ঢাবিতে নাইটকোর্স বিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
বাণিজ্যিক নাইটকোর্স বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৯০,০০০ টাকার বিনিময়ে ‘মাস্টার্স ইন গভর্ন্যান্স স্টাডিজ’ নামের অনৈতিক বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে আজ কলাভবন ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে ধর্মঘট পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘সান্ধ্যকোর্স ও বাণিজ্যিকীকরণ বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’। ধর্মঘট চলাকালে আন্দোলনরতদের উপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। হামলায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাবি শাখার সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, সাদিক ইমাম সম্রাট-সহ কমপক্ষে দশ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাদিক ইমাম সম্রাটের ডান হাতের আঘাত গুরুতর, তার হাতের হাড় ফেটে গেছে।
সর্বাত্মক ছাত্রধর্মঘট পালন শেষে দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসন কোর্স বন্ধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করা হয়।বাণিজ্যিক নাইটকোর্স বাতিল ও হামলার বিচারের দাবিতে বিকালে ক্যাম্পাসে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ফ্রন্ট নেত্রী প্রগতি বর্মণ তমা বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ ছাত্র ধর্মঘটে ছাত্রলীগ জিয়াউর রহমান ও মুহসীন হল শাখার নেতাকর্মীরা হামলা করেছেন। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলেও প্রশাসন বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। প্রশাসনের এই নীরব ভূমিকাই প্রমাণ করে প্রশাসন এই বাণিজ্যিকীকরণের পক্ষে।”
২২ মে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাবি সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি ইভা মজুমদার, অর্থ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা, ছাত্র ফ্রন্ট কর্মী সাদিক ইমাম সম্রাট, ফাহিমা কানিজ লাভা, নুরুল্লাহ, সাদিক রেজা, জলি কর, এস আই রাকিব, সাদ্দাম, ছাত্র ফেডারেশনের বেনজির আহমেদ, শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বেনজির, হাবিবা জান্নাত, জনি, নজরুল।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। কলাভবনের সামনের গেইটে অবস্থান করেন তারা। সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ঐতিহ্য ঘটনাস্থলে এসে তালা খুলে দিতে বলেন। কিন্তু অন্দোলনকারীরা তাতে অস্বীকৃতি জানালে উভয়পক্ষ বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগের আরো ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে যোগ দেয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত এবং নারী আন্দোলনকারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র্ ফ্রন্টের সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাজ গবেষণা করা। ছাত্রদের সঙ্গে জ্ঞানের আদান-প্রদান করা। ক্লাসের বাইরেও একজন শিক্ষককে নানা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এটা করতে গিয়ে মূল কাজ বিঘ্ন ঘটাই স্বাভাবিক। ফলে সান্ধ্যকালীন কোর্স নেওয়ার সুযোগ পান কিভাবে? এটা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়াও শিক্ষাকে পণ্য করতে পারি না। তিনি বলেন, জনগণের টাকায় গড়ে ওঠা ও পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার যে চক্রান্ত সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করছে, ছাত্রসমাজ তা সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিহত করবে।