“নতুন করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, কারণ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ অনেক কমেছে। অথচ, বিদ্যুতের দাম কমানোর বদলে উল্টো বাড়ানো হচ্ছে। আর, গ্যাস আমাদের নিজস্ব সম্পদ ও লাভজনক খাত, এর দাম দফায় দফায় বাড়ানোর কোন যুক্তি নেই। সকলের মতামত উপেক্ষা করে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ মহাজোট সরকারের চরম স্বৈরতান্ত্রিক ও গণবিরোধী চরিত্রের পরিচায়ক।” গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী)-র উদ্যোগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশের পূর্বে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বাসদ(মার্কসবাদী) কর্তৃক ঘোষিত ১১ – ২৫ মে ‘দাবি পক্ষ’-এর অংশ হিসেবে ২২ মে ২০১৬ রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মানস নন্দী, জহিরুল ইসলাম, ওবায়দুল্লাহ্ মুসা, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, সাইফুজ্জামান সাকন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে সচিবালয়ের সামনে গেলে পুলিশী বাধার মুখে পড়ে। সেখান থেকে একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁর একান্ত সচিবের কাছে স্মারকলিপি পেশ করে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সরকারের ৭ বছরের শাসনামলে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৮ বার এবং গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৩ বার। নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী আবাসিক খাতে গ্যাসের বিল হবে সিঙ্গল বার্নারে ১১০০ টাকা ও ডাবল বার্নারে ১২০০ টাকা, যা বর্তমানে যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৮% বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে, বাড়ি ভাড়া-গাড়ি ভাড়া, কৃষিকাজে ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়বে। সীমিত আয়ের মানুষের সংসার খরচ চালানো আরো কঠিন হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর ও লভ্যাংশ বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরও পেট্রোবাংলা নীট মুনাফা করেছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্যাস উন্নয়ন ফান্ডে প্রতিবছর জমা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। তারপরও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা কি?
বক্তারা বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স-পেট্রোবাংলার পরিবর্তে বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করছে এবং তাদের কাছ থেকে বহুগুণ বেশি দামে গ্যাস কিনছে। অন্যদিকে, বিদ্যুতের উৎপাদন দ্রুত বাড়ানোর নামে স্থাপিত তেলভিত্তিক প্রাইভেট রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। কথা ছিল, এসব কেন্দ্র ২০১৩ সালেই বন্ধ করা হবে। এখন বলা হচ্ছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত এগুলো চলবে। এভাবে জনগণের অর্থ দিয়ে দেশি-বিদেশি লুটপাটকারীদের পকেট ভরা হচ্ছে। আর এই লুটপাটের ফলে সৃষ্ট ঘাটতি পোষাতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, সরকার গ্যস-বিদ্যুতের দাম আবারো বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে না আসলে জনসাধারণকে সংগঠিত করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে।