শিক্ষার অধিকার রক্ষায় বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যয়
চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি
” শিক্ষা মানুষের মৌলিক মানবিক অধিকার। এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্রীয় উদাসীনতায় শিক্ষার সর্বস্তরে ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের যে চক্রান্ত চলছে তার বিরুদ্ধে তীব্র ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২১ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নগর সভাপতি তাজনাহার রিপন। সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর সাধারন সম্পাদক আরিফ মঈনুদ্দিন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সহ-সভাপতি মুক্তা ভট্টাচার্য, সদস্য মোঃ সাইয়েম, জয়তু সুশীল ও ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ” স্বৈরাচারী শাসকের অগ্নিগর্ভে ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি একটি সর্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, সেক্যুলার, একই পদ্ধতির, গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। পাকিস্তান সরকার আমাদের শিক্ষা দিতে চায় নি। মানুষের শিক্ষার অধিকার কেড়ে নিতে তারা তৈরি করেছিল শরীফ কমিশন শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি বাতিলের জন্য ১৯৬২ সালে ছাত্ররা লড়াই করেছিল। শরীফ কমিশন শিক্ষানীতিতে পরিষ্কার হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকের দৃষ্টিভঙ্গি। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কুদরত এ খুদা শিক্ষা কমিশন যে শিক্ষানীতি গঠন করে তাতেও শরীফ কমিশনের শিক্ষানীতিরই পুনরাবৃত্তি ঘটে। ১৯৮৩ সালের মজিদ খান শিক্ষানীতিতেও বলা হয়, শিক্ষা সবার জন্য নয়। এর বিরুদ্ধেও সেদিন ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষানীতি-২০১০ পর্যন্ত আজ অবধি যেসব শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে সকল শিক্ষানীতিরই মূল কথা একই। অর্থাৎ পাকিস্তান সরকার যে দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষকে শিক্ষা দিতে চায় নি, আমাদের দেশের বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠীও একই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সকলের শিক্ষা নিশ্চিত করতে চায় না।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ” স্বাধীনতার পর থেকে চট্টগ্রামে কোন সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মিত হয় নি। কিন্তু ব্যঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেহেতু সকলের পড়ার সুযোগ নেই তাই শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই পড়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সেখানেও ক্রমাগত ফি বৃদ্ধি ও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শিক্ষাকে মুষ্টিমেয় মানুষের সুযোগে পরিণত করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ চট্টগ্রামের সাধারন শ্রমজীবী মানুষের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সম্প্রতি মেয়র ভর্তুকি কমিয়ে বেতন ও ভর্তি ফি দ্বিগুণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ফলে ঝরে পড়বে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। মেয়রের এই অগণতান্ত্রিক অমানবিক সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতিরই প্রতিফলন।”
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ” বর্তমান সরকারের ফ্যাসীবাদী দুঃশাসনে সাধারন মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ক্রমাগত বাড়ীভাড়া, গাড়িভাড়া, গ্যাম-বিদ্যুতের দাম, দ্রব্যমূল্য যে হারে বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না সাধারন মানুষের আয়। সম্প্রতি লোকসানের মিথ্যা অজুহাতে এডিবির পরামর্শে রেলের ভাড়া দ্বিতীয়বার বৃদ্ধির যে সুপারিশ রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি করছে তাতে জনগণের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। মাদক-জুয়া-পর্ণোগ্রাফির দৌরাত্মে যুবসমাজের নৈতিক চারত্র, মূল্যবোধ ক্রমান্বয়ে ধ্বসে পড়ছে। সারাদেশের এমন অন্ধকার হতাশাময় পরিস্থিতিতে সাধারন জনগণের সামনে আলোর দিশারী হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন, শিক্ষায় ভ্যাট বাতিলের দাবিতে আন্দোলন, প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে, এস.এস.সি. পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদে ও সম্প্রতি চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন সাধারন মানুষের মনে আশা তৈরি করেছে।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “শিক্ষা সংস্কৃতি মনুষ্যত্ব রক্ষার যে অঙ্গীকার নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। আমরা এমন একটি শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই যে শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসতে শিখাবে, ন্যায় অন্যায় বুঝতে শিখাবে, যুক্তি ও বিজ্ঞানের ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালনা করতে শিখাবে। সমাজের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-পেশাজীবী সকলকে এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই।”
সমাবেশ শেষে একটি সুসজ্জিত মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে।