Monday, May 6, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি সংবাদচা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত কর - চা শ্রমিক ফেডারেশন

চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত কর – চা শ্রমিক ফেডারেশন

795_1221185987898020_1996492901363731981_n

ইকনোমিক জোনের নামে হবিগঞ্জের চান্দপুর ও বেগমখান চা বাগানের চা শ্রমিকদের উচ্ছেদ পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন। চা শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, আমাদের দেশের চায়ের খ্যাতি যেমন বিশ্বজোড়া তেমনি চা বাগানের সৌন্দর্যও সকলের নজর কাড়ে। কিন্তু এ সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে চা শ্রমিকদের করুণ জীবন কাহিনী। শোষণ, বঞ্চনা, প্রতারণা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও দাসসম জীবনযাপনে বাধ্য করার এ এক নির্মম ইতিহাস। প্রায় দেড়শত বছর আগের অবস্থার সাথে আজকের অবস্থার তেমন কোন পার্থক্য কতটুকু ! বৃটিশ গেল, পাকিস্তান গেল, বাংলাদেশ স্বাধীন হল প্রায় ৪৫ বছর। মহান মুক্তিযুদ্ধে শত শত চা শ্রমিক সন্তান শহীদী আত্মদান করেছেন । প্রত্যাশা ছিল দেশ স্বাধীন হলে দাসত্বের শৃঙ্খল হতে হয়তো মুক্তি পাবে। কিন্তু এ প্রত্যাশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। প্রায় দেড়শত বছরব্যাপী নির্মম শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে এই চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী। শিক্ষা নেই, চিকিৎসা নেই, যে ভূমিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে সে ভূমিতে অধিকার নেই। বিভিন্ন সময় কাজ দেয়া ও নিশ্চিত কর্মসংস্থানের কথা বলে অসচেতন চা শ্রমিকদেরকে বিভ্রান্ত করে পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চলে উচ্ছেদ অভিযান, যদিও চা বাগানের জমিতে অন্য কোন প্রকল্প চালু করা সরকারিভাবেই বে-আইনী। কিন্তু আইনে যাই থাক, যেখানে মালিকের মুনাফার প্রশ্ন সেখানে সকল আইন, সকল মানবিকতাও বিকিয়ে যায়। আর এই মুনাফা নিশ্চিত করতেই আজ চা বাগানে নজর পড়েছে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের। এরই প্রমাণ সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান, স্টেডিয়াম নির্মাণ ও তৈলকূপ খননের নামে বাগানের শ্রমিকদের উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীতে সে স্টেডিয়ামের দেয়াল ধ্বসে তিন জন শ্রমিক সন্তান নিহত হলেও এখন পর্যন্ত তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান কিংবা দোষীদের কোন বিচার হয়নি। শুধু তাই নয়, চা শ্রমিকদের শ্রমে ঘামে সৃষ্ট চা বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে চা বাগানে ‘টি-ট্যুরিজম’ চালু করার ষড়যন্ত্র করছে শাসক গোষ্ঠি। বর্তমান সময়ে এরকম একটি ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হবিগঞ্জের চান্দপুর ও বেগমখাল চা বাগানের শ্রমিকরা।

প্রচারপত্রে বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, সরকার হবিগঞ্জের চান্দপুর ও বেগমখান বাগানের প্রায় ৫০০ একরেরও অধিক জমিতে ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে পূর্বপুরুষদের সময় থেকে পাওয়া ভিটেমাটি ও ক্ষেতের জমি হতে উচ্ছেদ হবে অসংখ্য চা শ্রমিক পরিবার। যে চা বাগান ও জমির সাথে শত শত বছর ধরে এ চা শ্রমিকদের শ্রম-ঘাম যুক্ত, তা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকার যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তা কতটুকু বাস্তবসম্মত? বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সস্তা শ্রমের বাজার। এ সস্তা শ্রম আর বেশী মুনাফার লোভেই বিদেশী পুজিঁপতিরা ইকনোমিক জোনে আসবে, পুজিঁ বিনিয়োগ করবে। এতে কিছু কর্মসংস্থান হবে সত্য, চাকচিক্য-জৌলুসও বাড়বে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদে ফলাফল কি হবে? যখনই তাদের মুনাফা কমবে বা অন্য দেশে আরও সস্তা শ্রমের খোঁজ পাবে, আরও অধিক মুনাফার সম্ভাবনা দেখবে সেদেশেই তারা ছুটবে। ফলে ইকনোমিক জোনের উন্নয়ন অস্থায়ী, যে কোন সময়ে ধ্বসে যেতে পারে। অন্যদিকে চা বাগানগুলো গত ১৫০ বছর ধরে স্থায়ী শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা শিল্পের অবদান প্রশ্নাতীত। এ চা বাগানের সাথে হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার, তাদের সাথে আশেপাশের এলাকার জনগণের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। ফলে এ অঞ্চলের স্থায়ী শিল্প চা বাগানগুলো উচ্ছেদ করে ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠা হলে শুধু চা শ্রমিক নয় এ অঞ্চলের জনগণও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার সারাদেশে ১০০ ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে চান্দপুর ও বেগমখান চা বাগান হতে শ্রমিকদের উচ্ছেদে সমর্থ হলে ভবিষ্যতে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার চা বাগানগুলো নিয়েও একই চক্রান্ত হতে পারে। ফলে এ আন্দোলন শুধু এ দুটি বাগানের শ্রমিকদের ভূমি রক্ষার আন্দোলন নয়, অত্র এলাকার সর্বস্তরের জনগণ ও সমগ্র সিলেট-মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জের চা শ্রমিক এবং জনগণেরও আন্দোলন। চান্দপুর ও বেগমখান থেকে শ্রমিকদের উচ্ছেদ করার এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্রমিকরা লড়াই শুরু করেছে। সুতরাং চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিকেরা যে বীরত্বপূর্ণ লড়াই শুরু করেছে, সেই লড়াইয়ে সকল চা বাগানের শ্রমজীবী মানুষ এবং সমাজের সকল বিবেকবান মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চান্দপুর চা বাগানের শ্রমিকদের এই নৈতিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments