‘আমাদের তো তাহলে আর সেশনজট থাকবে না’, ‘ এবার মানসম্মত শিক্ষা পাবো’, ‘ঠিক সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা হবে, দ্রুত রেজাল্ট পাবো,’ ‘চাকরী পাওয়ার আগেই ‘চাকরীর বয়স শেষ’ হয়ে যাবে না’, ‘চাকরীর বাজারে আর পার্থক্য থাকবে না’, ‘গবেষণার সুযোগ থাকবে’। এসবের সাথে সাথে — ‘আমাদের কলেজ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাবে’, ‘আমরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পাবো’, ‘তখন কারা আমাদের পড়াবেন’, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই কি আবাসন-পরিবহন, লাইব্রেরী-সেমিনারে পর্যাপ্ত বই, গবেষণার আয়োজন থাকবে’ — প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুয়ায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ১৮১ টি অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী সরকারি কলেজকে পুনরায় বিভাগীয় পর্যায়ের পুরনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনার ঘোষণার প্রেক্ষিতে এমন জিজ্ঞাসু আর কৌতূহলী শতপ্রশ্ন আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আর অবহেলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে ভীড় করছে। আবার তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে — উচ্চশিক্ষা জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় স্বপ্ন দেখার এই সাহসটুকও হারিয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েন, তারা যেন কোনোভাবেই ভাবতে পারেন না যে তারা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনের ফারাক তাদের চিন্তা-মননেও যেন একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে! ইউজিসি চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে—‘সেশনজট নিরসন ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে’ নাকি এমন পদক্ষেপ। তাঁদের দৌঁড়ঝাপ যে প্রকৃতই সমস্যা-সংকট দূর করবার জন্য নয় তা তাদের প্রস্তাবনা এবং আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা দিয়েই আমরা বুঝতে পারি। শুরুতে নানা উদ্যোগ-তৎপরতা থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর ইউজিসি- প্রত্যেকের নিজস্ব স্বার্থ-সুবিধার দ্বন্দ্বে এ আলোচনা আর অগ্রসর হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার কর্তৃত্ব আর ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে সেশনজট নিরসনে ‘ক্রাস প্রোগ্রাম’ থেরাপি হাজির করেছে। ২০১৫-২০১৮ এই তিন বছরে দুই যুগের সৃষ্ট সেশনজট নিরসনের ঘোষণা দিয়েছেন(!)। এই তাৎক্ষণিক টোটকা সমাধান হিতে বিপরীত ঘটাচ্ছে। ক্লাস হচ্ছেনা। সিলেবাস শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নিতে গিয়ে শিক্ষার মানকেই আরো ধ্বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সমস্যা নিরসনে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ না করে খেয়ালখুশির কোন সিদ্ধান্তই প্রকৃত সমাধান আনবে না
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। যে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করেছিল, তা অনেক আগেই ফিকে হয়ে এসেছে। বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অনাদরে সমস্যার স্তুপ জমতে জমতে পাহাড় আকার ধারণ করেছে। এই বাধার পাহাড় (!) ডিঙোনোর মন্ত্র খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও নেই। তাই একেক সময় একেক নিয়ম-পদ্ধতি আরোপ করছে। সমস্যার সূত্রপাত কোথায় তা চিহ্নিত না করে খেয়াল খুশিমত বিধি-বিধান আরোপ করায় মঙ্গলের থেকে অমঙ্গলই বেশি হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা কি? যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল কেন তা ব্যর্থ হলো? কেন আবার আগের নিয়ম চালুর পরিকল্পনা করতে হচ্ছে- এসবের কোন যথার্থ মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এ প্রশ্ন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক উপাচার্যও রেখেছিলেন। ‘আবার যেন ভুল না হয়’ সে বিষয়ে আরো ভাবতে বলেছেন, সবার মত নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
স্মর্তব্য যে, ’৯২ সালের পূর্বে কলেজসমূহ চারটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই পরিচালিত হতো। সে সময় দীর্ঘ সেশনজটের খড়গ নেমে এসেছিল কলেজসমূহের শিক্ষার্থীদের উপর, সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা চরম আকার ধারণ করেছিল, সর্বোপরি মানসম্মত পাঠদানও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল, ফলে নেমে গিয়েছিল শিক্ষার মান। এইসব সমস্যা পড়েছিল, ফলে নেমে গিয়েছিল শিক্ষার মান। এইসব সমস্যা নিরসনের আশ্বাস নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার সময়ই প্রশ্ন উঠেছিল, চারটা বিশ্ববিদ্যালয় যখন এসব কলেজকে পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে এরকম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সেটা কিভাবে সম্ভব হবে? সম্ভব যে হয়নি, তা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। উপরন্তু সেশনজটের প্রকোপ বেড়েছে। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন না করেই ২২ বছর পর ‘সেশনজট নিরসন, ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন’র জন্য আবারো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনার কথা বলা হলো। এভাবে শুধুমাত্র পরিচালনার হাত বদল করে সমস্যা নিরসন সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সংকটের প্রকৃত কারণ নির্ধারণ ও পর্যাপ্ত আয়োজন নিশ্চিত করা।
২১০ দিন ক্লাস, প্রয়োজনীয় শিক্ষক-ক্লাসরুম ও স্বতন্ত্র পরীক্ষাহল নির্মাণ করতে হবে
কলেজসমূহের মূল সংকট হচ্ছে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও ক্লাসরুমের অভাব। গ্রেডিং পদ্ধতির রুলস-রেগুলেশন অনুযায়ী বছরের ৩৬৫ দিনে ২১০ দিন ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও ক্লাস হয় মাত্র ৮০-৯০ দিন! শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য তো দূরের কথা, সিলেবাসের পড়াটুকুও শেষ হয়না। সরকারি ছুটি বাদে এইচএসসিসহ অনার্সের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার কারণে বছরে অধিকাংশ সময়ই কলেজ বন্ধ থাকে। স্বতন্ত্র পরীক্ষাহল নির্মাণ করে এ সমস্যা নিরসন সম্ভব হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ-আয়োজন নেই। ক্লাসরুম ব্যবহার করেই বছরের পর বছর ক্লাস বন্ধ করে পরীক্ষার কাজ চালাতে হচ্ছে। ফলে ক্লাসরুমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় জ্ঞানের যে আদান-প্রদান হওয়ার কথা, এই প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে যে নতুন জ্ঞান সৃজন করার কথা তার কোন কিছুই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। জ্ঞান আহরণ ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে জগত-জীবনকে নানামাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ও চিনতে শেখার কথা, উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করার কথা তা থেকেও শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত।
শেষ হয়ে গেলেও পরীক্ষা হয় না, পরীক্ষা হলেও ফল প্রকাশে ঘটে দীর্ঘসূত্রিতা। ফলে ৪/৫ বছরের অনার্স/মাস্টার্স শেষ করতে সময় লাগে ৭-৮ বছর। এভাবে সেশনজটের কবলে পড়ে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান সময়। স্বতন্ত্র পরীক্ষা হল, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকাই এর জন্য দায়ী। আবার ক্লাসরুম বাদ দিলে একজন শিক্ষার্থীর সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করার কথা লাইব্রেরি, সেমিনারে— সেখানেও প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত বই নেই। গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলেও, নেই কোনো গবেষণা কার্যμম। হাতেগোনা কয়েকটি কলেজে কিছু সুবিধা ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য কোন আবাসন-পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। স্বায়ত্তশাসনের কোন কিছু নেই এখানে। বাস্তবে এসব সমস্যার সমাধান না করে অক্সফোর্ড কিংবা ক্যামব্রিজের অধিভুক্ত করলেই কি পরিস্থিতি পাল্টাবে? শিক্ষার গুণগত মান কি বাড়বে?
আবার যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দিয়ে পরিচালনার কথা বলা হচ্ছে তাদের অবস্থা কি? শিক্ষক-পরিবহন-আবাসন-বাজেট সংকট সহ নানাবিধ সংকটে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে আয়োজন অপ্রতুলতা তা দিয়ে কিভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয় ২০-৩০টা কলেজ পরিচালনা করবে? রংপুর বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দুটি — বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে হাজী দানেশ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। কারমাইকেল কলেজ সেখানকার অনেক পুরনো, ঐতিহ্যবাহী, বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর কলেজ। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে একাডেমিক- প্রশাসনিক আয়োজন কিংবা অভিজ্ঞতা তা দিয়ে কি কারমাইকেল কলেজকে পরিচালনা করা সম্ভব? এ বিভাগে ১৭ টা সরকারি কলেজ রয়েছে। এমন করে বরিশাল বিভাগের সরকারি কলেজের কথা ভাবুন। নতুন প্রতিষ্ঠিত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে ঐতিহ্যবাহী বিএম কলেজকে পরিচালনা করবে?
ক্রমাগত ফি বৃদ্ধি; এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা
এতো এতো সমস্যা-সংকটের সাথে তাল মিলিয়ে নানা নামে ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হচ্ছে বেতন-ফি। ইনকোর্স পরীক্ষার নামে ২০০ টাকা করে একবার পরীক্ষার সময় রশিদবিহীন আর একবার ফরমপূরণের সময় ফি আদায় করা হচ্ছে। কলেজগুলো বিভাগভেদে ৪০০-৫০০ টাকা করে চার বছরের সেমিনার ফি আদায় করছে। অথচ সেই টাকায় বই কেনা হচ্ছে না। আদায় করা হচ্ছে অযৌক্তিক কেন্দ্র ফি। ছাত্র সংসদ চালু না থাকলেও, কোন সাংস্কৃতিক কিংবা ক্রীড়ায়োজন না থাকলেও অযৌক্তিকভাবে ফি আদায় করা হচ্ছে। বেসরকারি কলেজগুলোতে আয়োজন অপ্রতুলতা আরো ভয়াবহ। প্রায় সব কলেজই চলে খ-কালীন শিক্ষক দিয়ে। ক্লাসরুমের সংকট তীব্র। লাইব্রেরী-সেমিনার-আবাসন-পরিবহন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় আয়োজন ন্যূনতমও নেই। এই সমস্ত কলেজের শিক্ষকদের বেতনের মাত্র ৮০ ভাগ প্রদান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাকি ২০ ভাগসহ কলেজের অন্যান্য সমস্ত খরচ সংগ্রহ করা হয় অভ্যন্তরীণ আয়ের মাধ্যমে — ছাত্রদের কাছ থেকে আদায়কৃত বেতন ফি’র দ্বারা। এসব বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট উত্থাপিত ৮ দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই প্রকৃত অর্থে সমাধান
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের এসব পর্বতসমান সমস্যা-সংকট নিরসনে দেশের শিক্ষাবিদ-বুদ্ধিজীবীসহ নানা মহলের মতামত রয়েছে। সে সমস্ত মতামত কখনই আমলে নেওয়া হয়নি। ’৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের বহু এক্সপেরিমেন্টের ‘গিনিপিগ’ বানানো হয়েছে! কিন্তু প্রকৃত সমস্যা-সংকটের অতল গহ্বর থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের আন্তরিক উদ্যোগ কখনই নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রতি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের কথা বলেছেন। যদি তিনি প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা সত্যিই উপলব্ধি করেন, তবে খন্ডিত ‘বিজ্ঞান-প্রযুক্তি’ বিশ্ববিদ্যালয় কেন? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের দাবির যৌক্তিকতাই যথার্থ। সারাদেশের ঐতিহ্যবাহী কলেজসমূহকে এবং জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করে অন্য কলেজসমূহকে অধিভুক্ত করাই বাস্তবসম্মত। সামাজিক ক্ষেত্রে এ কলেজগুলোর রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। আছে বিভাগ বৈচিত্র্য। যতটুকু আয়োজন আছে তার সাথে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে- প্রয়োজনীয় শিক্ষক, অবকাঠামো নিশ্চিত করে এগুলোকে পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব। দেশের প্রায় সমস্ত ঐতিহ্যবাহী কলেজসমূহের শিক্ষার্থীরাও সম্প্রতি আন্দোলন করে এ দাবির যৌক্তিকতাকে আরো শাণিত করেছে।