Monday, December 23, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - এপ্রিল ২০২২গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার স্বার্থে?

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার স্বার্থে?

আবার বেড়েছে গ্যাসের দাম। এলপিজি গ্যাস কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ৪.০৬ (মূসকসহ) টাকা। বাসা—বাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। এক চুলার ক্ষেত্রে ৬৫ টাকা এবং দুই চুলার ক্ষেত্রে ১০৫ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানে শুধু গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নয়, বরং গাড়ি ভাড়া, বাড়ি ভাড়াসহ জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়া। এই অসহনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময়ে কেন গ্যাসের দাম আবার বাড়ানো হচ্ছে? গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি কি অবশ্যম্ভাবী ছিল? এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে কার স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে?
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নয়, বরং মূল্য কমানো যায়

১. বাংলাদেশে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস লাগে। এর মধ্যে ২৩’শ ঘনফুট গ্যাস নিজেরাই সরবরাহ করতে পারে। আর আমদানি করতে হয় ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আমদানিকৃত গ্যাসের মধ্যে ৬শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনা হয় দীর্ঘমেয়াদী (১০বছর) চুক্তিতে। যার সর্বোচ্চ দাম পড়ে ৬—১০ ডলার। আর খোলা বাজার থেকে আনতে হয় মাত্র ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, যার দাম উঠানামা করে। এই অল্প পরিমাণ গ্যাসের জন্য এতো ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কোন যুক্তি থাকতে পারে না।

২. বাংলাদেশে ‘সিস্টেম লস’ এর নামে ১২ শতাংশ গ্যাসের অপব্যয় হয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যা মাত্র ২ শতাংশ। বাস্তবে এই ‘সিস্টেম লস’ হলো চুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে এই চুরি রোধ করতে পারলেও গ্যাস আমদানি করতে হতো না।

৩. আমদানিকৃত গ্যাসের দাম বাড়লে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ছে। কারণ পেট্রোবাংলার হিসাব মতে, গ্যাস উৎপাদনে দেশীয় কোম্পানির খরচ হয় ১ টাকা ২৭ পয়সা, দেশী গ্যাস ক্ষেত্র থেকে বিদেশী কোম্পানি গ্যাস উৎপাদনে খরচ হয় ২ টাকা ৯১ পয়সা। আর আমদানি করলে ইউনিট প্রতি খরচ পড়ে ৫০ টাকা ৩৯ পয়সা। আমদানি করতে হয় এলএনজি’র মাধ্যমে। আবার নিজের দেশে গ্যাস থাকার পরও উত্তোলন ও অনুসন্ধান না করে বিদেশি কোম্পানির সাথে অসম ‘প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি)’ করার কারণেও গ্যাসের দাম বাড়ে।

৪. আমদানিকৃত গ্যাস খুব অল্প, তারপরও বিশ্ববাজারে দামবৃদ্ধির কথা বলে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। আবার বিশ্ববাজারে দরপতনের সময়েও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালে, যখন বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমেছে শতকরা ৫০ ভাগ, ভারত তাদের ভোক্তাদের জন্য গ্যাসের দাম কমিয়েছে ১০১ রূপী, তখনও বাংলাদেশে ৪৬.৭৫ শতাংশ হারে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।

দেশীয় কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা না বাড়িয়ে বেশি মূল্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। স্বনির্ভর জ্বালানী খাতের পরিবর্তে আমদানিনির্ভর জ্বালানিখাত সৃষ্টি করা হচ্ছে। নব্য উদারকরণ নীতিমালায় এই খাতগুলোতে বিদেশী বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে, এক সম্ভাব্য জ্বালানী সংকটের দিকে দেশকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

এতে কারা লাভবান হচ্ছেন? মহেশখালী সমুদ্র বন্দরের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের দায়িত্বে আছে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি আর দেশীয় কোম্পানি সামিট। দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা এলাকায় এরা আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা হচ্ছে। মাতারবাড়ি এলাকায় স্থলভাগে টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলছে সামিটসহ আরও ১৫টি বিদেশী কোম্পানি। ভারত থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ভারতীয় কোম্পানি এইচ—এনার্জি। সামিট গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তণ বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। বর্তমান জ্বালানী নীতি থেকে দেশ পরিচালনাকারী বৃহৎ ব্যবসায়ী ও মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনের কোলাবোরেশন যে প্রভূত মুনাফায় স্ফীত হচ্ছে সেটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments