Sunday, April 28, 2024
Homeফিচারডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার স্বার্থে?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার স্বার্থে?

স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরের মধ্যে এই সময়টা বাংলাদেশ এক কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে। অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা এই ভূখণ্ডটি স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে পূর্বপুরুষদের সে আশা-আকাঙ্ক্ষা ভুলুণ্ঠিত হতে হতে আজ সে প্রত্যাশা মুখ থুবড়ে পড়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি আজও তার মাথা বিক্রি করেননি, তিনি ভাবেন এই বাংলাদেশই কি আমরা চেয়েছিলাম! যেখানে মতপ্রকাশ করার অপরাধে বিনাবিচারে ও মানসিক টর্চার করে ছয়বার জামিনের জন্য আবেদন করেও জামিন না পেয়ে মুশতাকের মতো মানুষদের মরতে হয়। কার্টুন আঁকার অপরাধে একজন কার্টুনিস্ট কে জেলে যেতে হয়। অথচ এ ভূখন্ডে একসময় ইয়াহিয়ার ব্যঙ্গ কার্টুন এঁকে তার নিচে ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’-এই লেখা যুক্ত কার্টুন আমরা এঁকেছি। প্রত্যেক চিন্তাশীল মানুষ তাদের চিন্তার সাথে এই বাংলাদেশকে মেলাতে পারে না। আবার শ্রমিক-কৃষক, হকার, মিস্ত্রি, রিকশাচালক, ভ্যানচালক তারা তাদের জীবন দিয়ে বুঝে এই বাংলাদেশের জন্য তারা এবং তাদের পূর্বপুরুষররা জীবন দেয়নি। এই দেশে পেটেভাতে যারা জীবন নির্বাহ করে তারা যেমন সুখে নেই, অনুরূপ সুখে নেই সৃজনশীল লেখক সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীরা, চিন্তাশীল মানুষ। কারণ স্বাধীন দেশে তাদের যেটা সাংবিধানিক অধিকার-মতো প্রকাশ করা, স্বাধীনভাবে চিন্তা করা, বিভিন্ন প্লাটফর্মে তাদের সেই স্বাধীন চিন্তার প্রকাশ ঘটানো-এইসব অধিকার কেড়ে নিয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ‘অগণতান্ত্রিক’ জাতীয় সংসদে এই আইনটা পাস করে তাদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য।

আইনে কী বলা আছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৬২ ধারা ৯ টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য সর্বপ্রথম আইনটি করা হয় বিএনপি সরকারের সময় ২০০৬ সালে? এরপর ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিতর্কিত ৫৭ ধারা যুক্ত করে ও শাস্তি বাড়িয়ে আইনটিকে  আরো কঠোর করে। ২০১৮ সালে আরেকদফা এই আইনটিকে কঠোর করার ‘প্রয়োজন’ হয়। আওয়ামী লীগের এই ‘প্রয়োজনীয়তা’কি তা আমরা পরের দিকে জানবো এখানে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারার মাধ্যমে কিভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী মতকে দমন করবে সে সম্পর্কে আলোচনা করব।

ধারা ৮

কতিপয় তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করিবার ক্ষমতা

৮। (১) মহাপরিচালকের নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনো বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করিলে তিনি উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা, ক্ষেত্রমত, ব্লক করিবার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে, অতঃপর বিটিআরসি বলিয়া উল্লিখিত, অনুরোধ করিতে পারিবেন।

(২) যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর নিকট প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা উহার কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে, বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহা হইলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করিবার জন্য, মহাপরিচালকের মাধ্যমে, বিটিআরসিকে অনুরোধ করিতে পারিবে।

এই ধারা সংবাদমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষ আঘাত। এখানে মহাপরিচালক এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারফত বিটিআরসি যেকোনো সময় উক্ত অভিযোগে সংবাদ মাধ্যমে যে কোনো প্রতিবেদন ব্লক করতে পারবে। যেসব অভিযোগে ব্লক করতে পারবে সে অভিযোগগুলো খুবই বিমূর্ত। এর ‘অর্থ’ অনেক রকম করা যায়। যেমন পদ্মাসেতুর দুর্নীতির খবর প্রচারের জন্য বিশ্বব্যাংক এখাতে অথ্যায়ন বন্ধ করে দেয়। এখন দুর্নীতির খবর প্রচার করেছিল যে সংবাদমাধ্যম তার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাধার অভিযোগ করে উক্ত নিউজ টিভি ব্লক করতে পারবে, শাস্তি দিতে পারবে। এতে করে দুর্নীতির খবর প্রচার করা যাবেনা -এরকম একটা সেল্ফ সেন্সরশিপ সংবাদ-মাধ্যমে কাজ করবে। যেটা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য সবথেকে বড় প্রতিবন্ধকতা।

ধারা ২১

মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা বা প্রচারণার দণ্ড

২১। (১) যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

এই ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি? কোনো গবেষক যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে চায় তাহলে সেই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকার কথা বা স্বাভাবিকভাবে আওয়ামী লীগের ভূমিকার প্রসঙ্গ আসবে। মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভূমিকা, ব্যক্তির ভূমিকার চুলচেরা বিশ্লেষণ আসবে। এই বিশ্লেষণের কোন অংশটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরুদ্ধ সেটা ঠিক করবে কে? এখনকার আওয়ামী লীগ!!! এজন্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে কি এ আইনে তার কোন ব্যাখ্যাই করা হয়নি। ফলে এই আইন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মৌলিক গবেষণা নিরুৎসাহিত করবে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী কাঠামোর বাইরে আলোচনার পথ রুদ্ধ করবে।

এখানে ‘জাতির পিতা’সম্পর্কে কোনো ‘প্রপাগান্ডা’ চালানো যাবে না বলা হচ্ছে। শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগ এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে চায় যেখানে তাঁর কোন সমালোচনা চলবে না। কিন্তু আমরা জানি কোন ব্যক্তি ভুলের উর্ধ্বে নয়, ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ যে কোনো গবেষণার একটা মৌলিক বিষয়। মহাত্মা গান্ধী, জিন্নাহ থেকে শুরু করে আব্রাহাম লিংকন, জেফারসন, ম্যান্ডেলাকে নিয়ে মূল্যায়ন-বিশ্লেষণ হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এই বিশ্লেষণগুলোতে যেমন তাদের পজেটিভ দিক দেখানো হয়, তেমনি তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির দিকেও দেখানো হয়। দোষে গুণে একজন মানুষকে এভাবে দেখা হয়। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই ধরনের মূল্যায়নকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সুযোটাকে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের মর্জি মত কাজে লাগাতে পারবে। কারণ ‘জাতির পিতা’র অবমূল্যায়ন বা ‘প্রপাগান্ডা’ আসলে কি? কী কী করলে ‘জাতির পিতা’র অবমূল্যায়ন করা হয় তা এই আইনে স্পষ্ট করে বলা নেই বরং অপপ্রয়োগের জন্যই এই অস্পষ্টতা রাখা হয়েছে।

ধারা ২৫

আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি

২৫। (১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে,-

(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা

(খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

বাংলাদেশে যারা দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, যারা মুদ্রা পাচার করে, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত, ব্যাংক লুটপাট করে তাদের জন্য ‘বিরক্তিকর’ ‘বিব্রতকর’ ‘অপমানজনক’ খবর প্রচারে বাধা আইনের এই ধারা। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষা দিতেই আইনের এই ধারা যুক্ত করা হয়েছে। না হলে এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির দ্বারা বিব্রত হলে প্রচলিত আইনে তার বিচারের ব্যবস্থা আছে।

এই ধারায় রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি সুনাম ক্ষুণ্ন করলে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় কিসে? সে কি ব্যাংক খাতে দুর্নীতির খবর প্রচার করলে নাকি পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার চাইলে বা ৩০ ডিসেম্বরের দিনের ভোট রাতে করার অপরাধের কথা বললে?  যেসব অপরাধের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতি মুহূর্তেই রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে চলেছে।

ধারা ২৮

ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি

২৮। (১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উস্কানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

ধর্মীয় অনুভূতি একটা অস্পষ্ট বিষয়। এর বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যার সুযোগ আছে এমনকি ইসলাম ধর্মের এক ঘরনার সাথে আরেক ধরানার মানুষের চিন্তা/মাজহাবের পার্থক্য আছে। এখন কে কাকে কোন প্রেক্ষিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করল সেটা নির্ধারণ করবে কে? যদি ব্যক্তির অনুভূতির উপর ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে তো খুব সহজেই এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলবে যে, সে আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। ব্যক্তিগত রেষারেষি থাকলে যে কারো বিরুদ্ধে এই ধারা কাজে লাগানো যাবে।

নারীদের বিরুদ্ধে বেআইনি ফতোয়া, মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র বলাৎকার এর মত ঘটনার যারা বিরোধীতা করে তাদের বিরুদ্ধে এই আইন খুব কার্যকরী। এসব অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে করা হয় তাদের একটা বড় ফ্যানাটিক গোষ্ঠী আছে। যারা তাদের অন্ধ সমর্থক। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে এরকম ফ্যানাটিক গোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে এটাই স্বাভাবিক। এ আইনের ফলে এরকম ফ্যানাটিক গোষ্ঠীর কাছে একটা অস্ত্র তুলে দেয়া হল, যা ব্লাসফেমি আইন-এর সমার্থক।

ধারা ২৯

মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি

২৯। (১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of 1860) Gi section ৪৯৯-এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

এই ধারাটি ছিল হাজার ৮৬০ সালের ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রিটিশ শাসকদের রক্ষা করার জন্য এই ধরনের একটি ধারা সে সময়ে যুক্ত করা হয়েছিল। আর আজ স্বাধীন এই ভূখণ্ডে‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’তে ঠিক সে ধারা যুক্ত করা হলো আজকের দিনের শাসকশ্রেণীর মানহানি ঠেকানোর জন্য। এই ধারা তাদের জন্য একটা রক্ষাকবচ।

ধারা ৩২

সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধ ও দণ্ড

৩২। (১) যদি কোনো ব্যক্তি Official Secrets Act, ১৯২৩ (Act No. XIX of ১৯২৩)-এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের গোপন কোনো বিষয় থাকতে পারে না। সবকিছুই জনগণের দৃষ্টি গোচর করার জন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্ম। এই ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছে তা নিম্নরূপ:

অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ঔপনিবেশিক আমলের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণমূলক আইন, যা ব্রিটিশ প্রশাসনকে সব ধরনের জবাবদিহি থেকে রক্ষা করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। আমরা মর্মাহত হয়ে সেটিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে টেনে আনতে দেখলাম। সরকার যা প্রকাশ করে না, তা-ই ‘সরকারি গোপন তথ্য’ বলে বিবেচিত হতে পারে। একটি উদাহরণ দিই। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ব্যাংক খাতের অনিয়ম সম্পর্কে কয়েক ডজন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। বলা হতে পারে, এ ধরনের সব প্রতিবেদনই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছে। প্রকাশ করা হয়নি, এমন সব সরকারি প্রতিবেদনই অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় পড়ে, এমনকি পরিবেশদূষণ বা শিশুপুষ্টি নিয়ে সরকারি প্রতিবেদন ইত্যাদিও। এ ধরনের কোনো তথ্য ছাড়া কি অর্থপূর্ণ সাংবাদিকতা সম্ভব? আর যেখানে তথ্য অধিকার আইনের বলে জনগণের ‘জানার অধিকার’ রয়েছে বিশেষত যখন এ ধরনের সব প্রতিবেদন তৈরি করা হয় জনগণের অর্থ ব্যয় করে সেখানে এসব প্রতিবেদন সাংবাদিকতার কাজে ব্যবহার করা কেন ‘অপরাধ’ বলে গণ্য হবে? বাংলাদেশ ব্যাংক বা সরকারি দপ্তরের অপ্রকাশিত প্রতিবেদন ছাড়া ফারমার্স বা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বা ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে কি আমরা কোনো প্রতিবেদন তৈরি করতে পারতাম? আমাদের প্রতিবেদকের হরহামেশাই মোবাইল ফোনে এ ধরনের দলিলের ছবি তুলতে হয়। কাজেই তাদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া যেতে পারে, তাই তো? এ আইনের প্রবক্তাদের কাছে আমাদের উদাহরণগুলো ‘হাস্যকর’ঠেকতে পারে। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগের বাস্তব নজির সাংবাদিকদের কোনো স্বস্তির কারণ জোগায়নি।

ধারা ৪৩

পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার

৪৩। (১) যদি কোনো পুলিশ অফিসারের এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোনো স্থানে এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে বা হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে বা সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছিয়া ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হইবার বা করিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাহা হইলে তিনি, অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, নিম্নবর্ণিত কার্যসম্পাদন করিতে পারিবেন-

(ক) উক্ত স্থানে প্রবেশ করিয়া তল্লাশি এবং প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হইলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;

(খ) উক্ত স্থানে তল্লাশিকালে প্রাপ্ত অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দকরণ;

(গ) উক্ত স্থানে উপস্থিত যে কোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি;

(ঘ) উক্ত স্থানে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ করিয়াছেন বা করিতেছেন বলিয়া সন্দেহ হইলে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তল্লাশি সম্পন্ন করিবার পর পুলিশ অফিসার তল্লাশি পরিচালনার রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালের নিকট দাখিল করিবেন।

এই ধারা সবথেকে অগণতান্ত্রিক। পাকিস্তান আমলে গভীর রাতে বাসা বা কোয়ার্টার থেকে শিক্ষক গ্রেফতার খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আইনগুলো এরকমই ছিল। এত লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে দেশ আমরা স্বাধীন করলাম সেই স্বাধীন দেশের পুলিশ দেশের নাগরিককে গ্রেফতার করতে কোনো পরোয়ানা লাগবে না, এ এক নির্মম বাস্তবতা। দেশকে একটা পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করার যাবতীয় আয়োজন এই ধারার মধ্য দিয়ে করা হয়েছে। এবং গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠজনদের। এজন্য পুলিশের আইজিপি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতার মত বক্তব্য দেয়। বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক কোন পেশাদারিত্ব নেই। শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই বাহিনীর কাজ। এরকম পুলিশ বাহিনী যখন আইনের ধারা প্রয়োগ করবে তখন মানুষের অবস্থা কী দাঁড়াবে তার সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া মামলাগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায়।

কারা এর শিকার এবং বাদী কারা?

প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২০ সালে প্রথম ছয় মাসে দায়ের হওয়া ৫০টি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ‘জাতির পিতা’, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নামে কটূক্তির অভিযোগে মামলা হয়েছে ৬ টি। এর মধ্যে আছে ময়মনসিংহের ভালুকার তারাগাও উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই মামলার বাদী ১০ নম্বর হবিরবাড়ী ইউনিয়ন শাখা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মোহাম্মদ নিপুন। গত ৭ জানুয়ারি অর্থনীতি পত্রিকার সম্পাদক আকবর এর বিরুদ্ধে মামলা করেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও তমা গ্রুপের মালিক আতাউর রহমান ভূঁইয়া। প্রতিবেদক আলামিন ও শফিকুল ইসলাম কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখর নিজেই মামলা করেছেন। তাছাড়া যুব মহিলা লীগের দুই নেত্রী আলাদাভাবে মামলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি কে নিয়ে ‘কটুক্তি’, আইনমন্ত্রী কে নিয়ে ‘কটুক্তি’, সাংসদ মমতাজ, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এর অভিযোগে মামলা হয়েছে। সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেন ২৬ বছর ধরে অপরের বাড়ি দখল করে আছেন এমন সংবাদ প্রচারের এর জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। লোকসংগীত শিল্পী শরীয়ত বয়াতিসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার দায়ে মামলা হয়েছে। করোনাকালীন মামলা হয়েছে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা, লকডাউনের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের বাস চলা ও কৃষকের মাঠে নেমে কাঁচা ধান কাটার ছবি তোলে শেয়ার করার জন্য। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ‘কটুক্তি’করার মামলা হয়েছে চারটি। মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সাতক্ষীরার এক ব্যক্তি। গত বছরের মে মাসে লেখক মোস্তাক আহমেদ কার্টুনিস্ট কিশোর রাষ্ট্রচিন্তা দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে গ্রেপ্তার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবাত্রা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এরা সহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মামলাগুলো করেছে র‌্যাব। সেই মামলায় মুশতাক কিশোরের জামিন আবেদন ছয় বার নাকচ হয় এবং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারের অভ্যন্তরে লেখক মুশতাক মারা যায়। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন শ্রমিক নেতা রুহুল আমিন। মোদি বিরোধী আন্দোলনের পোস্টার ফেসবুকে শেয়ার করার কারণে খুলনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত দুই বছরে এরকম সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, শিল্পী, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, গার্মেন্টসকর্মী থেকে শিক্ষক ও ছাত্রদের এ আইনে মামলা করা হয়। এবং এসব মামলার এজাহার খুব ঠুনকো। ‘মানহানি’,‘কটুক্তি’, ‘অপপ্রচার’ইত্যাদি শব্দগুচ্ছ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে আর মামলার বাদী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী পুলিশ ও র‌্যাব।

আওয়ামী লীগ সরকার কেন এই ধরনের আইন করলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের কথায় আমরা এর উত্তর পাবো। তিনি বলেছেন “কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা এভাবে আইনের প্রয়োগ এবং অপব্যবহার অসহিষ্ণুতার লক্ষণ। আর সরকার তখনই অসহিষ্ণু হয় যখন সে বুঝে তার শাসন ব্যবস্থায় মারাত্মক গলদ দেখা দিয়েছে।”(ডয়েচে ভেলে ২৬-৬-২০২০) শাসন ব্যবস্থায় মারাত্মক এই গলদটা কি? গলদটা হলো, এই সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার নয়। সে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। এটা করতে গিয়ে দুটি এমন নির্বাচন তাকে করতে হয়েছে যার একটি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় (ভোট ছাড়াই ১৫৪ আসনে নির্বাচিত) আরেকটি রাতের অন্ধকারে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে। এই দুই নির্বাচনে সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করতে পারেনি সেটা জনগণ তো জানেই আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরাও জানে তারা কি করছে। ফলে জনগণের মধ্যে স্লোগান উঠেছে, ‘এরশাদ গেছে যে পথে হাসিনা যাবে সে পথে’, ‘আয়ুইব  গেছে যে পথে হাসিনা যাবে সে পথে। এই সময়ের গুমের ঘটনা, বিনাবিচারে জেলে আটকে রাখা, ক্রসফায়ার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুর্নীতি সম্পদ পাচার নারী-শিশু নির্যাতন ধর্ষণ, করোনাকালীন সময়ে চুরি-দুর্নীতি, পিপিই-মাক্স কেলেঙ্কারি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ কথা বলছে। পত্রপত্রিকায় এগুলো নিয়ে রিপোর্ট হচ্ছে। এবং অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার ফলে সরকারের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ আরো বাড়ছে। এরকম জনবিক্ষোভকে আওয়ামী লীগ সরকার ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে  যারা অবৈধ সরকারের চুরি-দুর্নীতির কথা বলবে, সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করবে। ফলে তাদের দমন করার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ তৈরি করা হয়েছে।

এই আইন জনগণের বিরুদ্ধে কিন্তু কার পক্ষে?

গত ৫০ বছরে এদেশে একশ্রেণীর পুঁজিপতির  জন্ম হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এখানে একটা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার কারণেই এটা হয়েছে। তাই গত ৫০ বছরে এই পুঁজি প্রথমে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরবর্তীতে ব্যক্তি উদ্যোগে ফুলে-ফেঁপে ওঠে আজকের দিনে একচেটিয়া পুঁজির দিকে ক্রমাগত এগুচ্ছে। আজকের দিনে এই একচেটিয়া পুঁজি এবং পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য দরকার একটা ‘নির্বিঘ্ন পরিবেশ। এই ‘নির্বিঘ্ন পরিবেশ’টা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে আওয়ামী লীগ সরকারকে তারা ব্যাক করছে এবং তারা চায় এই পরিবেশটা বজায় থাকুক। তাদের এই আকাঙ্ক্ষাই আওয়ামী লীগের মধ্যে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি করছে। সেভাবে তারা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে।

কিন্তু ইতিহাস কি কখনো একদেশদর্শী হয়। একটা সমাজ একটা রাষ্ট্র আছে মানে সেখানে দুটো শ্রেণি আছে। ফলে বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে পুঁজিপতিদের স্বার্থের বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে আরেকটা শ্রেণি আছে। তারা হল শ্রমিক শ্রেণী, এই শ্রমিক শ্রেণীর সাথে আছে কৃষক-মজুর, ছাত্র, দোকানদার, শিক্ষক, হকার বুদ্ধিজীবী প্রমুখ মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ। এই দুই শ্রেণীর স্বার্থ অভিন্ন। পুঁজিপতিরা আওয়ামীলীগকে সামনে রেখে এগুচ্ছে এর মানে বুঝতে হবে। এই পুঁজিপতিদের স্বার্থেই তাদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরী করতেই ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন তাদের করতে হয়। পুঁজিপতিদের লুটপাট, টাকা পাচার, ইত্যাদির বিরুদ্ধে যখন কথা উঠবে তখন তাদের মুখ বন্ধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি তাদের করতে হয়। এর বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণী এবং তার সাথে মিলিয়ে কৃষক-মজুর, ছাত্র, দোকানদার, শিক্ষক, মুচি, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলবে, আন্দোলন গড়ে তুলবে এটাই সমাজপ্রগতির নিয়ম। কোনোকালেই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে না। বিজ্ঞানভিত্তিক এই নিয়মের প্রতি আমাদের আস্থা।

জনগণের করণীয়

শুভবুদ্ধি সম্পন্ন গণতান্ত্রিক, দেশকে যারা ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধকে যারা আবেগে ধারণ করেন এরকম মানুষদের কাছে আমাদের আবেদন বর্তমানে বাংলাদেশে জগদ্দল পাথরের মতো যে সরকার বসে আছে তাকে উচ্ছেদ করতে হলে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের আন্দোলন, গুম, খুন, ক্রসফায়ার বিরোধী আন্দোলন, আর্থিক খাতে দুর্নীতি-লুটপাট, অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন। প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা তার নিজ নিজ পেশায় শোষিত-বঞ্চিত সে পেশার মানুষকে সংগঠিত করুন। একটা লড়াইয়ের মনোভাব নিজেদের মধ্যে তৈরি করুন। সংগঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই মনোভাব অপরের মধ্যে ছড়িয়ে দিন। এভাবে জনগণের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্ম দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরিতে আমাদের দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল মার্কসবাদী আপনাদের পাশে থেকে ভূমিকা পালন করবে

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments