আমার শেষ বাণী – আদর্শ ও একতা।
ফাঁসির রজ্জু আমার মাথার উপর ঝুলছে। মৃত্যু আমার দরজায় করাঘাত করছে। মন আমার অসীমের পানে ছুটে চলেছে। এই তো আমার মৃত্যুকে বন্ধুর মত আলিঙ্গন করার সময়। হারানো দিনগুলোতে নূতন করে স্মরণ করার সময়।
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, তোমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলছি: আমার বৈচিত্রহীন (কারাগৃহের) জীবনের একঘেয়েমিকে তোমরা ভেঙে দাও, আমাকে উৎসাহ দাও। এই আনন্দময়, পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমি তোমাদের জন্যে কী রেখে গেলাম? রেখে যাবার মত একটি জিনিষই আমার আছে, তা হল আমার স্বপ্ন। একটি সোনালী স্বপ্ন, স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। কী পবিত্রই না ছিল সেই মুহূর্তটি, যখন প্রথম আমি সেই স্বপ্ন দেখেছিলাম। তারপর সারাজীবন প্রচন্ড আবেগ নিয়ে সেই স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করতে জগতের আর সব কিছু ভুলে ক্লান্তিহীন আমি ছুটে চলেছি। জানিনা, আরদ্ধ কাজ সফল করার পথে কতটা এগিয়ে যেতে পারলাম। জানিনা, সেই পথের কোনখানে এসে আজ আমায় থেমে যেতে বাধ্য করা হল। যদি লক্ষ্যে পৌঁছবার আগে মৃত্যুর শীতল হাত তোমাকে স্পর্শ করে তবে আরদ্ধ কাজের দায়িত্ব তোমার উত্তরসূরীদের হাতে অর্পণ করো, যেমন আমি করে গেলাম। এগিয়ে চলো কমরেড়, সামনে এগিয়ে চলো, পিছিয়ে প’ড়ো না, মুহূর্তের জন্যও না। দাসত্বের কাল অবসান হয়ে এলো, স্বাধীন প্রভাতের অভ্যুদয় আসন্ন। ওঠো, জাগো, কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ো। উদ্যম হারিও না। নিশ্চিত জয় তোমাদেরই। ভগবান তোমাদের আশীর্বাদ করুন।
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল, ইস্টার বিদ্রোহের দিন, সেদিনের চট্টগ্রামকে তোমরা ভুলো না। জালালাবাদ, জুলুধা, চন্দননগর ও ধলঘাটের সংগ্রামের স্মৃতি তোমাদের মনে চির অম্লান করে রেখো। ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যেসব শহীদ আত্মবলিদান করেছেন তাঁদের নাম রক্তাক্ষরে লিখে রেখো তোমাদের অন্তরের অন্তঃস্থলে।
তোমাদের কাছে আমার ঐকান্তিক আবেদন, আমাদের সংগঠনের মধ্যে যেন কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয়। কারাগারের ভেতরের ও বাইরের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
বন্দে মাতরম!
চট্টগ্রাম জেল
১১ই জানুয়ারি, ১৯৩৪
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের চতুর্থ কেন্দ্রীয় সম্মেলন স্মরণিকা