Friday, April 26, 2024
Homeছাত্র ফ্রন্টসমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্র সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্র সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ

২১ জানুয়ারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ(মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড ফখরুদ্দিন কবির আতিক, ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দীকী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সংগঠনের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। সমাবেশ শেষে মিছিল করে শিক্ষা মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

সমাবেশে বক্তরা বলেন, ১৯৮৪ সালে সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভে ‘সর্বজনীন বিজ্ঞানভিত্তিক সেক্যুলার একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি’র দাবিতে ছাত্র ফ্রন্টের জন্ম। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শাসকশ্রেণীর শিক্ষা সংকোচন ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিপরীতে শিক্ষার অধিকার রক্ষা ও আদায়ে লড়াই করছে। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নেও আজো সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত আয়োজন সরকারের নেই। উপরন্তু বছরের পর বছর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে সরকার। যার গিনিপিগ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ২০০৯ সালে পিইসি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে দেশের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ মহল থেকেই এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি উঠেছিলো। তার-ই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পিইসি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিয়েও তা বাতিল করা হয় নি। আমরা  দেখছি এ পরীক্ষা চালুর ফলে অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। যে কোন উপায়ে ভালো ফলাফল করাই একমাত্র লক্ষে পরিণত হয়েছে। ফলাফল নির্ভর শিক্ষা হওয়ায় প্রাইমারি স্তরেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। আবার প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় মানসিক চাপ সইতে না পেরে কয়েকজন শিশু আত্মহত্যা করেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর পিইসি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার পর ১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষাবাণিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। সংবাদমাধ্যমে এসেছে, হাজার হাজার কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে যাদের বছরে মুনাফা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা, বাজারে চলছে গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা। সৃজনশীলতার নামে মুখস্ত নির্ভরতা বেড়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ধরন, ছাত্র – শিক্ষক অনুপাত, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অপ্রতুল আয়োজন, প্রশিক্ষণের দুর্বলতা বিবেচনায় না নিয়ে একের পর এক নতুন নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

বক্তারা আরো বলেন, ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি- জামায়াত সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ২০ বছর(২০০৬-২৬) মেয়াদী কৌশলপত্র তৈরী করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারে সময়ে তা বাড়িয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করা হয়। এর মূল কথা হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ধীরে ধীরে প্রাইভেটে পরিণত করা। এর অংশ হিসেবেই নামে- বেনামে ছাত্রদের বেতন – ফি বাড়ছে, বাণিজ্যিক  নাইটকোর্স- ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ টি বিভাগ ও অনুষদে ৮৩ টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ বিভাগ ও ২ টি ইন্সটিটিউটে ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টি বিভাগে নাইটকোর্স চালু আছে। এসব কোর্সের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন ও কোর্সের সাথে যুক্ত শিক্ষকরা। বিপরীতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জ্ঞান সৃষ্টি – বিতরণ – সংরক্ষণ হলেও তা ভুলে গিয়ে শিক্ষাকে আজ পণ্যে পরিণত করা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে দোকানে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি নাইটকোর্সের নামে শিক্ষা বাণিজ্য চলতে দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন। এর ভিত্তিতেই মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে এসব কোর্স বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়। অতীতেও এরকম অনেক  ফাঁকা কথা বলা হয়েছে কিন্তু সিদ্ধান্ত  কার্যকর হয়নি। আমাদের সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও  ছাত্রসমাজ এ ধরনের  বাণিজ্যিক কোর্স অতি দ্রুত বন্ধে সরকার- বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ দেখতে চায়। কলেজ – বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে  ছাত্রলীগের একক দখলদারিত্ব বিরাজ করছে। ১ম বর্ষে আসা একজন শিক্ষার্থীকে সিটের জন্য ছাত্রলীগের কাছে দাসখত দিয়ে হলে উঠতে হয়।এর পর শুরু হয় গেস্টরুম- গণরুমের নির্যাতন। ‘ম্যানার’ শেখানোর নামে চলে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মেরুদ- ভেঙ্গে দেওয়ার আয়োজন। বিরোধী মতকে দমন করা হচ্ছে লাঠির জোরে,হামলা করে। বিগত বছরগুলোতেহাফিজ- আবু বকর- আবরার হত্যাকা- তারই প্রমাণ। তাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নির্মাণে এই সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করি।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি) বাতিল করে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার মাধ্যমেই মূল্যায়ন কার্যক্রম বজায় রাখা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক নাইটকোর্স বন্ধের জোর দাবি জানান।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments