মোট ছাত্রসংখ্যা বেড়েছিল ১.৯৭ গুণ; দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বেড়েছে ১২.১৩ গুণ (মইনুল হাসান, প্রথম আলো, ৩০ জানুয়ারি ২০১৪) মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্রমবর্ধমান ধারা রুখতে হলে শিক্ষার মৌলবাদী ধারা বদলানোর মাধ্যমেই সম্ভব।
মহাজোট সরকার প্রণীত ‘শিক্ষানীতি-২০১০’ শিক্ষানীতির লক্ষ্য সর্ম্পকে বলছে, ‘অভ্যন্তরীণ ও আর্ন্তজাতিক চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে’। অর্থাৎ মানবিক মানুষ তৈরি করা শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়। আরো প্রস্তাব করা হয়েছে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সরকারি দায়িত্ব ক্রমাগত কমিয়ে চচচ, ঐঊছঊচ এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে নির্ভরশীল করা। বড় ব্যবসায়িক কোম্পানি থেকে অনুদান সংগ্রহ করা হবে, আভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হবে মানে ছাত্র বেতন, নাইট র্কোস চালু ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হবে। এভাবে রাষ্ট্র সরাসরি শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব থেকে সরে আসার নীতি নিয়েছে।
শিক্ষার দাবিতে যে ছাত্রআন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলার ভ্রুণ তৈরি হয়েছিল, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর আজো এদেশে সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠত হলো না। বরং উল্টো পথেই হেঁটেছে রাষ্ট্র। সংবিধানে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি, অসংখ্য ধারায় শিক্ষাকে বিভাজিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ ক্রমাগত কমেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৭২ সালেও যেখানে শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল, সেখানে ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে তা কমিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৬৬ শতাংশ, যা জিডিপির ২.১১ শতাংশ। শিক্ষাখাতে পৃথিবীর সর্বনিম্ন বাজেট বরাদ্দকারী দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও নেপালেও বরাদ্দ জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি, ভুটানে ৫.২ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের এই হাল!
শিক্ষাখাতে রাষ্ট্রীয় ব্যয় সংকোচন এবং অব্যাহত বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের শক্তি যেন দাঁড়াতে না পারে সেজন্য ছাত্র যুবকদের ন্যায়নীতি বোধ ও সামাজিক কর্তব্য বোধের ধারণাকে ধ্বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। পেশিশক্তি ও বৈষয়িক স্বার্থসুবিধার অপরাজনীতির পঙ্কে ছাত্রদের নিমজ্জিত করা হয়েছে। ভোগবাদী সংস্কৃতির প্রবল প্রসারের মাধ্যমে চেতনাকে করা হয়েছে কলুষিত। ফলে লড়াইয়ের শক্তি হয়েছে অনেক দুর্বল। যতটুকু প্রতিবাদ হচ্ছে তাকেও স্তব্ধ করতে নানা সময়ে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা হয়েছে। মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্রমেই স্বায়ত্তশাসনহীন ‘সরকারি’ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রস্তাবিত ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ গঠিত হলে এই প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হবে।
এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্র- শিক্ষক-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সময়ের দাবি। এখনো আমাদের দেশে যতটুকু শিক্ষার অধিকার বজায় আছে, তা অতীতের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলাফল। তাই আজ সর্বগ্রাসী বাণিজ্যের কবল থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী ও ধারাবাহিক ছাত্র-গণ আন্দোলন। সকল শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সেই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ-বেসরকারিকরণ-সংকোচন নীতি বিরোধী শিক্ষা কনভেনশন, দ্বিতীয় অধিবেশন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, টিএসসি মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট