Wednesday, December 25, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি ও সংগঠন সংবাদগ্যাস-বিদ্যুতের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন — বাসদ (মার্কসবাদী)

গ্যাস-বিদ্যুতের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন — বাসদ (মার্কসবাদী)

SPMB_logo_1[dropcap]গ[/dropcap]ত ৬ বছরে ৬ দফা বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পর আবারো বিদ্যুতের দাম ২.৯৩% এবং গ্যাসের দাম এক ধাক্কায় ২৬.২৯% বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকার। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে প্রায় এক বছর আগে। কমতে কমতে সেটা এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন। কিন্তু বাংলাদেশে দাম কমানো হয়নি। উল্টো গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। এমন এক সময়ে এই মূল্যবৃদ্ধি হল যখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপে মানুষ অতিষ্ঠ। পিঁয়াজ ৮০ টাকা, ডাল ১৫০ টাকা, বেশিরভাগ সবজির দাম ৫০ টাকার ওপরে।

মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়ল ইউনিট প্রতি ১৭ পয়সা ও ২৩ পয়সা, কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচের বিদ্যুতের দাম বাড়ল ১ টাকা ৩১ পয়সা; গ্যাসের চুলার বিল বাড়ল ২০০ টাকা এবং সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়ল প্রতি ইউনিট ৫ টাকা। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে, বাড়ি ভাড়াও বাড়বে। সিএনজির দাম বাড়ানোর ফলে পরিবহন খরচ বাড়বে। কৃষিকাজে ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সুতরাং মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সীমিত আয়ের মানুষের ব্যয় নির্বাহ আরও কঠিন হবে।

এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক
দেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের গড়পড়তা তিন ভাগের এক ভাগ আসে তেল পুড়িয়ে। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১২০ ডলার থেকে কমে ৪০ ডলারে নেমেছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচও কমেছে। ফলে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম কমানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কমানোর বদলে উল্টো বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হল।
দেশে জ্বালানি তেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ খাতে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিবহন খাতে। অবশিষ্ট তেল ব্যবহৃত হয় কৃষি, শিল্প, গৃহস্থালি ও অন্যান্য খাতে। ফলে, আমদানিকৃত তেলের দাম কমালে গাড়িভাড়া, কৃষিকাজের খরচ ও শিল্পে উৎপাদন ব্যয় কমানো সম্ভব হতো। কিন্তু সরকার তা করেনি।

Dhaka280815বিইআরসির আইন ও বিধিমতে, যদি কোনো কম্পানি বা প্রতিষ্ঠান লাভে থাকে বা মুনাফা করে তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারবে না। এ বিধান লঙ্ঘন করেছে বিইআরসি। কারণ বাংলাদেশের সব গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান এই মুহূর্তে লাভে রয়েছে। তারা বছরে তাদের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের একাধিক প্রফিট বোনাসও দিয়ে থাকে।

গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসি গণশুনানি করে। সেই শুনানিতে দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি, উপরন্তু বিদ্যমান দাম কমানোর সুপারিশ উঠে আসে। সব পক্ষের সে সুপারিশ উপেক্ষা করে সরকার দাম বাড়িয়েছে।

২০১৩-’১৪ অর্থবছরে সরকারি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডে প্রতিবছর জমা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। তারপরও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কি? বলা হচ্ছে — কোন দেশে গ্যাস এত সস্তা নয়। গ্যাস আমাদের নিজেদের সম্পদ। উৎপাদক দেশ বলে এখানে দাম কম থাকাই যুক্তিযুক্ত। যেরকম মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম। দাম বাড়ানোর বেলায় উন্নত দেশের উদাহরণ টানা হয়, কিন্তু সেসব দেশের উন্নত সেবার উদাহরণ দেয়া হয় না। বাংলাদেশে মজুরী যে বিশ্বে সর্বনিম্ন সারিতে তাও বলা হয় না।

DSC05559সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স-পেট্রোবাংলার পরিবর্তে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করছে এবং তাদের কাছ থেকে বহুগুণ বেশি দামে গ্যাস কিনছে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর নামে স্থাপিত তেলভিত্তিক প্রাইভেট রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। এভাবে জনগণের অর্থ দিয়ে দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভরা হচ্ছে। আর এই লুটপাটের ফলে সৃষ্ট ঘাটতি পোষাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান বলেছেন, বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে গ্যাসের দাম বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

প্রতিরোধ আন্দোলনে সামিল হোন
এবারের মূল্যবৃদ্ধিই শেষ নয়। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানো হবে। জনপ্রতিনিধিত্বহীন এই সরকার জনমতকে যে বিন্দুমাত্র পরোয়া করে না — এই স্বৈরতান্ত্রিক ঘোষণা তার প্রমাণ। জনগণের দুর্দশার প্রতি এদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে সামনে আরো বেশি মূল্যবৃদ্ধির ফাঁস আমাদের গলায় চেপে বসবে।

আওয়ামী মহাজোট সরকার বিদ্যুৎ-গ্যাস-জ্বালানি-তেল-পানি-শিক্ষা-চিকিৎসাসহ সবকিছুকে পণ্যে পরিণত করতে চায়। পুঁজিপতিদের মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিতেই তাই তারা দফায় দফায় এসব সেবার দাম বাড়ায়। দেশের শাসনক্ষমতায় যখন যে দলই এসেছে সকলেই জনগণের স্বার্থের বিপরীতে গিয়ে এভাবে ব্যবসায়ী-পুঁজিপতি শ্রেণীর স্বার্থের পক্ষে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছে। জনগণের স্বার্থ আদায় করতে তাই দেশের মধ্যবিত্ত-গরীব-মেহনতি মানুষের ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলনই একমাত্র পথ। গ্যাস ও বিদ্যুতের এই অন্যায় ও স্বেচ্ছাচারী মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আমরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।


 

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কর্তৃক প্রকাশিত প্রচারপত্র। প্রকাশকাল ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments