একি দৃশ্য! দেখলেই পূর্বের দেখা আরেকটি স্থিরচিত্রের কথা মনে পড়ে যায়।
লিকলিকে হাড় জিরজিরে একটি ছেলে। হাতের মুঠির মধ্যে শক্ত একখ- ইটের মতো। ছুঁড়ে দিলো সামনে ধেয়ে আসা বিশাল জলকামানের দিকে। চারিদিকে তখনও টিয়ার গ্যাসের আবরণ। ইটের টুকরা কোথায় গিয়ে লাগলো তা দেখারও কোনো সুযোগ নেই। ফিলিস্তিনে হামলার সময় ছোট্ট এক কিশোরের ট্যাংকের দিকে ঢিল ছুঁড়ে মারার দৃশ্যটিই যেন আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছিলো ২৬ জানুয়ারি। শাহবাগে ভোর ৬টা থেকে চলছিলো হরতালকারী আর পুলিশের মধ্যে যুদ্ধ। এক পক্ষের কাছে ছিলো টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট আর জলকামান। আরেক পক্ষ ছিলো খালি হাতে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে রাস্তায় পড়ে থাকা ইটের টুকরাই তখন হয়ে উঠলো বিশাল রাষ্ট্রযন্ত্রের সামনে প্রতিবাদের ভাষা। দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হলো। ছাত্র আর পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চললো প্রতি ক্ষণে ক্ষণে। আন্দোলনকারীদের উপর বাধা আর হামলাই হরতালের পুরো চিত্র নয়। সেদিন রাস্তায় প্রাইভেট গাড়ি ছিলো স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম। শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরিতে পড়তে আসা অনেক ছাত্র ফিরে গেছে হরতালের সমর্থনে। পুলিশি হামলার সময় আশেপাশে অনেকেই নিজেদের কাজ ফেলে এগিয়ে এসেছিলেন আন্দোলনকারীদের সহযোগিতায়। হামলার সময় আশপাশের মানুষের পুলিশের প্রতি গালি, আর পাল্টা ধাওয়ার সময় উৎসাহে চিৎকার সহজেই প্রমাণ করে দিচ্ছিলো মানুষের সহানুভূতি কোন দিকে! পাশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ছিলো বন্ধ। আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সামিনা লুৎফা আর অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্-র মোশাহিদা সুলতানা হরতাল পালন করলেন ব্যতিক্রমভাবে। ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের জড়ো করে বলেছিলেন হরতালের কথা। ক্লাস চললো রামপালের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে।
হরতালে আহত হলেন সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনের অনেক নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ৬ জন। পুলিশের হাতে আহত হন সাংবাদিকেরাও। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ২৮ জানুয়ারিতে পালিত হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে ধর্মঘট পালনে বাধা দেয় ছাত্রলীগ। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে পুলিশ কিংবা ছাত্রলীগের হামলা, বাধা প্রদান এখন খুব স্বাভাবিক ঘটনা। যশোরে গণভোট পরিচালনার সময় ছাত্র ফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করেছিলো তারা। পেশিশক্তির জোরে হামলা করতে পারে, কিন্তু সরকার যুক্তি দিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে কি? কেন সুন্দরবনের অদূরে রামপালে ভারতের সাথে একটা অসম চুক্তির ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নই বিদ্যুৎ উৎপাদনের একমাত্র রাস্তা? কিংবা, জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্পগুলো কেন গ্রহণযোগ্য নয়? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর এখনও মেলেনি। তাই, শতবাধার মুখে এখনও চলমান সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন।
‘উন্নয়ন’ শব্দটির সাথে এখন বহু প্রশ্ন জড়িত। প্রথম প্রশ্ন হলো, কার স্বার্থে উন্নয়ন? আট লেনের মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, বিমান-বন্দর, বিশাল শপিং মল, বিদেশি ব্র্যান্ডের রেস্টুরেন্ট- এগুলোই আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কি? আট লেনের মহাসড়ক আর ফ্লাইওভারের সুফল ভোগের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি চাই, বিমান বন্দরের সুফল ভোগের জন্য বিমান ব্যবহার করা চাই, শপিংমল আর রেস্টুরেন্ট ব্যবহারের জন্য আর্থিক সামর্থ্য থাকা চাই। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের পরিস্থিতি কী? অধিকাংশ মানুষের মৌলিক অধিকারই যেখানে অনিশ্চিত, এই ধরনের ‘উন্নয়ন’ আসলে বাইরের চাকচিক্যে মোড়া কেবল ধনীদের উন্নয়ন। যদি পরিকল্পনা এমন হয় যে, সব কিছুর কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ তাহলে সে উন্নয়ন হয় আরেকরকম। তার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যও হয় অন্যরকম। যেমন- সকলের অন্ন-বস্ত্রের সংস্থান করা, অধিকাংশ জনগণের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যা দিয়ে বাসাবাড়িতে আলো জ্বালানোসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ করা যায়, অসংখ্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা ইত্যাদির জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু এর কোনো কিছু কি সরকার করছে?
‘বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়ন হবে’- এ ধরনের ভিত্তিহীন কথাও সরকার প্রচার করছে। বিদ্যুৎ কোনো আবদ্ধ শক্তি নয়। কাপ্তাই-এ হাজারো মানুষ উচ্ছেদ করে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হয়েছিলো তাদের কেউ এ বিদ্যুৎ পায়নি। সেটি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। রামপালেও তাই হবে। এই বিদ্যুৎ ভারতের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা প্রতি ইউনিট দামে। ওখানে কর্মসংস্থান হবে সর্বোচ্চ এক হাজার জনের। আর সুন্দরবনের উপর জীবিকা নির্বাহ করে লক্ষ মানুষ। তাহলে এ উন্নয়ন কার? সরকার টার্গেট নিয়েছে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের। সেই তুলনায় ১৩২০ মেগাওয়াট খুবই সামান্য। এই ১৩২০ মেগাওয়াটের জন্য সমস্ত উন্নয়ন থেমে যাচ্ছে ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যেহেতু সুন্দরবনের মতো সম্পদশালী বন ধ্বংস হবে, সেহেতু এটি উন্নয়ন তো নয়-ই, চরম ক্ষতি।
তাছাড়া, দিনাজপুরের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তা একেবারে মিথ্যাচার। পুরো পৃথিবীতে এমন কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই যার পরিবেশের উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। দূষণের কারণে সম্প্রতি চীন তার দেশে ১০০টি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। দিনাজপুরের কয়লা দূষণের মাত্রা নিয়েও সেখানকার মানুষ শঙ্কিত। সেখানকার পানির স্তর দিন দিন নীচে নেমে যাচ্ছে। পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেড়েছে। কৃষিজমি কালো হয়ে যাচ্ছে। ফসল ও মাছে বিষক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি পাওয়ার ডিভিশনের ফেসবুক পেজে জার্মানি, জাপান ও তাইওয়ানের বিভিন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যে আলোকজ্জ্বল ছবি দেয়া হয়েছে, তাও মিথ্যাচার। কারণ, ছবিতে সবুজ গাছপালা বা আলো ঝলমলে ছবি কখনই এটা প্রমাণ করে না যে, সেখানে দূষণ হচ্ছে না। বরং একটু ভালো করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিলে জানা যাবে তার বাস্তব চিত্র কী। তাইওয়ানে তাইচু-এর যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছবি এখানে যুক্ত করা হয়েছে, সেটি মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষ বন্ধ পর্যন্ত করে দিতে বাধ্য হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, পৃথিবীর আর কোথাও আর সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করা কখনই এক ব্যাপার নয়। এই যুক্তির মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে, সুন্দরবনের সংবেদনশীলতা আর বিশেষত্ব বুঝতে সরকার কী পরিমাণ ব্যর্থ।
গত ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের জনসভাতেও প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে কথা বললেন। তিনি বলেছেন যে, ‘আন্দোলনকারীরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার নিয়ে ভাবেন, কিন্তু মানুষের কথা ভাবেন না।’ তাকে ধন্যবাদ। প্রকারান্তরে তিনি রামপাল প্রকল্প হলে বাঘের যে ক্ষতি হবে তা স্বীকার করে নিলেন। অবশ্যই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছেও বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন যে, পরিবেশ আর মানুষের প্রাণ কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। প্রতিবার জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে যখন রাষ্ট্রনায়কেরা বক্তব্য রাখেন তখন তারাই সবচেয়ে বেশি পরিবেশের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। সর্বশেষ ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক বাঘ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, “বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।”
ইতোমধ্যে সারাদেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ‘সুন্দরবন না রামপাল’ বিষয়ে আয়োজিত হয়েছে গণভোট। প্রায় ৪০ সহস্রাধিক ভোটের মধ্যে ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী-সাধারণ মানুষ সুন্দরবনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ভোট সংগৃহীত হয় ১০,১১১টি; এর মধ্যে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট পড়েছে ৯,১৪৮টি (৯০.৪৮%), কারমাইকেল কলেজে ৪৩৮৩টি ভোটের মধ্যে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট পড়েছে ৪১৫৩টি (৯৪.৭৫%), ইডেন কলেজে মোট ভোট সংগ্রহ করা হয়েছে ৪১৩৭টি। তার মধ্যে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৪০২৫ জন (৯৭.২৯%)। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অংশগ্রহণকারী ২০২৩ জন ভোটারের মধ্যে সুন্দরবনের পক্ষে ১৮৮০টি ৯১.৩০%), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১.৯০ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭৭৭ জন শিক্ষার্থী সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। দিনাজপুর জেলা শাখা আয়োজিত গণভোটে অংশগ্রহণকারী ২৪৯৭ জন ভোটারের মধ্যে ২৩২৫ জন ভোটার অর্থাৎ ৯৩.১১ শতাংশ ভোটার সুন্দরবনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) মোট ভোট পড়েছে ১২০৮ জনের। সুন্দরবনের পক্ষে ১১১২টি অর্থাৎ ৯১.৫২ শতাংশ ভোট পড়ে। খুলনার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে মোট ভোট সংগৃহীত হয় ৩১৬৫টি, যার মধ্যে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট পড়েছে ২৭৯৪টি (৮৮.২৮%)। যশোরে মোট সংগৃহীত ভোটের (৬৪৪৮টি) ৯১.৬৫ শতাংশ-ই (৫৯১০টি) পড়েছে সুন্দরবনের পক্ষে। শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, পুরো বিশ্বে সুন্দরবনের ক্ষতি নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের দাভোস সম্মেলনে সুন্দরবন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। ভারতের অংশের সুন্দরবনের মানুষেরাও এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছে। গত ৮ জানুয়ারি ১৭টিরও বেশি দেশে সুন্দরবন রক্ষার্থে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ঘোষিত ‘গ্লোবাল প্রটেস্ট ডে’ পালিত হয়েছে। সেদিন ইউরোপের যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, মধ্যপ্রাচ্যের তুরস্ক, এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, ভারতসহ নানা দেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
সাধারণ মানুষ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব বুঝতে পারলেও, শাসকরা বুঝতে পারছে না! কারণ ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী মহাজোট সরকারের কাছে দেশের প্রাণ-প্রকৃতি-মানুষ সব কিছুই মূল্যহীন। তারা কেবল মুনাফা বোঝে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা সকল শাসক নিজেদের লাভের জন্য নদী-জলাশয়গুলোকে ধ্বংস করেছে, ভরাট করে বহুতল ভবন-মার্কেট নির্মাণ করেছে, পাহাড় কেটেছে, বনভূমি ধ্বংস করেছে। সবকিছুই হয়েছে ‘উন্নয়ন’র নামে। সম্প্রতি বন অধিদপ্তরের ‘বাংলাদেশ ফরেস্ট্রি মাস্টারপ্ল্যান ২০১৭-২০৩৬’ শীর্ষক খসড়াতে বলা হয়েছে যে, বিগত বছরগুলোতে দেশের বনভূমি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গাজীপুরের শালবন পরিমাণ ধ্বংস হতে হতে টিকে আছে মাত্র ১৫ শতাংশ। পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি কমতে কমতে টিকে আছে মাত্র ১৪ শতাংশ। সুন্দরবনও কমেছে ১০ হাজার ৯৮০ হেক্টর। সারাদেশে অবশিষ্ট বনের ৬৫.৮ শতাংশই আছে হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুসের মতো। আর এই ফুসফুসের দিকে এখন নজর পড়েছে দেশি-বিদেশি পুঁজিপতিদের। সুন্দরবনের আশেপাশে ১৫০টি কল-কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। টেলিটক কোম্পানি সম্প্রতি সেখানে তাদের মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের আবেদন করেছে। কাজেই রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কেবল শুরু। সরকার যদি তার তথাকথিত ‘উন্নয়ন দর্শন’ থেকে সরে না আসে, তাহলে সুন্দরবন ধ্বংস হওয়া সময়ের ব্যাপার। তবে আশার কথা হলো, এই দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থান পুরোপুরি রামপালের বিপরীতে। সরকারের উচিত, এত এত মানুষের মতকে উপেক্ষা না করে প্রকল্প থেকে সরে আসা। নাহলে এটাই দেশে এক অভ্যুত্থানের জমিন তৈরি করবে। হরতাল-ধর্মঘট-গণভোটে মানুষের ব্যাপক সমর্থন সে কথারই ইঙ্গিত দেয়।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মুখপত্র — অনুশীলন ফেব্রুয়ারি ২০১৭