Thursday, April 25, 2024
Homeফিচারকরোনা মহামারী প্রতিরোধে যুদ্ধকালীন তৎপরতা চাই

করোনা মহামারী প্রতিরোধে যুদ্ধকালীন তৎপরতা চাই

বাসদ (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়ার আশংকায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন, তা মোকাবেলায় সরকারের অপর্যাপ্ত প্রস্তুতি-অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অবিলম্বে যুদ্ধকালীন তৎপরতা শুরু করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “সারা বিশ্বেই করোনা ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশেও সরকারী ভাষ্য অনুসারে এখন পর্যন্ত ১৪ জন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি সনাক্ত হয়েছে এবং একজন মারা গিয়েছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে খুব দ্রুত করোনা ভাইরাস ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ ভাইরাস ঠেকাতে দেশগুলোকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছে। ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর আমরা দুইমাস সময় পেয়েছি যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার। কিন্তু প্রথম থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলাকে গুরুত্ব দেয়নি, বরং সরকারের মন্ত্রীরা ‘যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে’, ’প্রস্তুতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে’ ইত্যাদি বাগাড়ম্বর ও মিথ্যাচার করেছে। এখন মানুষের কাছে স্পষ্ট – প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও সতর্কীকরণের ওপর যত জোর দেয়া হচ্ছে, সে তুলনায় সম্ভাব্য রোগাক্রান্ত প্রত্যেকের বিনামূল্যে পরীক্ষা, রোগ নিরূপণ ও চিকিৎসার জন্য সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

গত এক মাসে প্রায় চার লাখ নব্বই হাজারের মতো প্রবাসী দেশে ফিরলেও, বেশিরভাগই পরীক্ষার বাইরে থেকে গিয়েছেন। বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হলেও, তা নিশ্চিত করার সরকারী উদ্যোগ ছিল না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনা মহামারির প্রকোপ কমিয়ে আনতে সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষা ও আক্রান্তদের আইসোলেশনে নেয়ার কোন বিকল্প নেই। অথচ ঢাকায় একটি কেন্দ্র ছাড়া আর কোন জেলাতেই করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, ১৬ কোটি মানুষের জন্য সরকারের হাতে মাত্র ১৭৩২টি কিট আছে। হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান করা হয়নি। ফলে আতঙ্ক ও সমন্বয়হীনতার কারণে সম্ভাব্য রোগীদের সরকারী-বেসরকারী কোনো হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসা করা হচ্ছে না এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

ব্যাপক আকারে সংক্রমণ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেশন যন্ত্র, রোগী বহনের জন্য বিশেষ এম্বুলেন্স, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল; কোনো এলাকা বা পুরো শহর কোয়ারেন্টিন বা ‘লক ডাউন’ করতে হলে তার ব্যবস্থাপনা-চিকিৎসা-খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি জরুরী বিষয় কীভাবে  মোকাবেলা করা হবে, সে বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করার মতো প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা সরকারের নেই। বরং সরকারের সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ মুজিববর্ষ পালনের নামে শত শত কোটি টাকার আলোকসজ্জা ও আতশবাজির উৎসবের দিকে। জনমনে আতংকের সুযোগে ব্যবসায়ীরা মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মুনাফা লুটছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করলেও, কারখানা-অফিস-কর্মক্ষেত্র-শপিং মল ও জনসমাগমের স্থানগুলো সবই চালু আছে। এসব জায়গায় সাবান-মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রতিরোধমূলক ও জীবাণুমুক্তকরণ ব্যবস্থা যথেষ্ট দেখা যাচ্ছে না।

আমরা শংকিত – ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে সংক্রমণ প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া না হলে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের প্রাণ যেতে পারে। জনমনে এই উদ্বেগ ও অসহায়ত্বের পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কাছে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাই –

১. জরুরী পরিস্থিতি বিবেচনায় ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী-হাসপাতালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রত্যেক জেলায় করোনা পরীক্ষার সেন্টার ও বিনামূল্যে টেস্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে বিদেশ থেকে পরীক্ষার কিট আমদানি ও দেশের ভেতর উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও ট্রেনিং নিশ্চিত করতে  হবে।
২. বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ও করোনা টেস্ট করতে হবে। তাদের সংস্পর্শে যারা আসছেন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সরকারী উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন ফর্মাল সেক্টরের শ্রমিকদের  জন্য সবেতন ছুটি ও ইনফর্মাল সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ভাতা ও পরিবারের জন্য রেশন বরাদ্দ করুন। হকার-ছোট দোকানদার-রিক্শাচালক-দিনমজুর যাদের কাজ ও রোজগার বন্ধ, সেই সব গরিব-নিম্নবিত্ত পরিবারে অন্তত সামনের চার সপ্তাহ বিনামূল্যে রেশন, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করতে হবে।
৪. সাবান-মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের কালোবাজারি ও মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ কর। গরিব এলাকাগুলোতে সরকারী খরচে সাবান-মাস্ক বিতরণ করতে হবে।
৫. সারাদেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক, চিকিৎসক সংগঠন ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে সভা করে তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করা এবং চীন-দক্ষিণ কোরিয়া-ইতালি-কিউবাসহ বিভিন্ন দেশ যেভাবে এই মহামারী মোকাবেলা করেছে তাদের অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা গ্রহণ করুন।
সরকারের কাছে যুদ্ধকালীন তৎপরতার দাবি জানানোর পাশাপাশি জনসাধারণের প্রতি আমরা আবেদন জানাই – মহামারী প্রতিরোধে নিজেরা সতর্ক থাকুন, অন্যদের সচেতন করুন ও আক্রান্ত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিন। সমস্ত রাজনৈতিক দল-গণসংগঠন-ক্লাব-লাইব্রেরি-সমিতি-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সকলে বিপদাপন্ন মানুষকে রক্ষায় এগিয়ে আসুন।”
RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments